সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্ট স্থাপন

দুই মাসেও অগ্রগতি নেই সরকারি ১৯ হাসপাতালে

জেসমিন মলি

জুনের শুরুর দিকে ২৬টি সরকারি হাসপাতালে কভিড-১৯- আক্রান্ত রোগীদের কেন্দ্রীয়ভাবে অক্সিজেন সরবরাহের জন্য সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্ট বসানো হচ্ছে বলে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগকে জানিয়েছিল ন্যাশনাল ইলেকট্রো-মেডিকেল ইকুইপমেন্ট মেইনটেন্যান্স অ্যান্ড ওয়ার্কশপ অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার (নিমিউঅ্যান্ডটিসি) জুন পেরিয়ে জুলাই শেষ হতে চললেও দুই মাসে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্ট বসানো সম্ভব হয়েছে মাত্র সাতটি হাসপাতালে। বাকি ১৯টিতে তা এখনো উদ্যোগের পর্যায়েই রয়েছে।

কভিড-১৯ রোগের চিকিৎসাদাতা ৩৯টি সরকারি হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা করতে গত জুন নিমিউঅ্যান্ডটিসিতে একটি চিঠি দেয় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ। ওই সময় সংস্থাটি স্বাস্থ্যসেবা বিভাগকে জানিয়েছিল, এসব হাসপাতালের মধ্যে কয়েকটিতে আগে থেকেই তরল অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা রয়েছে। তবে সরবরাহের ব্যবস্থা নেই, এমন ২৬টি হাসপাতালে তরল অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা নিতে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্ট স্থাপনের কাজ চলছে। যদিও ওই সময়ের পর থেকে এখন পর্যন্ত সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্ট স্থাপন করা গিয়েছে মাত্র সাতটি হাসপাতালে।

দেশে করোনা রোগীদের চিকিৎসাসেবা দানকারী হাসপাতালগুলোর মধ্যে অনেকগুলোতেই এখনো কেন্দ্রীয়ভাবে অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা নেই। এসব হাসপাতালে সিলিন্ডারের মাধ্যমে অক্সিজেন সরবরাহ করা হলেও তা দিয়ে নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ বজায় রাখা যায় না। ফলে কভিড-১৯- গুরুতরভাবে অসুস্থ রোগীদের দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। নিমিউঅ্যান্ডটিসি সূত্র বলছে, মহামারীর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার আগে থেকেই কেন্দ্রীয়ভাবে অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা ছিল ২২টি হাসপাতালে। অন্যদিকে মহামারী শুরুর পর এখন পর্যন্ত তা চালু করা গিয়েছে মাত্র সাতটি হাসপাতালে।

সম্প্রতি কভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের অক্সিজেনসেবা দেয়ার জন্য নিমিউঅ্যান্ডটিসির তত্ত্বাবধানে ২৬টি করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্ট বা লিকুইড অক্সিজেন ট্যাংক (ভিআইই) স্থাপন কার্যক্রমের অগ্রগতি প্রতিবেদন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে জমা দেয়া হয়। সেই প্রতিবেদনে ২৬ জুলাই পর্যন্ত হালনাগাদকৃত তথ্যের ভিত্তিতে প্রণীত ওই প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, উদ্যোগ নেয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, টাঙ্গাইলের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল, চট্টগ্রাম ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল, জামালপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লিকুইড অক্সিজেন সরবরাহের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো স্থাপন করা হয়েছে। অন্য হাসপাতালগুলোর মধ্যে কয়েকটিতে এসব অবকাঠামো নির্মাণের কাজ চলমান। কোনো কোনো হাসপাতালের লিকুইড অক্সিজেন ট্যাংক বিদেশ থেকে আনতে হবে বলে দেরি হচ্ছে। এর মধ্যে কোনো কোনো হাসপাতালে এখনো স্থান নির্বাচনের কাজই শেষ হয়নি।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে নিমিউঅ্যান্ডটিসির চিফ টেকনিক্যাল ম্যানেজার মোহা. আমিনুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, আমাদের সংস্থা থেকে চেষ্টা করা হচ্ছে যত দ্রুত সম্ভব এসব হাসপাতালে কেন্দ্রীয়ভাবে অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা চালু করতে। কিছু বিষয় আমাদের হাতে নেই। সেসব বিষয়ের জন্য অনেক হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা চালুর কাজটি অনেক ধীরে এগোচ্ছে। তবে আমাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে কাজ এগিয়ে নেয়ার।

নিমিউঅ্যান্ডটিসিতে দেয়া স্বাস্থ্য বিভাগের চিঠিতে বলা হয়েছিল, কভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের নিরবচ্ছিন্ন চিকিৎসাসেবা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে গণপূর্ত বিভাগ নির্মিত সরকারি হাসপাতালগুলোর মেডিকেল গ্যাস পাইপলাইন সিস্টেম থাকলেও অধিকাংশেরই লিকুইড অক্সিজেন ট্যাংক নেই। ফলে কভিড-১৯ রোগীদের নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না।

চিঠিতে এসব হাসপাতালের মধ্যে যেগুলোয় লিকুইড অক্সিজেন ট্যাংক নেই, সেগুলোয় তা জরুরি ভিত্তিতে স্থাপনের জন্য গ্যাস সিস্টেম লাইন সম্প্রসারণের ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানানো হয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কভিড-১৯ আক্রান্তদের ক্ষেত্রে সিলিন্ডার অক্সিজেন দিয়ে অল্প কিছু ক্ষেত্রে কাজ চালিয়ে নেয়া গেলেও বেশির ক্ষেত্রেই তা পর্যাপ্ত নয়। অনেক গুরুতর রোগীর নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন প্রয়োজন হলেও তা সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। আবার কমপ্রেসড অক্সিজেনের চেয়ে লিকুইড অক্সিজেন ব্যবহার করা তুলনামূলক সহজ। ফলে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্ট থাকলেই কভিড-১৯ রোগীদের নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন সরবরাহ সম্ভব।

প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বণিক বার্তাকে বলেন, আমাদের দেশের অধিকাংশ হাসপাতালে কেন্দ্রীয়ভাবে অক্সিজেন সরবরাহের সুযোগ নেই। ভবিষ্যতে নতুন যেসব হাসপাতাল গড়ে তোলা হবে, সেখানে শুরু থেকেই যাতে অক্সিজেন সরবরাহের মতো জরুরি বিষয় সংযুক্ত থাকে, সেটি শুরু থেকেই পরিকল্পনায় রাখা হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন