পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিশ্বের মানুষ যখন মহামারী, জলবায়ু পরিবর্তন, দারিদ্র্য এবং ক্ষুধার মতো কঠিন প্রতিপক্ষের সঙ্গে লড়ছে, তখন চাল উৎপাদন ব্যবস্থাকে একটা টেকসই জায়গায় নিয়ে যেতে নিরলসভাবে কাজ করছে আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা সংস্থা (ইরি)। আর এই বিষয়টিকে সামনে রেখেই সম্প্রতি প্রকাশিত হলো ইরির ২০১৯ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন।
‘রেস ফর ইমপ্যাক্ট’ শিরোনামে এবারের বার্ষিক প্রতিবেদনে যেসব বিষয়কে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে তার মধ্যে একটি হলো প্রান্তিক কৃষক, নারী ও তরুণদের জন্য চাল উৎপাদন ব্যবস্থাকে আরও টেকসই করা যাতে তারা জলবায়ূ পরিবর্তনের প্রভাবগুলোকে আলো ভালোভাবে মোকাবেলা করতে পারে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) এবং বিভিন্ন দেশের জাতীয় উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ইরির বিভিন্ন সহায়ক কর্মকাণ্ডগুলোকেও এবারের বার্ষিক প্রতিবেদনে তুলে আনা হয়েছে। বিভিন্ন দেশের ধানচাষীদের রয়েছে নিজস্ব জ্ঞান ও চাষাবাদের পন্থা - এগুলো সংরক্ষণের বিষয়ে ইরি বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। ধান চাষকে আরো সহজ ও দ্রুততর করতে নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনও ইরির আরেকটি অগ্রাধিকার।
ইরির নির্বাহী পরিচালক ম্যাথিউ মোরেল বলেন, ‘বিশ্বের খাদ্য ব্যবস্থাগুলো একটা বড় ধরনের পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সীমিত প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর বাড়তি চাপ না দিয়ে কীভাবে আরো স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস তৈরি করা যায় এটাই এই পরিবর্তনের বড় চ্যালেঞ্জ। এই লক্ষ্য অর্জন করতে হলে কৃষিখাতের অগ্রাধিকারগুলো নিয়ে আমাদের নতুন করে ভাবতে হবে। সবাই যেন খাবার কিনে খেতে পারে এটা যেমন নিশ্চিত করতে হবে, তেমনি ভাবতে হবে সবার জন্য আরও স্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা কিভাবে করা যায়।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বজুড়ে খাদ্য ব্যবস্থাগুলো যে পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তার পাশাপাশি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাগুলোও একই গতিতে অর্জন করা কম কথা নয়। এই চ্যালেঞ্জিং সময়ে ইরির লক্ষ্য হলো অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবেলায় সহনশীলতা বাড়ানো।
বাংলাদেশে ইরির কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. হামনাথ ভান্ডারি বলেন, ‘উন্নয়নের জন্য গবেষণাকে আরও গতিশীল করতে ৫টি বিষয়ে বিশেষ মনোযোগ দিচ্ছে ইরি। এগুলো হলো জলবায়ূ পরিবর্তন, পরিবেশ, সামাজিক সমতা, সমৃদ্ধি ও পুষ্টি। আমাদের বিশ্বাস, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাগুলো অর্জনে এসব বিষয় আমাদের সঠিক পথে চালিত করবে।’
আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা কেন্দ্র (ইরি) ধান গবেষণার মাধ্যমে দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব গড়ার লক্ষ্যে কাজ করছে ১৯৬০ সাল থেকে। কৃষক এবং ক্রেতাদের সুস্বাস্থ্য এবং কল্যাণ নিশ্চিত করাও সংগঠনটির একটি অন্যতম বড় লক্ষ্য। ইরি একটি স্বাধীন এবং অলাভজনক গবেষণা প্রতিষ্ঠান যার প্রধান কার্যালয় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দ্বীপরাষ্ট্র ফিলিপাইনে। বাংলাদেশসহ এশিয়া এবং আফ্রিকা মহাদেশের আরো ১৭টি চাল উৎপাদনকারী দেশে ইরির কার্যালয় রয়েছে।