সরকারি প্রতিষ্ঠান ও প্রকল্প নিরীক্ষায় অবহেলা

ত্রুটিপূর্ণ প্রতিবেদনে অপচয় বাড়ছে সরকারের

জেসমিন মলি

দেশে গত কয়েক দশকে উন্নয়ন প্রকল্পের সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়েছে। সে হিসেবে বেড়েছে অর্থ ব্যয়ের পরিধিও। সরকারি অর্থের ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা যথার্থতা নিশ্চিত করতে রয়েছে নিয়মিত নিরীক্ষার বিধান। যদিও নিরীক্ষা কার্যক্রম সম্পাদন করা হয় অনেকটা অবহেলা করেই। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, দায়সারাভাবে সম্পাদিত এসব নিরীক্ষা প্রতিবেদনে ত্রুটি থেকেই যায়। ফলে একদিকে যেমন সরকারের অর্থব্যয়ের স্বচ্ছতা নিশ্চিত হয় না, তেমনি অন্যদিকে তৈরি হয় দুর্নীতির সুযোগও।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের অর্থব্যয়ের ১০ শতাংশেরও নিরীক্ষা করা সম্ভব হয় না। ফলে দুর্নীতি অনিয়মের সুযোগ রয়ে যায়। এসব দুর্নীতি অনিয়ম বন্ধ করতে যথাযথ কার্যকরভাবে নিরীক্ষা চালানো নিশ্চিত করার বিষয়টি অপরিহার্য।

সরকারি অর্থ ব্যবস্থাপনার স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা যথার্থতা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন ধরনের নিরীক্ষা চালিয়ে থাকে বাংলাদেশ কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের কার্যালয়। প্রতিষ্ঠানটির আওতায় সরকারি অর্থ ব্যবস্থাপনার কমপ্লায়েন্স, ফিন্যান্সিয়াল পারফরম্যান্স নিরীক্ষা চালানো হয়। সরকারের কলেবর বাড়ায় অডিটের সীমিত জনবল দিয়ে এখন বড় ধরনের নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব হয় না। ফলে সরকারের অর্থ ব্যয়ের বড় একটি অংশ নিরীক্ষার বাইরে থেকেই যায়।

বিষয়ে নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে একজন নিরীক্ষক বলেন, সরকারি প্রকল্পের নিরীক্ষা সরকারের নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানই করে থাকে। তবে বিভিন্ন সময় ঋণদাতা সংস্থার দাবির ভিত্তিতে বাইরের নিরীক্ষক দিয়েও নিরীক্ষা করানো হয়। তবে সরকারি প্রকল্পের নিরীক্ষা করতে যে ধরনের দক্ষতা প্রয়োজন, বেসরকারি নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সে ধরনের দক্ষতা নেই।   

বাংলাদেশের মহা হিসাব নিরীক্ষক নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের তথ্য বলছে, জনবল সংকটের কারণে প্রতি বছরই অনেক সরকারি প্রতিষ্ঠান প্রকল্প কার্যক্রম থেকে যায় অডিটের বাইরে। সময়ের দাবি অনুযায়ী ফিন্যান্সিয়াল অডিট, পারফরম্যান্স অডিট, আইটি অডিট ইস্যুভিত্তিক অডিট সম্পন্ন করার মতো দক্ষ জনশক্তিও অডিট অধিদপ্তরের নেই। এছাড়া অডিট কার্যে দক্ষ, অভিজ্ঞ পেশাদার সনদপ্রাপ্ত অনেক কর্মকর্তা পদোন্নতি এবং পদায়নের ফলে অডিট অধিদপ্তরের বাইরের বিভিন্ন হিসাব সার্কেল, লিয়েন ডেপুটেশনে অবস্থান করছেন। কাজের অভাবে এসব প্রশিক্ষিত কর্মকর্তাদের কাজের গতিশীলতা যেমন নষ্ট হয়, একইভাবে  অডিট কার্যক্রমে প্রত্যক্ষ দায়িত্ব না থাকায় পেশাদার সনদ এবং বিশেষায়িত অডিটে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়েও অনেক কর্মকর্তা তাদের অর্জিত জ্ঞান প্রয়োগ করার সুযোগ পাচ্ছেন না। নিয়মিত চর্চার অভাবে তাদের পেশাগত দক্ষতাও ক্রমন্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে।

অডিট বিভাগের দক্ষ জনশক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার করতে বেশকিছু উদ্যোগ নেয়ার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশের মহা হিসাব নিরীক্ষক নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়। মানসম্পন্ন অডিটের সংখ্যা বাড়াতে সংস্থাটি সম্প্রতি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, অডিট অধিদপ্তরে পদায়িত না হলেও পেশাদার সনদধারী, অডিটসংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এবং পাইলট অডিটে অভিজ্ঞ কর্মকর্তারা বছরে অন্তত একটি অডিট দলে অন্তর্ভুক্ত হয়ে অডিট কার্যক্রম সম্পন্ন করবেন।

এছাড়া সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, মিশন অডিটে যাওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা সরাসরি সম্পৃক্ত থেকে একটি স্থানীয় অডিট কার্যক্রম করবেন। অডিট প্রতিবেদনের মান বিবেচনার ভিত্তিতে মিশন অডিটের দায়িত্ব দেয়া হবে। অডিট অধিদপ্তরের আওতাধীন অডিটি প্রতিষ্ঠান বিবেচনায় নিয়ে কমপ্লায়েন্স অডিটের পাশাপাশি ফিন্যান্সিয়াল অডিট পারফরম্যান্স অডিট, আইটি অডিট ইস্যুভিত্তিক অডিট সম্পাদনের উদ্যোগ গ্রহণ করবে।

এসব বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের কার্যালয়ের ডেপুটি কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল মো. মাহবুবুল হক বণিক বার্তাকে জানান, গত কয়েক দশকে দেশের বাজেটের কলেবর বেড়েছে। বেড়েছে সরকারের উদ্যোগে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণের সক্ষমতাও। কিন্তু দক্ষ প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে চাইলেও অনেক সরকারি প্রতিষ্ঠান প্রকল্পে নিরীক্ষা করা সম্ভব হতো না। সে কারণে অডিট অধিদপ্তরের বাইরে কর্মরত প্রফেশনাল সনদ অর্জনকারী, অডিটসংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের কাজে লাগানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অডিটর জেনারেলের কার্যালয়ের এসব উদ্যোগ সরকারের অর্থব্যয়ের সুশাসন স্বচ্ছতা নিশ্চিতে কাজে লাগবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন