সংক্রমণ পরিস্থিতি ও সংকট মোকাবেলা

গ্লোবাল কভিড-১৯ ইনডেক্সে ১৩১তম বাংলাদেশ

বণিক বার্তা ডেস্ক

গ্লোবাল কভিড-১৯ ইনডেক্সে (জিসিআই) ১৮৪টি দেশের মধ্যে বর্তমানে ১৩১তম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। এদিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে খারাপ অবস্থানে রয়েছে শুধু মালদ্বীপ। কভিড-১৯ মহামারী চলাকালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সংক্রমণ পরিস্থিতি সংকট মোকাবেলার সক্ষমতা এবং ব্যবস্থাপনা দক্ষতা পরিমাপে সূচকটি তৈরি করেছে কুয়ালালামপুরভিত্তিক কনসাল্টিং ফার্ম পেমান্ডু অ্যাসোসিয়েটস। মালয়েশিয়ার বিজ্ঞান, প্রযুক্তি উদ্ভাবনবিষয়ক মন্ত্রণালয় বন্দর সানওয়েভিত্তিক কনগ্লোমারেট সানওয়ে গ্রুপের সঙ্গে অংশীদারির ভিত্তিতে সূচকটি তৈরি করা হয়েছে।

সূচকটির উদ্দেশ্য সম্পর্কে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ১৮৪টি দেশের যাচাইকৃত উৎস থেকে সংগৃহীত তথ্য একত্রীকরণের মাধ্যমে এটিকে মহামারীসংক্রান্ত তথ্যের একটি পূর্ণাঙ্গ উৎস হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। মহামারী চলাকালে বিভিন্ন দেশের সরকার, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান জনগণকে সংকট মোকাবেলায় সঠিক তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ করে দিতেই সূচকটি তৈরি করা হয়েছে।

মঙ্গলবার পর্যন্ত হালনাগাদকৃত তথ্য ব্যবহার করে গঠিত জিসিআই সূচকে দেখা যায়, তালিকায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের চেয়ে খারাপ অবস্থানে রয়েছে শুধু মালদ্বীপ। দেশটির অবস্থান ১৫০তম। অঞ্চলের অন্য দেশগুলোর মধ্যে পাকিস্তান ৪৯তম, ভুটান ৫২তম, শ্রীলংকা ৭৫তম, নেপাল ৭৮তম ভারত ৭৯তম অবস্থানে রয়েছে।

বিশ্বব্যাপী প্রতিটি দেশের জন্যই অভূতপূর্ব এক চ্যালেঞ্জের কারণ হয়ে উঠেছে কভিড-১৯ মহামারী। কার্যকর অভিজ্ঞতার অভাবে বৈশ্বিক পর্যায়ে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার কাজটি ক্রমেই জটিল থেকে জটিলতর হয়ে ওঠে। তবে বেশ কয়েকটি দেশ এরই মধ্যে সংকট কাটিয়ে উঠতে পেরেছে। আবার কোনো কোনো দেশে পরিস্থিতি দিন দিন আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে। ফলে মহামারী মোকাবেলায় গৃহীত পদক্ষেপগুলো কতটা কার্যকর বা অকার্যকর, গ্লোবাল কভিড-১৯ ইনডেক্স তা বিশ্লেষণে সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছে সূচক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান।

জিসিআই সিভিয়ারিটি ইনডেক্স জিসিআই রিকভারি ইনডেক্স নামে আরো দুটি সূচকের ভিত্তিতে গ্লোবাল কভিড-১৯ ইনডেক্স সূচক তৈরি করেছে পেমান্ডু অ্যাসোসিয়েটস। উল্লিখিত দুটি সূচকেই সংশ্লিষ্ট যেসব তথ্য-উপাত্ত প্রতিদিনই পরিবর্তিত হচ্ছে, সেগুলোর ভর (ওয়েটেজ) রাখা হয়েছে ৭০ শতাংশ। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জনস হপকিনস ইউনিভার্সিটি প্রণীত বৈশ্বিক স্বাস্থ্যনিরাপত্তা সূচকের নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অপরিবর্তনশীল তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করা হয়েছে ৩০ শতাংশ ভরযুক্ত হিসেবে।

এর মধ্যে জিসিআই সিভিয়ারিটি ইনডেক্সে সংক্রমণ মৃত্যুর হার বিশ্লেষণের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়েছে বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্য খাতে কভিড-১৯-এর ক্ষতকে। সূচকে ৭০ শতাংশ ভরযুক্ত হিসেবে যেসব তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে জনসংখ্যার বিপরীতে সংক্রমণ শনাক্তের হার তুলনামূলক মৃত্যুহার। এর মধ্যে তুলনামূলক মৃত্যুহারের ক্ষেত্রে প্রথম সংক্রমণ শনাক্তের দিন থেকে সার্বিক মৃত্যুহার করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হারের মধ্যে তুলনামূলক বিশ্লেষণ দেখানো হয়েছে, যাতে করে আক্রান্ত দেশগুলোয় সার্বিক মৃত্যুহারে কভিড-১৯-এর প্রভাবটি পরিষ্কারভাবে প্রতিফলিত হয়।

জিসিআই সিভিয়ারিটি ইনডেক্সে ৩০ শতাংশ ভরযুক্ত তথ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে বৈশ্বিক স্বাস্থ্যনিরাপত্তা সূচক থেকে সংগৃহীত দুই ধরনের তথ্য-উপাত্তকে। এর মধ্যে প্রথমটি নতুন প্যাথোজেনের উত্পত্তি বা প্রাদুর্ভাব ঠেকানোর সক্ষমতাসংক্রান্ত তথ্য, যা মূলত একটি দেশের মহামারী মোকাবেলার সক্ষমতাকে নির্দেশ করে। দ্বিতীয়টি নির্দেশ করে কোনো মহামারী মোকাবেলায় সংশ্লিষ্ট দেশের জনস্বাস্থ্য খাতের নাজুক অবস্থানের মাত্রাকে।

সিভিয়ারিটি ইনডেক্সের আওতায় সংগৃহীত তথ্য-উপাত্তের বিশ্লেষণের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর স্কোরিং করা হয় শূন্য থেকে ১০০-এর মধ্যে। এক্ষেত্রে শূন্যকে ধরা হয় সর্বোত্তম পরিস্থিতি হিসেবে। অর্থাৎ এক্ষেত্রে কোনো দেশের স্কোর যত বেশি, সে দেশের অবস্থা তত খারাপ। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্কোর ৩২ দশমিক শূন্য ২।

প্রাপ্ত স্কোরের ভিত্তিতে আবার থেকে পয়েন্টের মধ্যে রেটিং করা হয়। এক্ষেত্রে কোনো দেশের সংক্রমণ মৃত্যুহার যত কম, সেগুলোর রেটিং পয়েন্টও তত কম। সিভিয়ারিটি রেটিংয়ে যেসব দেশে জনসংখ্যার বিপরীতে সংক্রমণ শনাক্তের হার তুলনামূলক মৃত্যুহার সহনীয় মাত্রায় রয়েছে, সেগুলোকে বা রেটিং পয়েন্ট দেয়া হয়। অন্যদিকে জনসংখ্যার বিপরীতে সংক্রমণ হার তুলনামূলক মৃত্যুহার যেসব দেশের অনেক বেশি, মাত্রার ভিত্তিতে সেগুলোকে রেটিং করা হয় থেকে -এর মধ্যে। সূচকে বাংলাদেশের রেটিং ২।

জিসিআইতে ব্যবহূত দ্বিতীয় সূচকটি হলো জিসিআই রিকভারি ইনডেক্স। সূচকে নিত্যপরিবর্তনশীল যেসব তথ্যকে ৭০ শতাংশ ভরযুক্ত হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে প্রথমটি হলো জনসংখ্যার বিপরীতে করোনা আক্রান্ত হয়ে অসুস্থের সর্বশেষ সংখ্যা। সংক্রমণ শনাক্তের মোট সংখ্যা থেকে মৃত সুস্থ হয়ে ওঠা ব্যক্তিদের বাদ দিয়ে এটি হিসাব করা হয়। দ্বিতীয়টি হলো সংক্রমণ শনাক্তের বিপরীতে সুস্থ হয়ে ওঠার হার। একটি দেশের করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসা করানোর সক্ষমতার নির্ণায়ক হিসেবে তথ্য ব্যবহার করা হয়। এছাড়া শনাক্তকৃত প্রতিটি সংক্রমণের বিপরীতে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা মোট জনসংখ্যার বিপরীতে নমুনা পরীক্ষার হারও সূচকে ৭০ শতাংশ ভরযুক্ত তথ্যের আওতায় ব্যবহার করা হয়।

অন্যদিকে বৈশ্বিক স্বাস্থ্যনিরাপত্তা সূচকের যেসব তথ্য-উপাত্ত এখানে ৩০ শতাংশ ভরযুক্ত হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে দ্রুত মহামারীর প্রাদুর্ভাব শনাক্তের সক্ষমতা প্রাদুর্ভাব প্রশমনে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের সক্ষমতাকে। একই সঙ্গে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে স্বাস্থ্য অবকাঠামো এবং চিকিৎসাসেবা স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষাদানের প্রক্রিয়াকেও। এক্ষেত্রে মূলত জনসংখ্যার বিপরীতে হাসপাতাল স্বাস্থ্যকেন্দ্রের শয্যাসংখ্যা, জনসংখ্যার বিপরীতে চিকিৎসকের সংখ্যা এবং মৌলিক স্বাস্থ্যসেবায় সাধারণের প্রবেশাধিকার সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করা হয়।

সিভিয়ারিটি ইনডেক্সের আওতায় সংগৃহীত তথ্য-উপাত্তের বিশ্লেষণের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর স্কোরিং করা হয় শূন্য থেকে ১০০-এর মধ্যে। তবে এক্ষেত্রে সর্বোত্তম পরিস্থিতির জন্য স্কোর ধরা হয়েছে ১০০। অর্থাৎ রিকভারি ইনডেক্সে কোনো দেশের পরিস্থিতি যত খারাপ, স্কোরও তত কম। রিকভারি ইনডেক্সে ১০০-তে বাংলাদেশের প্রাপ্ত স্কোর ৪১ দশমিক ১১।

রিকভারি ইনডেক্সে প্রাপ্ত স্কোরের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে থেকে পয়েন্টের মধ্যে রেটিং করা হয়ে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে থাকা দেশগুলোর রেটিং পয়েন্ট দেয়া হয়েছে ২। মূলত সংকট মোকাবেলা করতে গিয়ে যেসব দেশ হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে, সেসব দেশই ধরনের রেটিং পয়েন্ট পেয়েছে। পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য এসব দেশের চিকিৎসার বাইরে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য খাতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ তা অব্যাহত রাখা জরুরি বলে মনে করা হচ্ছে। অন্যদিকে তুলনামূলক ভালো অবস্থানে থাকা দেশগুলোকে রেটিং পয়েন্ট দেয়া হয়েছে থেকে -এর মধ্যে। জিসিআই রিকভারি ইনডেক্সে বাংলাদেশের রেটিং ২।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন