২০০০ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ৬০ কোটি টন বর্ণ ও গন্ধহীন মিথেন গ্যাস মিশেছে বায়ুমণ্ডলে। এ সময়ে বিশ্বজুড়ে গ্যাসটির নির্গমন রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে। ১৭ বছরে এ ক্ষতিকর গ্রিনহাউজ গ্যাস প্রকৃতিতে যে হারে জমা হয়েছে, তা অব্যাহত থাকলে চলতি শতাব্দীর শেষ নাগাদ বৈশ্বিক তাপমাত্রা ৩ থেকে ৪ ডিগ্রি বেড়ে যাবে। আর বাংলাদেশে মিথেন নির্গমনের মূল উৎসে পরিণত হয়েছে কৃষি খাত। আর্থ সিস্টেম সায়েন্স ডাটা এবং এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ লেটার নামে দুটি বিজ্ঞান সাময়িকীতে ১৪ জুলাই প্রকাশিত দুটি নিবন্ধে গবষেণার এসব ফলাফল তুলে ধরা হয়েছে।
গবেষণাটি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী রব জ্যাকসনের নেতৃত্বাধীন বৈজ্ঞানিক গবেষণা সংস্থা গ্লোবাল কার্বন প্রজেক্ট। গতকাল সংস্থাটি থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞতিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
গবেষণায় ২০০০ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বৈশ্বিক মিথেন নির্গমনের তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে। মিথেন নির্গমনের তথ্য সংগ্রহ জটিল ও বিশ্লেষণ করা দুরূহ বলে সর্বশেষ দুই বছরের তথ্য এ গবেষণায় এখনো যুক্ত করা হয়নি। মিথেন খুবই ক্ষতিকর গ্রিনহাউজ গ্যাস। এর তাপ ধরে রাখার ক্ষমতা কার্বন ডাই-অক্সাইডের চেয়ে ২৮ গুণ বেশি। গবেষণায় দেখা গেছে, বর্তমানে অর্ধেকের বেশি মিথেন নির্গত হয় মানুষের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের কারণে। মূলত খনি থেকে কয়লা, তেল ও গ্যাস উত্তোলন, গবাদি পশু পালন ও ময়লা-আবর্জনা দিয়ে জমি ভরাট করার ফলে এ গ্যাস নির্গত হয়।
বিশ্বে একমাত্র ইউরোপে মিথেন নির্গমনের হার আগের চেয়ে কমেছে। ফ্রান্সের ভার্সাই সেন্ট কোয়েনটিন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক মারিয়েলি সাউনয় বলেন, নির্গমন রোধে ইউরোপে বিভিন্ন নীতি ও ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়েছে, এতে আবর্জনা দিয়ে মাটি ভরাটসহ অন্যান্য উৎস থেকে মিথেন নির্গমন কমেছে। মানুষের খাদ্যাভ্যাসও পরিবর্তিত হয়েছে। তারা কম মাংস এবং বেশি মাছ ও পোলট্রি খাচ্ছে।
গ্লোবাল কার্বন প্রজেক্টের নির্বাহী পরিচালক ও কমনওয়েলথ সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ অর্গানাইজেশনের ক্লাইমেট সায়েন্স সেন্টারের জ্যেষ্ঠ মুখ্য গবেষক পেপ ক্যানাডেল বলেন, যেসব গ্রিনহাউজ গ্যাস বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য দায়ী, এর মধ্যে মিথেনের দায় এখন ২৩ শতাংশ। এশিয়া ও আমেরিকা মহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মিথেনের নির্গমন বেড়েই চলেছে। চীন ও দক্ষিণ এশিয়া মিথেন নির্গমনের শীর্ষ দুটি অঞ্চল। এ অঞ্চলে মিথেন নির্গমনের হার বিশ্বজুড়ে মোট নির্গমনের ২৯ শতাংশ। চীনে নির্গমনের মূল কারণ জীবাশ্ম জ্বালানি। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোয় মিথেন নির্গমনের মূল কারণ কৃষি খাত, যেমন ধান উৎপাদন। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোয় যত মিথেন নির্গমন হয়, এর দুই-তৃতীয়াংশ আসে কৃষি খাত ও মাটির সঙ্গে মেশা আবর্জনা থেকে। মিথেন নির্গমনের ফলে তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যেমন দাবানল, খরা, বন্যা এবং দুর্ভিক্ষ বা গণবাস্তুচ্যুতির মতো সামাজিক সমস্যাগুলো আরো প্রবল হবে।
গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১৭ সালে বিশ্বজুড়ে কৃষি খাত থেকে প্রায় ২৩ কোটি টন এবং জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে প্রায় ১১ কোটি টন মিথেন নির্গমন হয়েছে, যা ২০০০-০৬ সাল থেকে যথাক্রমে ১১ ও ১৫ শতাংশ বেশি। নভেল করোনাভাইরাস মহামারীতে বৈশ্বিক লকডাউনে শিল্প-কারখানা এবং পরিবহন বন্ধ থাকার ফলে বিশ্বজুড়ে কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন অনেক কমে গেলেও মিথেন নির্গমন কমেনি।