ক্যাশবিহীন অর্থনীতির রসদ জোগাচ্ছে করোনাভাইরাস

বণিক বার্তা ডেস্ক

নভেল করোনাভাইরাসের বিস্তার প্রতিরোধে মার্চের মাঝামাঝিতে স্থানীয় রেস্তোরাঁগুলোকে কেবল পার্সেল সার্ভিসের মাধ্যমে খাবার বিক্রি সরবরাহের নির্দেশ দেয় আটলান্টা কর্তৃপক্ষ। তখনই ক্যাসেলুচ্চি হসপিটালিটি গ্রুপ সিদ্ধান্ত নেয়, তারা তাদের সাতটি রেস্তোরাঁর কোনোটিতেই গ্রাহকদের কাছ থেকে আর নগদ অর্থে পেমেন্ট নেবে না।

গ্রুপটির মালিক ফ্রেড ক্যাসেলুচ্চি জানান, তিনি করোনা মহামারীর আগেই এমন পরিবর্তনের চিন্তা করে রেখেছিলেন। কারণে আগে থেকেই তাদের ৯০ শতাংশ লেনদেন ক্রেডিট ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে সম্পন্ন হতো। কিন্তু নগদ অর্থে পেমেন্ট পুরোপুরি বন্ধও করতে পারছিলেন না তিনি। কারণ এতে গ্রাহক হারানোর ভয় ছিল। নভেল করোনাভাইরাস তাকে সে সুযোগ করে দিয়েছে।

ক্যাসেলুচ্চি বলেন, মহামারীর কারণে অনেক কিছুই বদলে গেছে। এখন আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য হলো গ্রাহক, কর্মী কমিউনিটির স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা। শিগগিরই একটি রেস্তোরাঁয় কিউআর কোড স্ক্যানিংয়ের মতো কন্টাক্টলেস পেমেন্ট ব্যবস্থা চালুর পরিকল্পনা করছেন তিনি।

ক্যাশবিহীন লেনদেন জনপ্রিয় হবে কিনা কিংবা অন্যান্য কার্যক্রমেও ব্যবস্থা চালু করতে পারবেন কিনা, সে ব্যাপারে নিশ্চিত নন ক্যাসেলুচ্চি। কিন্তু একটি বিষয় নিশ্চিত, ভবিষ্যতে নগদ অর্থের লেনদেনে ফিরে যাওয়ার কোনো পরিকল্পনা মুহূর্তে তার নেই এবং চিন্তা তার একার নয়।

চলতি বছরের শুরুতে আটলান্টার মার্সিডিজ-বেঞ্জ স্টেডিয়াম কর্তৃপক্ষ জানায়, গত বছরের মার্চে বিশ্বের প্রথম প্রফেশনাল স্পোর্টস ভেনু হিসেবে ক্যাশবিহীন লেনদেন শুরুর মাধ্যমে সাড়ে লাখ ডলার সঞ্চয় করতে পেরেছে তারা। গত মে মাসে অন্যদের ব্যবস্থা সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য একটি ভার্চুয়াল সেমিনারের আয়োজন করে তারা। দুই শতাধিক স্থানীয় আতিথেয়তা বিনোদন কোম্পানি অংশ নিয়েছিল এতে। এর মধ্যে অন্যতম ক্যাসেলুচ্চি, স্টেডিয়ামের ভেতরে যাদের একটি রেস্তোরাঁ রয়েছে। স্টেডিয়ামটির মূল কোম্পানি আটলান্টা বিজনেস ক্রনিকলের প্রধান নির্বাহী স্টিভ ক্যানন বলেন, করোনা মহামারী ক্যাশবিহীন লেনেদেনকে অপরিহার্যে পরিণত করেছে।

কেবল যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টাই নয়, বরং কভিড-১৯ পুরো বিশ্বের ক্যাশবিহীন অর্থনীতিতেই গতিসঞ্চার করেছে। গ্রাহকরা এখন ভয়ে রয়েছেন, কাগুজে টাকা সরাসরি লেনেদেনের মাধ্যমে তাদের শরীরে না আবার নভেল করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। যদিও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর সপক্ষে এখন পর্যন্ত পর্যাপ্ত তথ্য হাতে নেই তাদের। তবে একথা বলতে কোনো বাধা নেই যে নগদ অর্থ থেকে ক্যাশবিহীন লেনদেনে রূপান্তর করোনা সংক্রমণের ভয় অনেকখানি কমিয়ে দেবে। তবে এক্ষেত্রে একটি সমস্যা রয়েছে। যাদের কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, ক্রেডিট ডেবিট কার্ড বা ডিজিটাল অ্যাকসেস নেই, তারা কী করবেন?

কিন্তু তার পরও ডিজিটাল লেনেদেনের ব্যবহার বেড়েই চলেছে। যুক্তরাজ্যের একটি পর্যবেক্ষণ সংস্থা জানিয়েছে, প্রতি ১০ জনের মধ্যে একজন ক্রেতা লকডাউনের মধ্যে দোকানে গিয়ে নগদ অর্থে পরিশোধ করতে চাইলেও দোকানগুলো তা প্রত্যাখ্যান করেছে।

করোনা প্রতিরোধে লকডাউনের কারণে মানুষ এখন ঘরে থাকতে বাধ্য হচ্ছে। কেনাকাটার জন্য শপিংমলে যাওয়াও হচ্ছে না। সুযোগে বেড়ে গেছে অনলাইনে কেনাকাটা। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে জরুরি প্রয়োজনের পণ্যগুলোও অনলাইনে কেনা হচ্ছে। এর মাধ্যমেও কার্ডে লেনদেন বেড়ে গেছে।

লুলুলেমন নর্ডস্ট্রোমের মতো বড় কিছু কোম্পানি এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়েছে, তারা যখন পুনরায় তাদের কার্যক্রমে ফিরবে তখন পুরোপুরি ক্যাশবিহীন লেনদেন চালু করবে। এদিকে স্টারবাকসের প্রধান নির্বাহী সম্প্রতি জানিয়েছেন, কোম্পানিটি আরো বেশি ডিজিটাল লেনদেননির্ভর হওয়ার চেষ্টা করছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাসিনোগুলোও ডিজিটাল পেমেন্টের ওপর জোর দিচ্ছে।

ক্যাশবিহীন লেনদেন তখনই বলা হয়, যখন একটি প্রতিষ্ঠানের মোট লেনদেনের অন্তত ৯৫ শতাংশ ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। সাম্প্রতিক একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মার্চে মহামারী শুরুর সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে শতাংশ সেলার ক্যাশবিহীন লেনদেন করত। এপ্রিলের শেষ নাগাদ হার বেড়ে দাঁড়ায় ৩১ শতাংশ। যুক্তরাজ্যেও ধরনের বিক্রেতার সংখ্যা ১০ শতাংশ থেকে একলাফে বেড়ে ৬০ শতাংশে উঠে যায়।

ক্যাশবিহীন অর্থনীতিতে রূপান্তরের গতি আরো বাড়তে পারে, যেখানে করোনার প্রাদুর্ভাব শুরুর আগে থেকেই এর হার অনেক বেশি ছিল। এমনই একটি দেশ সুইডেন। সেখানকার ৮০ শতাংশ জনগোষ্ঠীই কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন করে। দেশটির জিডিপির মাত্র দশমিক শতাংশ লেনদেন সম্পন্ন হয় নগদ অর্থে। এছাড়া যেসব দেশে মোবাইল পেমেন্টের ব্যবহার বেশ জনপ্রিয়, সেসব দেশও ক্যাশবিহীন অর্থনীতির ঝাণ্ডাবাহক হতে পারে। অবশ্য পুরোপুরি নগদ অর্থবিহীন সমাজ্য ব্যবস্থা খুব শিগগিরই দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। ব্লুমবার্গ

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন