কভিড-১৯ কি আউটডোর এবং পরিবেশ শিক্ষার ইতি ঘটাবে?

বণিক বার্তা ডেস্ক

গত ৪৯ বছর ধরে র‍্যাঞ্চো  এল কোরো আউটডোর স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা ক্যালিফোর্নিয়া উপকূলের সান লুইস অবিসপো হিলের ওপর যেত টাইডপোল অনুসন্ধান করে স্কুইড ব্যবচ্ছেদের মাধ্যমে বিজ্ঞান বাস্তুসংস্থানের জ্ঞান লাভের জন্য।

র‍্যাঞ্চো এল কোরোর পরিবেশবিষয়ক শিক্ষার ডিরেক্টর চেলেস্টে রোয়ের বলেন, সবকিছুই ছিল নিরীক্ষামূলক। প্রাকৃতিক পরিবেশের সন্নিকটে এই বাচ্চাগুলোকে নেয়ার মাধ্যমে তাদের আবিষ্কারের সুযোগ করে দেয়া হয় এবং আরো জানার জন্য তাদের উৎসাহিত করা হয়। এটা তাদের গতানুগতিক ক্লাসরুম অভিজ্ঞতা থেকে একেবারেই অভিনব। শেখার এই পরিবেশটি ভেতরে তৈরি করা সম্ভব না।

কিন্তু কভিড-১৯-এর কারণে দুই মাস বন্ধ থাকার পর র‍্যাঞ্চো এল কোরো স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেয়া হয় ২০২০ সালের মে মাসে।

এর আগে মার্চ মাসে কভিড-১৯-এর কারণে স্কুল যখন বন্ধ হয়ে যায়, তখনই ছিল মূলত স্কুলের সবচেয়ে লাভজনক মৌসুম। এটি মূলত আবাসিক প্রোগ্রাম, যেখানে ছাত্রছাত্রীরা স্কুলে অবস্থান করে আউটডোর শিক্ষা গ্রহণ করত।

ওয়ের বলেন, আমার জীবন-জীবিকা আসে এই আবাসিক প্রোগ্রাম থেকে। এটা চালাতে না পেরে আমরা কয়েক লাখ ডলার হারিয়েছি।

অর্ধমিলিয়ন ডলারের ঘাটতির কারণে সান লুইস ওবিসপো কাউন্টি এডুকেশন অফিসের (যা জেলার সব সহায়ক শিক্ষামূলক কর্মসূচি তদারকি করে) সুপারিনটেনডেন্ট সিদ্ধান্ত নেন আউটডোর স্কুলগুলো বন্ধ রাখার। যেখানে তারা পাঁচটি কাউন্টিতে বছরে সাত হাজার শিক্ষার্থীকে সেবা দিয়ে আসছে।

যদিও সিদ্ধান্তে রয়ের নিজের হতাশা বিস্ময় প্রকাশ করেছেন, কিন্তু রাঞ্চো এল কোরো একা নয়। ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার লরেন্স হল অব সায়েন্সের একটি জরিপে সম্প্রতি অংশ নিয়েছে প্রায় এক হাজার পরিবেশবিষয়ক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং আউটডোর সায়েন্স স্কুল। যেখানে ৬৩ শতাংশ প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, যদি বছরের শেষ পর্যন্ত মহামারী অবস্থান করে তবে তারা আর কখনো খুলবে কিনা সে বিষয়ে উদ্বিগ্ন।

এই প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে নেচার সেন্টার প্রিস্কুল, পার্ক, চিড়িয়াখানা, অ্যাকুরিয়াম, জাদুঘর  র‍্যাঞ্চো মতো আবাসিক আউটডোর সায়েন্স স্কুল। কভিড-১৯ না এলে বসন্তেই তারা লাখো শিক্ষার্থীকে সেবা প্রদান করত। হিসাবমতে, ডিসেম্বর অবধি ১১ মিলিয়ন শিক্ষার্থী এই অভিজ্ঞতা থেকে বঞ্চিত হবে।

এদিকে হিসাব অনুযায়ী ২০২০ সালের মে মাসে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষতি হয়েছে ২২৫ মিলিয়ন ডলার এবং সাময়িক পূর্ণকালীন চাকরি হারিয়েছে ১২ হাজার স্টাফ। এই ক্ষতির পরিমাণ বছর শেষে ৬০০ মিলিয়ন ডলার এবং চাকরি হারানো লোকের সংখ্যা হতে পারে ৩০ হাজারের মতো। ডাটা ক্ষেত্রটির একটি অল্প অংশকে তুলে ধরছে।

আউটডোর বিজ্ঞান শিক্ষার সুবিধা

পরিবেশবিষয়ক আউটডোর শিক্ষা মূলত শিক্ষার্থীদের জন্য বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত সুবিধাগুলোর একটি মুগ্ধতা জাগানিয়া প্রদর্শন। এর মাধ্যমে পরিবেশবিষয়ক পরিচালনা সচেতনতা বাড়া থেকে শুরু করে সামাজিক-একাডেমিক শারীরিক-মানসিক উন্নতিও হয়ে থাকে। প্রকৃতি ব্যাধির ঘাটতি ঘটায়, এই লাইনটি লেখক রিচার্ড লুভের ২০০৫ সালে প্রকাশিত বই লাস্ট চাইল্ড ইন দ্য উডের। যে ধারণাটি বলছে, আমাদের অনেক শিক্ষার্থী আচরণগত সমস্যা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। যেমন আউটডোরে কম সময় কাটানোর কারণে মনোযোগ হ্রাস পাচ্ছে এবং স্থূলতার সমস্যা তৈরি হচ্ছে। তাই প্রকৃতিভিত্তিক শিক্ষা মনোযোগ বৃদ্ধি এবং উদ্বেগ কমানোর জন্য প্রচলিত শিক্ষার চেয়ে অধিক কার্যকর। তাই এটা মোটেই অবাক করা ব্যাপার নয় যে শিশু বিশেষজ্ঞরা শিশুদের জন্য আউটডোর সময় নির্ধারণ করা শুরু করেছেন।

প্রাকৃতিক জায়গাগুলোতে শ্বেতাঙ্গ ছাড়া অন্যদের প্রবেশ সাধারণত কম। যার অর্থ পরিবেশবিষয়ক আউটডোর প্রোগ্রামিংয়ের ক্ষতি ন্যায্যতারও একটি সমস্যা। হিসাব অনুযায়ী যেসব শিক্ষার্থী যারা প্রোগ্রাম বাতিলের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হবে তাদের ৫৮ শতাংশ প্রান্তিক কমিউনিটি থেকে আসা। যেখানে ইংরেজি ভাষার শিক্ষার্থী এবং বিনা মূল্যে লাঞ্চ পাওয়ার যোগ্য তারাও রয়েছে। এই শিক্ষার্থীদের আউটডোর স্থানে চলাফেরা এমনিতেই সীমিত, যা এখন মহামারীর কারণে আরো বাড়বে।

ধাক্কা খেয়েছে রেসিডেন্সিয়াল আউটডোর সায়েন্স স্কুলগুলো

আবাসিক আউটডোর সায়েন্স স্কুলগুলো, যারা জরিপের উত্তরদাতাদের এক-চতুর্থাংশ, অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে তাদের পুনরায় খোলা খুবই কঠিন। কারণ তারা এমন পরিস্থিতিতে উপস্থাপন করে যেখানে সামাজিক দূরত্ব মানা কঠিন। যেমন দূরবর্তী ক্যাম্পাসে বাসে আসা-যাওয়া, আবদ্ধ ঘরে অনেকজন ঘুমানো এবং একই জায়গায় অনেকের একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করার ব্যাপারগুলো থাকে।

যেখানে বেশির ভাগ প্রোগ্রাম বন্ধ, সেখানে অবশ্য ন্যাশনাল আউটডোর লিডারশিপ স্কুলের (এনওএলএস) মতো অলাভজনক প্রতিষ্ঠান সামাজিক দূরত্বের নীতি মেনে গ্রীষ্মে নিজেদের প্রোগ্রাম শুরু করেছে।

আশার আলো

বিশৃঙ্খলার মাঝেও সুযোগ রয়েছে। সংস্থাগুলো ঘুরে দাঁড়ানোর সঙ্গে নতুন স্টাফদের কাজের সুযোগ তৈরি হবে। তখন তারা বিভিন্ন বর্ণ সম্প্রদায়ের লোকদের নিয়োগ দিতে পারবে, যা সব সম্প্রদায়ের স্বার্থ রক্ষার কাজ করবে। ২০১৯ সালে দ্য লরেন্স হল অব সায়েন্স একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করে পরিবেশবিষয়ক শিক্ষার ক্ষেত্রে ন্যায়সংগত কর্মক্ষেত্র পরীক্ষা করে। যেখানে তারা নিয়োগ দেয়ার ক্ষেত্রে নানা বর্ণের লোককে প্রাধান্য দেয়ার কথাও বলে।

প্রোগ্রামগুলো স্কুল ব্যবস্থায় শিক্ষক নিয়োগের মাধ্যমে স্থানীয় বিদ্যালয়ের সঙ্গে নিজেদের অংশীদারিত্ব আরো জোরদার করতে পারে।

যদিও আউটডোর সায়েন্স এডুকেশনের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে চিরায়ত স্কুল, দাতা, সমাজসেবী, নীতিনির্ধারক বিস্তৃত একাডেমিক ওয়ার্ল্ড আউটডোর শিক্ষাকে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার বৈধ প্রয়োজনীয় উপাদান হিসেবে দেখছে কিনা তার ওপর।

স্মিথসোনিয়ান

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন