বন্যা পরিস্থিতি

উত্তরাঞ্চলে ৪২ হাজার হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা

বণিক বার্তা ডেস্ক

সপ্তাহের ব্যবধানে দ্বিতীয় দফার বন্যায় উত্তরাঞ্চলের সিরাজগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, বগুড়া, নওগাঁ, লালমনিরহাট রংপুরের বিভিন্ন উপজেলার ৪২ হাজার ১৮১ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে সিরাজগঞ্জে ২০ হাজার ৭৩৭ হেক্টর, কুড়িগ্রামে ১০ হাজার, বগুড়ায় হাজার ৭৫৪, নওগাঁয় হাজার ২৩৪, লালমনিরহাটে ৩৮৭ রংপুরে ৬২ হেক্টর জমির ফসল বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর

সিরাজগঞ্জ: জেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। গতকাল বেলা ৩টায় সিরাজগঞ্জ জেলা পয়েন্টে যমুনার পানি বিপত্সীমার ৭৭ সেন্টিমিটার কাজীপুর উপজেলা পয়েন্টে বিপত্সীমার ১০৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

পাউবোর পরিচালন রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী একেএম রফিকুল ইসলাম তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে দ্বিতীয় দফার বন্যায় জেলার প্রায় ৫১টি ইউনিয়নের ২৫০টি গ্রামে পানি প্রবেশ করে নিম্নাঞ্চলের বাড়িঘর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে ভোগান্তিতে পড়েছে প্রায় পৌনে দুই লাখ মানুষ। তলিয়ে গেছে প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমির ফসল। 

কাজিপুর উপজেলার নাটুয়ারপাড়া চরের পাটচাষী রফিকুল মিয়া জানান, গতবার ভালো দাম পাওয়ায় বছর সাত বিঘা জমিতে পাটচাষ করেছিলাম। প্রথমবার পানি বেড়ে যাওয়ায় আধা বিঘার পাট কাটতে পেরেছি। আর সব পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। কিন্তু দ্বিতীয় দফার বন্যায় পুরো পাটক্ষেত পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক হাবিবুল হক জানান, বন্যায় এখন পর্যন্ত পাট, আখ, তিল, কাউন সবজিসহ ২০ হাজার ৭৩৭ হেক্টর ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। এর মধ্যে সব থেকে বেশি হাজার ৯৪০ হেক্টর জমির পাট তলিয়ে গেছে। বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে ক্ষতি আরো বাড়তে পারে।

জেলা প্রশাসক . ফারুক আহাম্মদ জানান, ত্রাণ দপ্তর থেকে ৪০০ টন চাল, লাখ টাকার শিশু খাদ্য, লাখ টাকার গো-খাদ্য চার হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এরই মধ্যে বন্যাদুর্গত এলাকার জন্য ১৪২ টন চাল লাখ ৫৪ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে।

কুড়িগ্রাম: বন্যায় জেলার নয় উপজেলায় ১০ হাজার হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। এর মধ্যে সাত হাজার হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসল সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে।

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ তিন সপ্তাহব্যাপী বন্যায় চরাঞ্চলসহ নিম্নাঞ্চলের বীজতলা, আউশ ধানক্ষেত, পটল, ঢেঁড়সসহ বিভিন্ন শাক-সবজি ক্ষেত, ভুট্টা, চীনাবাদাম, কাউন, তিল, মরিচ পাট পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়ে। দীর্ঘদিন পানিতে তলিয়ে যায়। এরই মধ্যে সাত হাজার হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণ রূপে নষ্ট হয়েছে। আর বাকি তিন হাজার হেক্টর জমির ফসলের আংশিক ক্ষতি হয়েছে।

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক . মো. মোস্তাফিজুর রহমান প্রধান জানান, পর্যন্ত জেলায় ১০ হাজার হেক্টর জমির বীজতলাসহ বিভিন্ন ফসল সবজি ক্ষেতের হিসাব নিরূপণ করা হয়েছে। এর মধ্যে সাত হাজার হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। তিন হাজার হেক্টর জমির ফসল আংশিক নষ্ট হয়েছে। বন্যার পানি দ্রুত নেমে না গেলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরো বৃদ্ধি পাবে। জেলায় মোট ৫৩০ হেক্টর জমির বীজতলা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সরকারিভাবে ১৫০ হেক্টর কমিউনিটি বীজতলা তৈরি করে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হবে।

বগুড়া: যমুনা বাঙ্গালী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে জেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। বন্যায় সোনাতলা, সারিয়াকান্দি ধুনট উপজেলার চরাঞ্চলে ফসলের মাঠ বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করেছে। তিন উপজেলায় এখন পর্যন্ত হাজার ৭৫৪ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বগুড়ার জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা আজহার মন্ডল জানান, এখন পর্যন্ত জেলায় ফসলের ক্ষতি হয়েছে প্রায় হাজার ৭৫৪ হেক্টর। আর ৩০ হাজার ৬২২ পরিবারের লাখ ২২ হাজার ৩২০ জন মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে।

সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল হালিম জানান, বন্যায় শুধু সারিয়াকান্দিতেই প্রায় সাড়ে ছয় হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এবার দ্বিতীয় দফায় পানি বেড়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে চরে চাষ করা পাট, কাউন, আউশ ধান, মরিচসহ বিভিন্ন ফসল। পানি কিছুটা কমলে ক্ষতি নিরূপণ করা যাবে।

নওগাঁ: জেলার মান্দা উপজেলার আত্রাই নদীর পানি জোতবাজার পয়েন্টে গতকাল বিকালে বিপত্সীমার ১২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এতে আত্রাই ফকিরনি নদীর উভয় তীরের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের অন্তত ৫০টি পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে দুই নদীর উভয় তীরের চারটি বেড়িবাঁধ জোকাহাট দাসপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে গেছে। এতে মান্দা-আত্রাই আঞ্চলিক সড়কের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বন্যায় জেলার দুই উপজেলায় হাজার ২৩৪ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

মান্দা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রাকিবুল হাসান জানান, উপজেলায় ৬০০ হেক্টর আউশ ধান, ২০ হেক্টর আমনের বীজতলা, ২০ হেক্টর সবজি ক্ষেত তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

আত্রাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ কাওসার হোসেন জানান, উপজেলার হাজার ১৪৫ হেক্টর আউশ ধান, ৫০ হেক্টর রোপা আমণ ধান, ২৪৩ হেক্টর আমনের বীজতলা, ১১ হেক্টর মরিচ, ৭৫ হেক্টর সবজি ক্ষেত এবং ৭০ হেক্টর পাটক্ষেত তলিয়ে গেছে। পর্যন্ত উপজেলায় হাজার ৫৯৪ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে।

লালমনিরহাট: গতকাল জেলায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে বন্যায় জেলার পাঁচ উপজেলার ৩৮৭ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে।

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শামীম আশরাফ বলেন, জেলায় ১৯০ হেক্টর আমন বীজতলা, রোপা আমন ১৭১ হেক্টর, আউশ ১৬ হেক্টর সবজি ১০ হেক্টর পানিতে তলিয়ে গেছে। রোপা আমন আউশ ধানের খুব বেশি ক্ষতি হবে না। তবে সবজির ক্ষতি বেশি হতে পারে।

রংপুর: তিস্তার পানিতে জেলার গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া পীরগাছা উপজেলার ১০ ইউনিয়নের প্রায় ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। দ্বিতীয় দফার বন্যায় তিন উপজেলার প্রায় ৬২ হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ৬২ হেক্টর রোপা আমন, ভুট্টা, পাট শাক-সবজির জমি বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এর মধ্যে গঙ্গাচড়া উপজেলায় পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে আট হেক্টর, কাউনিয়া উপজেলায় ৩৩ হেক্টর গীরগাছা উপজেলায় ২১ হেক্টর। পানিতে নিমজ্জিত হলেও এখনো ফসল নষ্ট হয়নি বলে দাবি করেছে কৃষি বিভাগ।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন