স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র একটি শক্তিশালী মাধ্যম

কয়েক বছর ধরে বিশ্বের বড় বড় চলচ্চিত্র উৎসবে দেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতা মেহেদী হাসান এবার লোকার্নো ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের বেস্ট ইন্টারন্যাশনাল শর্ট ফিল্ম বিভাগে প্রতিযোগিতার জন্য প্রথম কোনো বাংলাদেশী ছবি হিসেবে তার বোরিং ফিল্ম চলচ্চিত্রটি নির্বাচিত হয়েছে। ছবিটির চিত্রনাট্য পরিচালনা করেছেন মেহেদী নিজেই। এমনকি ছবির চরিত্রেও তাকে দেখা যাবে। সম্প্রতি টকিজের মুখোমুখি হয়েছিলেন তিনি। সাক্ষাত্কার নিয়েছেন রাইসা জান্নাত

বোরিং ফিল্ম নির্মাণের নেপথ্যের গল্পটা জানতে চাই।

চলচ্চিত্রটির শুটিং করি ২০১৭ সালে। সে সময় আমি বাসার ভেতরে দু-তিন মাস সময় কাটাই। বের হতাম খুব কম। তখন মনে হলো একজন মানুষ একটা মডার্ন শহরে তার একাকিত্বের সময়গুলো কীভাবে কাটায়? ভাবনা থেকে সেই সময়টায় নিজেই নিজেকে শুট করতে শুরু করি। বলা যায় এক ধরনের এক্সপেরিমেন্ট চালানো। এভাবে অনেক ফুটেজ জমে যায়। যাইহোক, পরে সেখান থেকে মনোযোগ সরিয়ে অন্য কাজে মন দিই। এখন যখন লকডাউন, কোয়ারেন্টিন শুরু হলো, তখন আমি সেই পুরনো ফুটেজগুলো দেখা শুরু করি। দেখলাম বর্তমান সময়ের সঙ্গে এগুলো সম্পৃক্ত। এরপর মনে হলো চরিত্রটি দিয়ে কিছু একটা করা সম্ভব। লকডাউনে চরিত্রটি নিয়ে একটা আইডিয়া বের করি। একটা লোক মডার্ন শহরে একটি বাড়িতে থাকে। জানালা দিয়ে অন্য মানুষের জীবনযাত্রা দেখে। সে রাতে ঘুমাতে পারে না। কারণ তার বাড়ির চারপাশে নির্মাণের কাজ চলে। কারণে সে দিনেও বিশ্রাম নিতে পারে না। যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে লোকটি স্থানীয় চিড়িয়াখানায় যায়। লোকটি ঘুমাতে পারছে না এটাই তার সমস্যা। আর সমস্যাটি সমাধানে সে রকম একটি সিদ্ধান্ত নেয়। মূলত এটিই হলো চলচ্চিত্রটি।

বিষয়বস্তুর সঙ্গে সাযুজ্য রেখেই কি ছবির এমন নাম?

একটা মানুষ জানালা দিয়ে বাইরের জীবনযাপন দেখছে। একটা একঘেয়েমি ব্যাপার। বর্তমান পরিস্থিতিও কিন্তু তা-ই। আমরা বাসায় আছি। জানালা দিয়ে বাইরে দেখছি। আমরা বুঝতে পারছি একঘেয়েমি বিষয়টা কেমন। কারণে অনেকটা স্যাটায়ার করে এমন নাম রাখা।


এর আগেও আপনি ফটোগ্রাফস অব স্কুল টিচার, আই অ্যাম টাইম, ডেথ অব রিডারসহ বেশ কয়েকটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন। স্বল্পদৈর্ঘ্য নির্মাণের প্রতি আগ্রহের কারণ?

স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র দিয়ে অনেক কিছু করা সম্ভব। আমরা ভাবি সবসময় বড় বড় কাজ করতে হবে। দেখা যায় এসব করতে গিয়ে অনেক সময় শেষও করতে পারি না। আমার মনে হয়, ছোট আকারে মানসম্মত কাজ করে সামনে অনেক দূর এগিয়ে যাওয়া সম্ভব।

আপনার চলচ্চিত্র নির্মাণের শুরুটা কীভাবে?

আমি বিভিন্ন দেশের প্রচুর চলচ্চিত্র দেখতাম। একসময় ভাবি এটা নিয়ে কিছু করা সম্ভব। তখন বিভিন্ন ওয়ার্কশপ করা শুরু করি। এরপর যখন নিজে কাজ শুরু করব, দেখলাম আমার তেমন বাজেট নেই। চলচ্চিত্র বানাতে অনেক টাকা প্রয়োজন। পরে ভেবে দেখলাম আমার আইডিয়াগুলো আমি অল্প বাজেটের মাধ্যমে তুলে ধরতে পারি। আমি আমার বাসা, পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তৈরি করতে পারি। প্রথম ছবি নির্মাণ করি আমার মাকে নিয়ে। বিষয়বস্তুটা রকম যে আলোকচিত্রের একজন শিক্ষক, যিনি তার আলোকচিত্রগুলো দেখে দেখে অতীতের স্মৃতিচারণ করেন। ছবিটির নাম দিই ফটোগ্রাফস অব স্কুল টিচার এরপর আই অ্যাম টাইম, ডেথ অব রিডারসহ আরো বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করি। এভাবেই মূলত শুরু।

আপনার কাজগুলোকে নিরীক্ষাধর্মী বলা হয়ে থাকে...

একই রকম জিনিস হয়তো নির্মাণ করাই যায়। কিন্তু সেটা দিয়ে নতুন কোনো ন্যারাটিভ বা নতুন কোনো স্থানে পৌঁছানো সম্ভব নয়। নতুন কিছু খুঁজতে হলে কিছুটা নিরীক্ষা তো করতেই হবে। সেটা গল্প, ইমেজ, শব্দযেকোনো ক্ষেত্রেই হতে পারে।

নতুন কী কাজ করছেন ?

ফিচার ফিল্ম স্যান্ড সিটি কাজ চলছে। এটা দেরিতে হচ্ছে, কারণ এখন পৃথিবীব্যাপী সংকট চলছে। আগামীতে শুটিং কীভাবে হবে, বাজেটএগুলো নিয়ে ভাবার অনেক বিষয় রয়েছে।

একজন তরুণ নির্মাতা হিসেবে চলচ্চিত্রপ্রেমী অন্য তরুণ নির্মাতাদের ক্ষেত্রে আপনার পরামর্শ কী?

বেশি বেশি স্বল্পদৈর্ঘ্য নির্মাণ করতে হবে। কারণ এখানে ব্যয় কম। নিজস্ব চিন্তাভাবনা প্রকাশের সুযোগ পাওয়া যায়। ফিচার ফিল্মে হয়তো সবসময় সবকিছু বলা সম্ভব হয়ে ওঠে না। আমার কাছে মনে হয় স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র অনেক শক্তিশালী একটি মিডিয়া। নতুনদের সাহস করে স্বল্প সময়ের কিছু চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে হবে। শুরুটা এভাবে হতে পারে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন