নভেল করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে এসএমই উদ্যোক্তারা এখনো প্রয়োজনীয় ঋণ সহায়তা পাননি। এজন্য ঋণ প্রদানে বিদ্যমান প্রক্রিয়াও অনেক ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতা তৈরি করছে, যা বর্তমান পরিস্থিতিতে দ্রুত সহজীকরণ করা একান্ত প্রয়োজন বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। গতকাল ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘কুটির, অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের অর্থায়ন এবং বর্তমান পরিস্থিতিতে উত্তরণ’
শীর্ষক ওয়েবিনারে অংশগ্রহণকারী আলোচকরা এমন মত প্রকাশ করেন। এছাড়া প্রান্তিক পর্যায়ের উদ্যোক্তাদের কাছে ঋণ সহায়তার আওতায় নিয়ে আসার জন্য বিসিক, এসএমই ফাউন্ডেশন ও পিকেএসএফের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঋণ সহায়তা প্রদানের কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্তিকরণেরও দাবি জানানো হয়।
ঢাকা চেম্বার আয়োজিত এ ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আবু ফারাহ মো. নাসের। এছাড়া বিভিন্ন ব্যাংকের এসএমই শাখার প্রধানরা বিদ্যমান ঋণ পরিস্থিতির ওপর মতবিনিময় করেন।
ওয়েবিনারে স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, কভিড-১৯ মহামারীর কারণে দেশের অন্যান্য খাতের মতো কুটির, অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এবং এ অবস্থা উত্তরণে সরকারের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে উদ্যোক্তারা ব্যাংক থেকে প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ঋণ সহায়তা ও প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে বেশ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন।
তিনি আরো বলেন, ঢাকা চেম্বার এরই মধ্যে বিভিন্ন খাতের উদ্যোক্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছে এবং উদ্যোক্তাদের বেশির ভাগই প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে প্রয়োজনীয় ঋণ সহায়তা না পাওয়ার বিষয়টিকে বর্তমান পরিস্থিতিতে অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এ সময় তিনি কভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাংলাদেশ ব্যাংকের নেয়া সম্প্রতি বেশকিছু পদক্ষেপের বিষয় উল্লেখ করে ঋণ প্রদানের প্রক্রিয়া আরো সহজীকরণের আহ্বান জানান।
বর্তমান পরিস্থিতিতে উদ্যোক্তাদের সহায়তার লক্ষ্যে ঢাকা চেম্বার সম্প্রতি ‘এসএমই ডেভেলপমেন্ট বিভাগ’
চালু করেছে উল্লেখ করে ডিসিসিআইয়ের ঊর্ধ্বতন সহসভাপতি এন কে এ মবিন বলেন, ব্যাংক থেকে ঋণ সহায়তা পেতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুতকরণে উদ্যোক্তারা নানা ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন এবং ডিসিসিআই পরিচালিত জরিপে দেখা যায়, ৫৯ শতাংশ ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা মনে করেন, ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে ঋণ সহায়তা পাওয়ার প্রক্রিয়া বেশ জটিলতর। উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলায় তিনি ঋণ প্রদানের পদ্ধতি সহজতর করা এবং প্রণোদনার প্যাকেজ থেকে ঋণ প্রদানের গতি আরো বেগবান করার আহ্বান জানান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আবু ফারাহ মো. নাসের বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি ঋণ প্রদান ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে ব্যাংক ও গ্রাহকদের সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উদ্যোক্তাদের সমস্যা সমাধানে দেশের বাণিজ্য সংগঠনগুলো বেশ এগিয়ে এসেছে এবং এ ব্যাপারে ব্যাংকগুলোকে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি এ পরিস্থিতিতে উদ্যোক্তাদের ঋণ নেয়া এবং তাদের ঋণ ব্যবহারের সক্ষমতা খতিয়ে দেখার জন্য ব্যাংকের প্রতি আহ্বান জানান। পাশাপাশি উদ্যোক্তাদের নিজেদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতে সাপ্লাই চেইন ব্যবস্থাপনার ওপর আরো বেশি মনোযোগী হওয়ার ওপর জোরারোপ করেন তিনি। এ সময় প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ সহায়তাটি ‘ওয়ার্কিং লোন’-এর ন্যায় ‘টার্ম লোন’
হিসেবে বিবেচনা করার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলে আশ্বাস দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের এ নির্বাহী পরিচালক।
নির্ধারিত আলোচনায় বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কপোরেশনের (বিসিক) মহাব্যবস্থাপক আখিল রঞ্জন তরফদার, এসএমই ফাউন্ডেশনের মহাব্যবস্থাপক মো. নাজিম হাসান সাত্তার এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ফেরদৌসি বেগম অংশগ্রহণ করেন। ওয়েবিনারে অন্যদের মধ্যে মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন ব্র্যাক ব্যাংকের এসএমই বিভাগের প্রধান সৈয়দ আব্দুল মোমেন, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এসএমই শাখার প্রধান সঞ্জীব কুমার দে, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের ইভিপি আনোয়ার ফারুক তালুকদার, এক্সিম ব্যাংকের অতিরিক্ত উপব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ মইনুদ্দিন, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আফজাল করিম, প্রাইম ব্যাংকের এসএমই শাখার প্রধান সাইদ এম ওমর তাইয়ুব, প্রিমিয়ার ব্যাংকের ইভিপি মো. ইমতিয়াজ উদ্দিন, ওয়ান ব্যাংকের এসএমই শাখার প্রধান কামরুল ইসলাম প্রমুখ।