নতুন অভিবাসন আইন প্রণয়নের পথে ডোনাল্ড ট্রাম্প

অগ্রাধিকার পাবে মেধা ও দক্ষতা

বণিক বার্তা ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্রের বিদ্যমান অভিবাসন আইন নিয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বরাবরই নাখোশ। নভেম্বরে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগেই তিনি বিদ্যমান আইনটি ঢেলে সাজাতে চান। নতুন আইনে মেধা দক্ষতাকে প্রাধান্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যেতে আগ্রহীদের সুযোগ দিতে প্রস্তুত তার প্রশাসন। গতকাল হোয়াইট হাউজের রোজ গার্ডেনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে কথা জানান ট্রাম্প। এমন এক সময় ট্রাম্প কথা বললেন, যখন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় অনলাইনভিত্তিক কোর্সের সুবিধা নেয়া বিদেশী শিক্ষার্থীদের দেশটি থেকে বের করে দেয়ার নীতি থেকে আদালতের নির্দেশে সরে আসতে বাধ্য হয়েছে তার প্রশাসন। খবর রয়টার্স এনডিটিভি।

আইন সংশোধনের বিষয়ে ট্রাম্প বলেন, শিগগিরই নতুন অভিবাসন নীতি নিয়ে কাজ করতে যাচ্ছি। এতে মেধা, দক্ষতা শিক্ষাগত যোগ্যতাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হবে।

যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন পাওয়ার ক্ষেত্রে পরিবারের সদস্য কিংবা আত্মীয়স্বজন দীর্ঘদিন ধরে দেশটিতে বসবাস করে আসছেন, বিষয়টি অগ্রাধিকার দেয়া হয়ে থাকে। ট্রাম্প নীতিতে পরিবর্তন আনতে চান। তিনি চান এভাবে পরিবারভিত্তিক না করে মেধা দক্ষতার ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের অনুমতি দেয়া হোক। এতে আগামীতে যুক্তরাষ্ট্রের চাকরি বাজারে বহুমুখী মেধার অধিকারী দক্ষ জনগোষ্ঠী বাড়বে।

বিভিন্ন সময় কঠোর ভাষায় বিদ্যমান অভিবাসন আইনের সমালোচনা করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এবার তিনি আসন্ন নির্বাচনের আগে আইন পরিবর্তনের সুস্পষ্ট ঘোষণা দিলেন। নতুন আইনের আওতায় এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা অন্য দেশের শিশুদের সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে বলেও জানান তিনি। অভিবাসন খাতের আলোচিত ডিএসিএ নীতি সংস্কার করে প্রকৃত মেধাবী দক্ষতাসম্পন্নদের দেশটিতে জায়গা দেয়ার পরিকল্পনা ট্রাম্পের। তার পরিকল্পনা বাস্তব রূপ পেলে বাংলাদেশ ভারতসহ দক্ষিণ এশীয়দের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের সুযোগ পাওয়া সহজ হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। বিশেষত যারা প্রযুক্তি খাতের দক্ষ কর্মী, তারা মার্কিন মুলুকে সহজে অভিবাসনের সুযোগ পেতে পারেন। 

এমন এক সময় ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিলেন, যখন বিদেশী শিক্ষার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রে থাকতে না দেয়ার পরিকল্পনায় প্রশাসন দেশটির আদালত মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। আদালতের আদেশে বিদেশী শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেয়ার নীতি থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়েছে ওয়াশিংটন।

সংকটের শুরু করোনা মহামারীর কারণে। প্রাণঘাতী ভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনলাইনে কোর্স চালু করেছে। এর জের ধরে যেসব বিদেশী শিক্ষার্থী অনলাইন কোর্সের সুবিধা নিচ্ছেন তাদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনা নিয়েছিল ট্রাম্প প্রশাসন। এমনকি যারা ফিরতে চাইবেন না তাদের জোরপূর্বক যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেয়ার কথাও বলা হয়েছিল।

তবে ট্রাম্প প্রশাসনের নীতির তীব্র বিরোধিতা করে দেশটির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। বিরোধী ডেমোক্রেটিক পার্টি সুশীল সমাজের পক্ষ থেকেও নিন্দা জানানো হয়। সমালোচনা করেন ট্রাম্পের নিজ দল রিপাবলিকান পার্টির উদারপন্থীরাও। প্রস্তাবিত নীতি বাতিলের দাবিতে আদালতে যায় যুক্তরাষ্ট্রের স্বনামধন্য দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি) হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি।

আদালত সরকারি আদেশের বিরুদ্ধে রায় দিলে স্বস্তি নেমে আসে স্টুডেন্ট ভিসায় বৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত ১০ লাখের বেশি বিদেশী শিক্ষার্থীর মধ্যে। ট্রাম্প প্রশাসন আগের অবস্থান থেকে সরে আসায় তারা এখন বৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করতে পারবেন। ক্লাস অনলাইনে হলেও তাদের নিজ নিজ দেশে ফিরতে বাধ্য করতে পারবে না কেউ।

পরিস্থিতিতে আদালতের আদেশে অবস্থান বদলাতে বাধ্য হলেও নভেম্বরের আগেই নতুন অভিবাসন আইন প্রণয়নের ঘোষণা ট্রাম্পের। আর এতে মেধা দক্ষতাকে গুরুত্ব দেয়ার বিষয়টি সামনে এনেছেন তিনি। ট্রাম্পের মতে, নতুন পরিকল্পনা এতটাই সুপরিকল্পিত শক্তিশালী হবে যে এটা কাউকে ক্ষুব্ধ করবে না। এমনকি রিপাবলিকান পার্টির উদারপন্থীরাও এর সমালোচনা করার সুযোগ পাবেন না।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন