আগামী মার্চে শেষ হওয়া ২০২০ অর্থবছরে জাপানের অর্থনীতি ৪ দশমিক ৭ শতাংশ সংকুচিত হবে এবং ভোক্তা মূল্য সূচক শূন্য দশমিক ৫ শতাংশে দাঁড়াবে। বুধবার এক পূর্বাভাসে এ তথ্য জানায় ব্যাংক অব জাপান (বিওজে)। খবর কিয়োদো, ব্লুমবার্গ।
নভেল করোনাভাইরাসের ধাক্কা প্রশমনে মুদ্রানীতি শিথিল করার ব্যাপারে দুদিনের বৈঠকে নীতিনির্ধারকরা সম্মতি প্রদানের পর এ পূর্বাভাস দেয় জাপানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
২০২১ অর্থবছরে অবশ্য ৩ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে বিওজে। এছাড়া ব্যাংকটির সর্বশেষ প্রান্তিক অর্থনৈতিক ও মূল্যস্ফীতি পূর্বাভাস প্রতিবেদনে আশা প্রকাশ করা হচ্ছে, আগামী অর্থবছরে অর্থনৈতিক কার্যক্রম মহামারীপূর্ব মাত্রায় পৌঁছবে।
গত এপ্রিলে প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পূর্বাভাস ছিল, চলতি বছরে জাপানের অর্থনীতি ৩ থেকে ৫ শতাংশ সংকুচিত হবে এবং মূল্যস্ফীতি হার শূন্য দশমিক ৩ থেকে শূন্য দশমিক ৭ শতাংশের নেতিবাচক সীমানায় থাকবে।
পলিসি মিটিংয়ে স্বল্পমেয়াদি সুদহার ঋণাত্মক শূন্য দশমিক ১ শতাংশ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিওজে। এছাড়া দীর্ঘমেয়াদে তা শূন্যের কাছাকাছি রাখার কথা ভাবছে। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের ১১০ ট্রিলিয়ন ইয়েন বা ১ ট্রিলিয়ন ডলারের করপোরেট সহায়তা কর্মসূচিও বহাল রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত জুনে নেয়া সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন কোম্পানির জন্য সুদমুক্ত ঋণ, করপোরেট বন্ড ও কমার্শিয়াল পেপার ক্রয় করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
তবে অর্থনীতি কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, গত জুনে বিওজের তাঙ্কান জরিপে তা উঠে এসেছে। চলতি মাসের শুরুতে প্রকাশিত ওই জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, বৃহৎ ম্যানুফ্যাকচারারদের ব্যবসায় সেন্টিমেন্ট ২০০৯ সালের বৈশ্বিক আর্থিক সংকট-পরবর্তী সর্বনিম্নে দাঁড়িয়েছে। দেশটির ম্যানুফ্যাকচারিং খাত বড় আকারে বৈদেশিক চাহিদার ওপর নির্ভর করে, যেখানে মহামারীর আঁচ ভালো করে লেগেছে। পর্যটন খাতের পতনের জেরে নন-ম্যানুফ্যাকচারিং খাতও বড় আকারে ধুঁকছে। এছাড়া মহামারীর পরিপ্রেক্ষিতে বেশির ভাগ মানুষ ডিপার্টমেন্ট স্টোরের মতো জনাকীর্ণ জায়গা এড়িয়ে চলায় খুচরা বিক্রিতেও শ্লথগতি দেখা গেছে।
জুনের পলিসি মিটিংয়ের সঙ্গে সংগতি রেখে সর্বশেষ মিটিংয়েও বিওজে জানায়, জাপানের অর্থনীতি মারাত্মক পরিস্থিতিতে পড়েছে। সামনের দিকে তাকিয়ে চলতি বছরের শেষার্ধে জাপানের অর্থনীতি ধীরে ধীরে উন্নত হতে পারে, তবে তার গতি শ্লথ।
সর্বশেষ এ পূর্বাভাসে বলা হয়, আগামী দিনগুলো কোন দিকে যাবে তা খুব অস্পষ্ট। সবকিছু নির্ভর করছে অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক অর্থনীতির ওপর কভিড-১৯ মহামারীর প্রভাব কেমন পড়ছে। ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলক অনেক কম সত্ত্বেও টোকিও এবং অন্যান্য প্রিফ্যাকচারে ফের নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ বাড়ছে। এতে দ্বিতীয় দফা সংক্রমণের ভয় ছড়িয়ে পড়েছে।
আগামীতে ঋণনীতি আরো শিথিল করার ইঙ্গিত দিয়ে বিওজে বলছে, নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর প্রভাব গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করবে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দ্বিধা করবে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বর্তমান মুদ্রনীতি বহাল রাখার সিদ্ধান্তটি ৮-১ ভোটে জয়ী হয়েছে। একমাত্র ভিন্ন মত পোষণকারী গশি কাতাওয়াকা আরো সুদহার কর্তনের দাবি জানান। মুদ্রা বিনিময় তহবিলে বার্ষিক ১২ ট্রিলিয়ন ইয়েনের তহবিল গঠনের বিষয়টিও অনুমোদন করে বিওজে।
ব্যাংকের মুদ্রানীতি নিয়ে গভর্নর হারুহিকো কুরোদা এবং তার পলিসি বোর্ড সুদহার ও অন্যান্য মুদ্রানীতি শিথিল রাখার বিষয়েই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে কিছু সূত্র বলছে, বর্তমানে আর্থিক বাজার তুলনামূলক স্থিতিশীল থাকা এবং কোম্পানিগুলোর বড় কোনো তহবিল সংকট না থাকায় অতিরিক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি নয়।
এনএলআই রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মুখ্য অর্থনীতিবিদ ইয়াসুহিদে ইয়াজিমা বলেন, অর্থনৈতিক কার্যক্রম ধীরে ধীরে গতি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কঠিন সময়টা কাটিয়ে নিতে চাইছে বিওজে।
চলতি মাসে জরিপে অংশ নেয়া ৯০ শতাংশ অর্থনীতিবিদই মনে করছেন, অর্থনীতিকে সহায়তায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক যা করেছে, তা পর্যাপ্ত বা প্রয়োজনের চেয়ে বেশি।
গত জুনে দেউলিয়াত্ব হার ৬ দশমিক ৩ শতাংশ এবং মে মাসে বেকারত্ব হার ২ দশমিক ৯ শতাংশে দাঁড়ানোর ফলে এটি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে সংকট মোকাবেলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকারের প্রয়াস ফল দেয়া শুরু করেছে। তার পরও ব্যবসায়ের ওপর নভেল করোনাভাইরাসের প্রভাব পর্যবেক্ষণ করে যাবে বিওজে। বিশেষ করে ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানগুলো, যেখানে জাপানের বেশির ভাগ কর্মী কাজ করছেন।