করোনায় আহরণ কমেছে

আমদানিকারকদের রাজস্ব প্রদানে শীর্ষে আবুল খায়ের গ্রুপ

নিজস্ব প্রতিবেদক চট্টগ্রাম ব্যুরো

চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানিতে রাজস্ব প্রদানে বেসরকারি খাতের শীর্ষ প্রতিষ্ঠান হিসেবে উঠে এসেছে চট্টগ্রামভিত্তিক আবুল খায়ের গ্রুপ। পণ্য আমদানির পরিমাণের দিক থেকেও এগিয়ে রয়েছে শিল্প গ্রুপ।  তালিকার শীর্ষে রয়েছে সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ তেল, গ্যাস খনিজসম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা) তবে নভেল করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে গত অর্থবছরের তুলনায় সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরে বন্দর দিয়ে আমদানিকারকদের কাছ থেকে রাজস্ব আহরণ কমেছে।

চট্টগ্রাম কাস্টমসের তথ্যমতে, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি হওয়া পণ্যের বিপরীতে বেসরকারি খাতে এককভাবে রাজস্ব প্রদানে শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলোর তিনটিই আবুল খায়ের গ্রুপের। তিনটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান মিলে আমদানি পর্যায়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজে রাজস্ব দিয়েছে মোট ৪২২ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে আবুল খায়ের স্ট্রিপ প্রসেসিং লিমিটেড ৫৯ হাজার ৯৬০ টন পণ্য আমদানির বিপরীতে আমদানি পর্যায়ে সরকারকে রাজস্ব দিয়েছে ২১০ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। শাহ সিমেন্ট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ২৬ লাখ ১৬ হাজার টন সিমেন্টের কাঁচামাল আমদানির বিপরীতে রাজস্ব দিয়েছে ১৩৮ কোটি ৪১ লাখ টাকা। আবুল খায়ের গ্রুপের অপর সহযোগী প্রতিষ্ঠান আবুল খায়ের মিল্ক প্রডাক্টস লিমিটেড ৫১ হাজার ৩৬৪ টন আমদানির বিপরীতে রাজস্ব প্রদান করেছে ৭৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।

আবুল খায়ের গ্রুপের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক মো. খুরশেদ আলম ফারুক বণিক বার্তাকে বলেন, আমদানি পর্যায়ে রাজস্ব প্রদানে গতবারের মতো এবারো আমরা সবচেয়ে বেশি রাজস্ব প্রদান করে শীর্ষে রয়েছি। দেশের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পণ্য আমদানিতে সক্রিয় রয়েছে আবুল খায়ের গ্রুপ।

বেসরকারি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর রাজস্ব  পরিশোধের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এককভাবে শীর্ষ দশে থাকা সব প্রতিষ্ঠানেরই রাজস্ব প্রদানে এবার অবদান কমেছে।

বেসরকারি খাতে পণ্য আমদানিতে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪০৪ কোটি ৩৩ লাখ টাকা রাজস্ব দিয়েছিল মেঘনা গ্রুপ। প্রতিষ্ঠানটি সমাপ্ত অর্থবছরে ৮৩৩ কোটি টাকা মূল্যের পণ্য এনে রাজস্ব দিয়েছে ১১৯ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। রাজস্ব আহরণের হার কমেছে ৭০ শতাংশ। গ্রুপটির আমদানিনির্ভর ভোজ্যতেল, চিনি, সিমেন্ট, দুগ্ধজাত পণ্যসহ বহুমুখী ব্যবসা রয়েছে।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে তৃতীয় সর্বোচ্চ রাজস্বদাতা প্রতিষ্ঠানের তালিকায় থাকা টিভিএস অটো বাংলাদেশ লিমিটেড ৩১৮ কোটি ৫৭ লাখ টাকা রাজস্ব দিয়েছিল। শেষ হওয়া অর্থবছরে ৯৬ শতাংশ কমে ১৩ কোটি ৯৯ লাখ টাকা রাজস্ব জমা দেয়া হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে। 

২০১৮-১৯ অর্থবছরে চতুর্থ রাজস্ব প্রদানকারীর তালিকায় থাকা টিকে গ্রুপের শবনম ভেজিটেবল অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ ৩১২ কোটি ৯১ লাখ টাকার রাজস্ব দিয়েছিল। সমাপ্ত অর্থবছরে রাজস্ব দেয়ার হার ৭৩ শতাংশ কমে ৮৩ কোটি ৪৬ লাখ রাজস্ব প্রদান করা হয়েছে। 

২০১৮-১৯ অর্থবছরে পঞ্চম রাজস্ব প্রদানকারীর তালিকায় থাকা উত্তরা মটরস লিমিটেড কাস্টম হাউজে রাজস্ব দিয়েছিল ৩০৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা। সমাপ্ত অর্থবছরে ৩১ শতাংশ কমে রাজস্ব প্রদান করা হয়েছে ২১১ কোটি ১৮ লাখ টাকা। 

এছাড়া গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে রাজস্ব প্রদানে বাকি শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড সমাপ্ত অর্থবছরে ৬২ কোটি ৮৮ লাখ (৭৮% হ্রাস), মেনোকা মটরস লিমিটেড ১০৯ কোটি ৯৩ লাখ (৫৯% হ্রাস), উত্তরা মটরস করপোরেশন লিমিটেড ১১১ কোটি ৫৪ লাখ (৫৯% হ্রাস) টাকার রাজস্ব দিয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজে। 

চট্টগ্রাম কাস্টমসের তথ্যমতে, বন্দর দিয়ে প্রতি বছর পণ্য আমদানি করছে এমন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়েছে। সারা দেশের ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানিতে মূলত বন্দরের ওপর নির্ভর করেন। সমুদ্রপথে আমদানি পণ্যের ৯৩ শতাংশ বন্দর দিয়ে আনা হয়। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে কনটেইনারে আমদানি হওয়া পণ্যের কিছু অংশ ঢাকার কমলাপুর কনটেইনার ডিপো পানগাঁও কনটেইনার টার্মিনালে খালাস হয়। তবে তা পরিমাণে খুবই কম।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন