ডিজিটাল শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ

বণিক বার্তা ডেস্ক

‘সকালে অফিস যাওয়ার সময় প্রায়ই চোখে পড়ে ছোট ছোট বাচ্চারা নিচের চেয়ে বড় ব্যাগ কাঁধে নিয়ে স্কুলে যায়। ছোট ছোট বাচ্চাগুলো নিজের চেয়ে বড় ব্যাগের ভার সামলাতে সামনের দিকে কুঁজো হয়ে হাঁটে। এভাবে প্রতিদিন নিজের বাচ্চার কাঁধে চড়িয়ে দেয়া ব্যাগ যে তার কত বড় ক্ষতির কারণ কখনও সেটা ভেবে দেখেছেন?’- কথাগুলো আমাদের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের। শিশুদের কাঁধে স্কুলের ভারী ব্যাগ যে তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলতে পারে সে বিষয়টিই তিনি তার সাম্প্রতিক এক লেখায় তুলে ধরেছেন।

ডিজিটাল প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে ২০২১ সালের মধ্যে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ।   এর একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ শিক্ষাখাতের ডিজিটালকরণ তথাপি  অনলাইন শিক্ষার প্রসার । শিক্ষার্থীদের তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার ও এ সংক্রান্ত জ্ঞান অর্জনের জন্য  শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে কম্পিউটার শিক্ষাকে আবশ্যিক করা হয়েছে, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যবইগুলো এখন অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে এবং দেশের শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগ সরবরাহ করা হচ্ছে। 

কভিড-১৯ মহামারীর শুরু থেকেই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য বাংলাদেশের সকল স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ফলে, লাখো শিক্ষার্থীর স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হয়। এ প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ইতোমধ্যেই দেশের অনেক স্কুল দূরশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম পুনরায় চালু করেছে। কিন্তু, অনলাইনে শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনার জন্য সিংহভাগ শিক্ষার্থীরই উপযুক্ত ডিভাইসের অভাব রয়েছে। পাশাপাশি বর্তমান পরিস্থিতিতে ইন্টারনেটের ব্যয় নির্বাহ করা অনেক পরিবারের জন্য বোঝাস্বরূপ। তাই, সকল শিক্ষার্থীর কাছে উপযুক্ত ডিভাইস ও ইন্টারনেট কানেক্টিভিটি সুবিধা পৌঁছে দিতে হবে। এ লক্ষ্যে  সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে।  এ প্রতিকূল সময়ে যূথবদ্ধভাবে কাজ করলেই আমারা ডিজিটাল শিক্ষা ও কানেক্টিভিটির অসাম্য দূর করতে পারবো। লক্ষণীয় বিষয় হলো, শিক্ষার্থীদের শিক্ষালাভের জন্য  প্রয়োজনীয় ডিজিটাল কনটেন্টেরও অভাব রয়েছে। তাই,  ডিজিটাল কনটেন্টকে আরও সমৃদ্ধ করতে হবে। শিগগিরই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।   

সবার জন্য সুশিক্ষা নিশ্চিত করা জরুরি। কারণ, এটি ফলদায়ক। সুশিক্ষায় শিক্ষিত একজন মানুষ তার মেধা ব্যবহার করে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে। এর গুরুত্ব অনুধাবন করে বর্তমান সঙ্কটময় পরিস্থিতিতেও বাংলাদেশ সরকার বিকল্প উপায়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নেয়ার জন্য তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। কোভিড পরিস্থিতিতে শিক্ষাখাতের সামগ্রিক ক্ষতি মোকাবিলায় সাধারণ ছুটি চলাকালীন দূরশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করেছে সরকার। যা এ পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের  স্বাভাবিক শিক্ষাকার্যক্রম চলমান রাখতে সহায়তা করছে।   

শিক্ষার বৈষম্য দূর করতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তথ্য প্রযুক্তির কল্যাণে প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীরাও গুণগত মানের শিক্ষা লাভ করতে পারবে। পাশাপাশি, শিক্ষকরদেরও ডিজিটাল জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে। আশার বিষয় হচ্ছে, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ইতিমধ্যেই শিক্ষার অসাম্য কমিয়ে এনেছে এবং ডিজিটাল বাধা দূরীকরণের সংযোগ হিসেবে কাজ করছে।

কভিড-১৯ পরিস্থিতিতে দেশের  সামগ্রিক শিক্ষা কার্যক্রমে যে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে, অনলাইন শিক্ষার মাধ্যমে খুব সহজেই তার সমাধান হবে। কারণ, স্কুলগুলোতে ইন্টারনেট সুবিধা ও ডিজিটাল প্রযুক্তি পৌঁছে দেয়া গেলে তা দূরশিক্ষণের মাধ্যমে সবার জন্য শিক্ষার সমান সুযোগ তৈরি করবে। এক্ষেত্রে, উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে হুয়াওয়ে ও বিজয় ডিজিটালের অংশীদারিত্বের কথা। সম্প্রতি, হুয়াওয়ে ও বিজয় ডিজিটাল যৌথ উদ্যোগে ‘ব্রিজিং দ্য ডিজিটাল এডুকেশন ডিভাইড টু রিডিউস দ্য গ্যাপ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প চালু করেছে। এ প্রকল্পের আওতায় প্রাথমিকভাবে সারাদেশের টিঅ্যান্ডটি হাই স্কুলগুলোতে প্রি-স্কুল থেকে চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মাঝে হুয়াওয়ে স্মার্ট ডিভাইস, বিজয় ডিজিটাল অ্যাপ ও কানেক্টিভিটি পৌঁছে দেয়া হবে। এ অ্যাপটিতে শিক্ষার্থীদের জন্য  প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত জাতীয় পাঠক্রম অনুযায়ী কনটেন্ট রয়েছে। যা বর্তমান পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা বিনামূল্য পাচ্ছে। এ উদ্যোগটি ডিজিটাল শিক্ষার প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণে সহায়তা করবে। এছাড়াও, বাংলাদেশে  ডিজিটাল শিক্ষার ব্যাপ্তি বাড়াতে অন্যান্য অংশীদারদের সাথে কাজ করছে হুয়াওয়ে।

বর্তমান যুগে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি শিক্ষাখাতের বৈষম্য দূর করে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষাকার্যক্রম তৈরি করতে পারে। এটি বাস্তবায়নে শিক্ষার্থীদের জন্য উপযুক্ত ডিভাইস, ডিজিটাল কনটেন্ট ও কানেক্টিটিভিটি সরবরাহ করতে হবে। এ লক্ষ্য অর্জনে সবাইকে একত্রে কাজ করতে হবে এবং এ বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে কেউ যেন এ শিক্ষা প্রক্রিয়া থেকে বাদ না পড়ে। ডিজিটাল শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে, এটি শিশুদের স্বাস্থ্যঝুঁকিও দূর করবে। ফলে, শিশুরা স্বাভাবিকভাবে বিকশিত হতে পারবে। 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন