উৎপাদন কমার আশঙ্কায় ভারতে চায়ের মূল্য রেকর্ড ছুঁয়েছে

বণিক বার্তা ডেস্ক

নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর প্রাদুর্ভাবের পর থেকেই ভারতের চা শিল্পের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে আলোচনা চলছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ভাইরাস সংক্রমণ রোধে ঘোষিত নীতিমালার প্রভাবে দেশটিতে এবার পানীয় পণ্যটির উৎপাদন রেকর্ড পরিমাণ কমতে পারে। শিল্প খাতটির আর্থিক লোকসান হাজার কোটি রুপি (ভারতীয় মুদ্রা) ছাড়াতে পারে। এরই মধ্যে আবার দেশটির শীর্ষ চা উৎপাদনকারী রাজ্য আসামে বন্যা পরিস্থিতি শোচনীয় হয়ে উঠেছে। সব মিলিয়ে দেশটিতে বছর চায়ের উৎপাদনে ধস নামতে যাচ্ছে, এটা অনেকটাই নিশ্চিত। উৎপাদন হ্রাসের এমন ইঙ্গিতে ভারতে পানীয় পণ্যটির দাম বেড়ে এক লাফে রেকর্ড ছুঁয়েছে। খবর রয়টার্স ইকোনমিক টাইমস।

সম্প্রতি টি বোর্ড অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, ভারতে এবার চা উৎপাদন ১০ শতাংশ কমে যেতে পারে। পূর্বাভাসের পর আট বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো স্থানীয় বাজারে পানীয় পণ্যটির দাম ১২ শতাংশ বেড়েছে। টি বোর্ড অব ইন্ডিয়ার সভাপতি প্রভাত বেজবড়ুয়া জানান, উৎপাদন হ্রাসের প্রভাবে সর্বশেষ সাপ্তাহিক নিলামে প্রতি কেজি চায়ের গড় দাম দাঁড়িয়েছে ২৩২ দশমিক ৬০ রুপি বা ডলার ১১ সেন্টে, আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় যা ৫৭ শতাংশ বেশি।

ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ চা উৎপাদনকারী দেশ। পণ্যটির রফতানি বাণিজ্যেও দেশটি প্রসিদ্ধ। তবে কয়েক বছর ধরে ভারতের চা শিল্প বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে টিকে আছে। এর মধ্যে একটি ক্রমবর্ধমান হারে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি। ফলে খাতটির লোকসানের বোঝা দিন দিন আরো ভারী হয়ে উঠছে। পরিস্থিতিতে চায়ের রেকর্ড মূল্যবৃদ্ধিতে আর্থিত ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে উঠতে পারবেন খাতসংশ্লিষ্টরা। তবে রফতানি খাতে তা ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে। এতে পণ্যটির তুলনামূলক সস্তা বাজার কেনিয়া শ্রীলংকার দিকে ঝুঁকতে পারেন আমদানিকারকেরা।

নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব পাশ কাটিয়ে চলতি বছর কেনিয়ায় চা উৎপাদন কোটি ৬০ লাখ কেজি বাড়তে পারে। উৎপাদন উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ায় কেনিয়ায় পণ্যটির দামে বাড়তি চাপ পড়েছে। বছরের প্রথমার্ধে (জানুয়ারি-জুন) দেশটিতে পণ্যটির দাম আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় শতাংশ কমেছে। এদিকে শ্রীলংকার উৎপাদনে মন্দা ভাব বজায় থাকলেও ভারতের পর্যায়ে নামবে না। এছাড়া ক্রমেই রফতানি কমায় ক্রেতা দেশগুলোকে আকৃষ্ট করতে ছয় মাসের জন্য চায়ের রফতানি শুল্ক স্থগিত করেছে শ্রীলংকা। ফলে পরিস্থিতিতে মূল্যবৃদ্ধি ভারতের চা রফতানি খাতকে চাপে ফেলতে পারে। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে ভারত থেকে পণ্যটির রফতানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৮ শতাংশ কমেছে।

এদিকে ভারতের শীর্ষ চা উৎপাদনকারী রাজ্য আসামের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় চা বাগানগুলোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। লকডাউন আরোপের কারণে আগে থেকেই রাজ্যটি শ্রমিক সংকটে ভুগছিল। প্রভাত বেজবড়ুয়া বলেন, মহামারী প্রাদুর্ভাবের পর শ্রমিক সংকটে এরই মধ্যে আসামে চা উৎপাদন বেশ কমে গেছে। এর ওপর বন্যায় বছর রাজ্যটিতে পানীয় পণ্যটির উৎপাদন আরো কমে যাওয়ার আশঙ্কা বাড়াচ্ছে।

এদিকে ভারতের কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কোম্পানি ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি আইসিআরএর সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, চলতি বছর দেশটিতে চা উৎপাদন আগের বছরের তুলনায় ১৩ শতাংশ কমে যেতে পারে। লকডাউন, শ্রমিক সংকট, প্রতিকূল পরিবেশসব মিলিয়ে মার্চ থেকে মে পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে দেশটিতে পানীয় পণ্যটির উৎপাদন কমেছে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে জুনে পণ্যটির উৎপাদন স্বাভাবিকে ফিরবে বলে খাতসংশ্লিষ্টরা প্রত্যাশা করেছিল। কিন্তু দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া বন্যায় সময়ে আসামে চা উৎপাদন ১৫-১৬ শতাংশ কমে গেছে। এমনকি বিরূপ আবহাওয়ার কারণে চলতি মাসেও ভারতে পণ্যটির উৎপাদনে নিম্নমুখী প্রবণতা বজায় থাকতে পারে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

বার্ষিক হিসাবে ভারতে উৎপাদিত মোট চায়ের ৫০ শতাংশের মতো উৎপাদন হয় শুধু আসামে। এবারের মৌসুমি বন্যায় মে পর্যন্ত রাজ্যটিতে ৮৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। বাস্তুচ্যুত হয়েছে সাড়ে ২৭ লাখের বেশি মানুষ। ফলে কমছে চা উৎপাদন। টি অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়ার সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত আসামে মোট ১১ কোটি ৩৭ লাখ ২০ হাজার কেজি চা উৎপাদন হয়েছে। ২০১৯ সালের একই সময়ে রাজ্যটির বাগানগুলো থেকে সব মিলিয়ে ২২ কোটি ৪০ হাজার কেজি চা সংগ্রহ করা হয়েছিল। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে রাজ্যটিতে পানীয় পণ্যটির উৎপাদন কমেছে ১০ কোটি ৬৩ লাখ ২০ হাজার কেজি। এর ওপর বন্যায় রাজ্যটিতে পণ্যটি উৎপাদন আরো কমে যেতে পারে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন