অর্থবছর ২০২০-২১

পণ্য রফতানি হতে পারে ৪১ বিলিয়ন ডলারের

নিজস্ব প্রতিবেদক

চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ৩৭ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ( হাজার ৭৪৪ কোটি) ডলারের পণ্য রফতানির লক্ষ্য নির্ধারণ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে পাঠিয়েছিল অধীনস্থ সংস্থা রপ্তানী উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) খাতসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা শেষে আজ চূড়ান্ত লক্ষ্য ঘোষণা করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছর রফতানির সম্ভাব্য লক্ষ্য হতে পারে ৪১ বিলিয়ন ডলার।

জানা গেছে, সদ্যসমাপ্ত ২০১৯-২০ অর্থবছরে পণ্য রফতানি লক্ষ্য ছিল ৪৫ দশমিক বিলিয়ন ডলার। অর্জন হয়েছে ৩৩ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার। সেবা রফতানির লক্ষ্য ছিল দশমিক বিলিয়ন ডলার। রফতানি অর্জন দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলার। পণ্য সেবা মিলিয়ে ৫৪ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যের বিপরীতে প্রকৃত রফতানি হয়েছে ৪০ দশমিক শূন্য বিলিয়ন ডলার।

চলতি অর্থবছর ২১ শতাংশের মতো প্রবৃদ্ধি ধরে পণ্য রফতানি ৪১ বিলিয়ন ডলারের পাশাপাশি সেবা রফতানির লক্ষ্য হতে পারে বিলিয়ন ডলার। সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি হতে পারে শতাংশের কিছু বেশি। মোট রফতানি প্রবৃদ্ধি হতে পারে সাড়ে ১৯ শতাংশের মতো। পোশাক রফতানি লক্ষ্য ৩৩ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার ঘোষণা আসতে পারে।

এর আগে ইপিবি ৩৭ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ( হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা) ডলারের পণ্য রফতানি  সেবা খাত থেকে রফতানি হতে পারে দশমিক বিলিয়ন (৭৬০ কোটি) ডলারের রফতানি লক্ষ্য নির্ধারণের প্রাথমিক প্রস্তাব দিয়েছিল ইপিবি। সংস্থাটির প্রক্ষেপণ অনুযায়ী, মোট রফতানির ৮২ শতাংশেরও বেশি হবে পোশাক খাত থেকে। সেক্ষেত্রে রফতানি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ১৩ শতাংশ।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাধারণত উচ্চ হারে রফতানির লক্ষ্য নির্ধারণ হয়। আমরা আশা করি বছরের লক্ষ্য মহামারী শ্লথ বৈশ্বিক বাণিজ্যের চাহিদা বিবেচনায় বাস্তবসম্মত হবে। তাই বিশ্ববাজারের অগ্রগতি নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে। বিশেষ করে খুচরা বাজার ভোক্তা আচরণের পাশাপাশি কভিড পরবর্তী বিঘ্নিত বাজারের আর্থিক শৃঙ্খলা এবং অনলাইনে খুচরা বিক্রির পরিবর্তনের বিষয়ে সচেতন হতে হবে।

তৈরি পোশাক শিল্প মালিক সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি . রুবানা হক বণিক বার্তাকে বলেন, চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসা; সক্ষমতা ব্যবহার করে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এরই মধ্যে ৩৪ দশমিক ১৩ বিলিয়নের যে অর্জন; শিল্পের নিরাপত্তা বৃদ্ধি টেকসই করতে আমাদের বিনিয়োগসার্বিক বিবেচনায় আমরা বিশ্বাস করি ৩২ থেকে ৩৩ বিলিয়ন ডলার সম্ভাব্য রফতানির লক্ষ্য পোশাক খাত অর্জন করবে। এর জন্য সঠিক সরকারের অব্যাহত নীতি সহায়তা গ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। শিল্প পুনর্নির্মাণে যা হতে হবে আরো বেশি নমনীয়।

ইপিবি সূত্র জানিয়েছে, জুনের শেষের দিকে রফতানি লক্ষ্য নির্ধারণ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় ইপিবি। যদিও সংস্থাটি তখন খাতসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে নিয়ে আলোচনা করতে পারেনি। এরপর খাতসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনায় প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করা হয়েছে। আজ চূড়ান্ত করে লক্ষ্য ঘোষণা করবেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। এক ভার্চুয়াল সভায় লক্ষ্য ঘোষণা করা হবে।

ইপিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, বর্তমান কভিড-১৯ পরিস্থিতিকে পণ্যের বৈশ্বিক চাহিদা লক্ষ্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে চলতি অর্থবছরের ৩৩ বিলিয়ন ডলারের রফতানিকে ভিত্তি ধরে আগামী অর্থবছরের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

ইপিবির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত মে মাসে বিশ্ববাজারে সব মিলিয়ে ১৪৬ কোটি ৫৩ লাখ ডলারের পণ্য রফতানি করেছে বাংলাদেশ, যেখানে ২০১৯ সালের মে মাসে রফতানি করেছিল ৩৮১ কোটি ৩৩ লাখ ৭০ হাজার ডলারের পণ্য। জুলাই ডিসেম্বর ছাড়া চলতি অর্থবছরের সব মাসেই রফতানি প্রবৃদ্ধির ধারা নেতিবাচক। রফতানিকারকরা বলছেন, চলমান কভিড-১৯-এর প্রেক্ষাপটে পরিস্থিতি আরো খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ইতিহাসের নজিরবিহীন সময় অতিক্রম করছে রফতানি।

কভিড-১৯ বৈশ্বিক অর্থনীতির চিত্র পাল্টে দিয়েছে উল্লেখ করে পোশাক রফতানিকারকরা বলছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির লাইফলাইন হলো রফতানি। মাইক্রো ম্যাক্রো অর্থনীতি স্থিতিশীল রাখতে রফতানি অপরিহার্য। ২০১৮-১৯ অর্থবছরেও ১১ দশমিক ৪৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে রফতানি হয়েছিল ৩৪ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলারের। সব মিলিয়ে গত পাঁচ বছরে শুধু পোশাক খাতের কম্পাউন্ড বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল দশমিক ৮৬ শতাংশ। পোশাক শিল্পের ইতিহাসে রফতানিতে এমন পতন হয়নি। চলতি অর্থবছরে রফতানি কমার পরিমাণ দশমিক বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে বিলিয়ন ডলার রফতানি কমেছে অর্থবছরের প্রথমার্ধে। আর বাকি দশমিক বিলিয়ন ডলার রফতানি কমেছে দ্বিতীয়ার্ধে।

গত অর্থবছরের দ্বিতীয় মাস আগস্ট থেকেই নেতিবাচক ধারায় রয়েছে রফতানি প্রবৃদ্ধির হার। কভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাবের আগে ফেব্রুয়ারিতেও যা অব্যাহত ছিল। নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে মার্চের দিকে নেতিবাচক ধারার মাত্রা আরো বেড়ে যায়। ইপিবির পরিসংখ্যান বলছে, মার্চে বাংলাদেশের সব পণ্যের রফতানি কমেছে ১৮ দশমিক ২৯ শতাংশ। এপ্রিলের পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ। সময় রফতানি কমেছে ৮২ দশমিক ৮৫ শতাংশ। গত মে মাসের তুলনায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরের মে মাসে রফতানি কমেছে ৬১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। জুন মাসে রফতানি কমেছে বা প্রবৃদ্ধি ছিল ঋণাত্মক দশমিক শতাংশ।

ইপিবির সমন্বিত পরিসংখ্যান প্রতিবেদনে দেখা যায়, অর্থবছরের জুলাই থেকে জুন পর্যন্ত ১২ মাসে বিশ্ববাজারে হাজার ৩৬৭ কোটি ৪০ লাখ ৯০ হাজার ডলারের পণ্য রফতানি করেছে বাংলাদেশ। যেখানে গত অর্থবছরের একই সময়ে রফতানি হয়েছিল হাজার ৭৭৫ কোটি লাখ ডলারের পণ্য। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে রফতানি কমেছে ৬৮৬ কোটি ডলারের। অর্থাৎ ১২ মাসের হিসাবে রফতানি হ্রাস পেয়েছে ১৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন