আইসিআরএর পর্যবেক্ষণ

ভারতের ইস্পাত রফতানিতে উল্লম্ফন টেকসই হবে না

বণিক বার্তা ডেস্ক

 নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর ভারতে দীর্ঘদিন লকডাউন চলছে। এর জের ধরে দেশটি প্রায় সব ধরনের শিল্প আর্থিক খাত কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে। লকডাউন আর্থিক অনিশ্চয়তায় দেশটিতে ইস্পাত চাহিদা ব্যাপক হারে কমেছে। এদিকে অভ্যন্তরীণ চাহিদা কমায় স্থানীয় ইস্পাত ব্যবসায়ীরা ধাতব পণ্যটির রফতানিতে জোরারোপ করেছে। ফলে গত কয়েক মাসে ভারত থেকে পণ্যটির রফতানি কয়েক গুণ বেড়েছে। তবে পণ্যটির রফতানিতে এমন উল্লম্ফন স্বল্পমেয়াদে খুব বেশিদিন স্থায়ী হবে না বলে মনে করছেন ইনভেস্টমেন্ট ইনফরমেশন অ্যান্ড ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি অব ইন্ডিয়া লিমিটেড বা আইসিআরএ। খবর বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস।

আইসিআরএর তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (এপ্রিল-মে) ভারত সব মিলিয়ে ১৭ লাখ ১০ হাজার টন পরিশোধিত ইস্পাত আন্তর্জাতিক বাজারে রফতানি করেছে, আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় যা ৭৬ শতাংশ বেশি। একই সময়ে দেশটিতে ধাতব পণ্যটির চাহিদা কমেছে ৬৯ শতাংশ। এদিকে সময়ে দেশটি থেকে অর্ধপরিশোধিত ইস্পাত রফতানি বেড়েছে ব্যাপক হারে। এপ্রিল মে মাসে ভারত সব মিলিয়ে ১২ লাখ ৯০ হাজার টন অর্ধপরিশোধিত ইস্পাত রফতানি করেছে, আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় যা ২৮১ শতাংশ বেশি।

সময়ে ভারত থেকে রফতানি হওয়া ইস্পাতের সবচেয়ে বড় ক্রেতা হয়েছে চীন। পরিশোধিত অর্ধপরিশোধিত মিলিয়ে ভারতের মোট ইস্পাত রফতানির ৪৮ শতাংশের গন্তব্য ছিল চীন। আর দেশটি থেকে রফতানি হওয়া মোট অর্ধপরিশোধিত ইস্পাতের ৭৮ শতাংশ কিনেছেন বেইজিংয়ের ব্যবসায়ীরা। ভারতের ইস্পাত মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন জয়েন্ট প্লান্ট কমিটির (জেপিসি) তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিল মে মাসে ভারত থেকে চীনে পরিশোধিত অর্ধপরিশোধিত ইস্পাত রফতানি হয়েছে যথাক্রমে লাখ ৪০ হাজার টন ১০ লাখ টন।

আইসিআরএর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মূলত কভিড-১৯ সংক্রমণ রোধে ভারতজুড়ে লকডাউন আরোপ হওয়ার পর দেশটির অভ্যন্তরীণ ইস্পাত ব্যবহারে ধস নামে। পরিস্থিতি সংশ্লিষ্টদের পণ্যটি রফতানিতে আগ্রহী করে তুলেছে।

তবে ভারত থেকে রফতানি হওয়া ইস্পাতের দাম রয়েছে নিম্নমুখী। একই সময়ে আমদানি করা প্রতি টন ইস্পাতের জন্য চীন খরচ করেছে গড়ে ৯৭২ ডলার। অথচ ভারত থেকে ক্রয় করা প্রতি টন ইস্পাতের দাম দাঁড়িয়েছে ৩৫৭ ডলার। মূলত অর্ধপরিশোধিত নিম্নমানের ইস্পাত রফতানির কারণে ভারতীয় পণ্যের দাম কমতির দিকে রয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে ইস্পাত তৈরির অন্যতম প্রধান কাঁচামাল আকরিক লোহার দাম কমতির দিকে থাকায় ভারত থেকে রফতানি হওয়া ইস্পাতের দামে মন্দা থাকলেও সংশ্লিষ্টরা লাভবান হয়েছে বলে জানিয়েছে আইসিআরএ।

আইসিআরএর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং গ্রুপ প্রধান জয়ন্ত রায় বলেন, বছরের শুরুর দিকের তুলনায় আকরিক লোহার দাম এক-তৃতীয়াংশ কমে গেছে। এছাড়া ইস্পাত তৈরির অন্যান্য কাঁচামালের দামও নাগালের মধ্যে রয়েছে। ফলে অন্যান্য দেশের তুলনায় ভারত থেকে রফতানি হওয়া ইস্পাতের দাম কমতির দিকে থাকলেও খাতসংশ্লিষ্টদের লোকসান হয়নি। তবে লাভবান হওয়া সত্ত্বেও দেশটি থেকে পণ্যটির রফতানি বৃদ্ধির ধারা টেকসই হবে না বলে মনে করে প্রতিষ্ঠানটি। কারণ ওই সময় শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়া স্থানীয় চাহিদা কমে আসায় সংশ্লিষ্টরা কম মূল্যে পণ্যটির রফতানি বাড়িয়েছিল। অভ্যন্তরীণ চাহিদা স্বাভাবিকে ফিরলেই দেশটি থেকে ইস্পাত রফতানি কমে আসার সম্ভাবনা বেশি।

এদিকে রফতানি বাড়লেও সময় ভারতে ইস্পাত আমদানি কমেছে। একই সঙ্গে গত তিন মাস ধরে দেশটিতে পণ্যটির উৎপাদন নিম্নমুখী রয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) দেশটিতে পণ্যটির আমদানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৩ শতাংশ কমেছে। অন্যদিকে ওয়ার্ল্ড স্টিলের তথ্য অনুযায়ী, গত মে মাসে ভারত সব মিলিয়ে ৫৭ লাখ ৬০ হাজার টন অপরিশোধিত ইস্পাত উৎপাদন করেছে, আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় যা ৩৯ শতাংশ কম। গত মার্চ থেকে দেশটির ইস্পাত উৎপাদনে মন্দা ভাব বজায় রয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন