দুবাইয়ে নারী পাচার

চার হোটেল থেকে আজমের বার্ষিক আয় শতকোটি টাকার বেশি

নিহাল হাসনাইন

দুবাইয়ে চারটি হোটেলের মালিকানা নিয়েছেন নারী পাচারে যুক্ত চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির আজম খান। হোটেলগুলো থেকে বছরে তার আয় শতকোটি টাকার বেশি। ব্যবসায়ীর ব্যক্তিগত সহকারী (পিআরও) ভিসায় দুবাই গিয়ে নানা অসাধু উপায়ে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি। সম্প্রতি আত্মগোপনে থাকা আজম খানকে গ্রেফতার করে এসব তথ্য জানতে পারে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, আজম খানের নামে দুবাইয়ে চার তারকাযুক্ত তিনটি তিন তারকাবিশিষ্ট একটি হোটেলের মালিকানা রয়েছে। হোটেলগুলো হচ্ছে ফরচুন পার্ল হোটেল অ্যান্ড ড্যান্স ক্লাব, হোটেল রয়েল ফরচুন, হোটেল ফরচুন গ্র্যান্ড হোটেল সিটি টাওয়ার। এসব হোটেলে অতিথি হয়ে যেতেন বাংলাদেশ ভারতের ব্যবসায়ীরা। এজন্য তাদের কাছ থেকে হাজার দিরহাম করে নেয়া হতো। এছাড়া কফি শপের আড়ালেও অসামাজিক কার্যক্রম চালানো হতো। সেখানে ঘণ্টায় ১০০ দিরহাম নেয়া হতো। ড্যান্সবারে যেতে হলেও আলাদা টাকা দিতে হতো। এভাবে চারটি হোটেল থেকে বছরে ১৯২ কোটি টাকা উপার্জন করতেন আজম খান।

সিআইডি সূত্র জানায়, করোনাকালে এসব হোটেলে কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কর্মীরা টাকা না পেয়ে দুবাই পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন। পরে আজম খান সম্পর্কে পুলিশ বিস্তারিত জানতে পারে। এর পরই দুবাই পুলিশ আজম খানের ব্যাপারে বাংলাদেশ দূতাবাসকে জানায় এবং তার পাসপোর্ট বাতিল করে দেয়। এর মধ্যে এক্সিট পাস নিয়ে আজম দেশে চলে আসেন। তার পর থেকে আত্মগোপনে যান। গত রোববার সিআইডি তাকে গ্রেফতারের কথা জানায়।

সূত্র আরো জানায়, দুবাইয়ে আজম খানের হোটেলে কাজ দেয়ার নাম করে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নারীদের সেখানে নেয়া হতো। প্রথমে তাদের ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা বেতনের চাকরির প্রস্তাব দেয়া হতো। কাজ করতেন আজম খানের সহযোগী আল আমিন ওরফে ডায়মন্ড। তাকেও গ্রেফতার করেছে সিআইডি।

সোমবার আদালতে ডায়মন্ড ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, নারীদের ফোন নম্বর ঠিকানা ম্যানেজ করার দায়িত্ব ছিল তার। এরপর তিনি এসব নারীর তথ্য দালালদের দিতেন। এরাই এসব নারীকে ফুসলিয়ে আর্টিস্ট ভিসায় দুবাইয়ে আজম খানের কাছে পাঠিয়ে দিত। কোনো নারী দুবাইয়ে পৌঁছানোর পর পরই তার কাছে টাকার ভাগ চলে আসত। দুবাইয়ে পৌঁছানোর পর ড্যান্সবারে কাজ করার কথা বললে অনেকে রাজি হতো না। কারণে তাদের ওপর নির্যাতনও চলত। খাওয়া বন্ধ করে দিয়ে এক পর্যায়ে তাদের বাধ্য করা হতো।

সিআইডির কর্মকর্তারা জানান, আজম খান দেশে-বিদেশে বিপুল সম্পদ গড়েছেন। দুবাইয়ে পাঠানো তরুণীদের মধ্যে এক তরুণীকে তার পছন্দ হয়। পরে ওই তরুণীকে দেশে ফিরিয়ে এনে চাঁদপুরের মতলবে তাকে বাড়ি করে দেন আজম। এছাড়া তার নামে-বেনামে রাজধানীতে রয়েছে বেশ কয়েকটি ফ্ল্যাট। পাশাপাশি ফটিকছড়িতেও আজমের সম্পদ রয়েছে। অবৈধভাবে আয় করা অর্থে এসব সম্পদ গড়ে তুলেছেন আজম। তার বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং মামলার প্রস্তুতি চলছে। 

ডিআইজি ইমতিয়াজ আহমেদ বণিক বার্তাকে বলেন, গত আট বছরে এভাবে চাকরির নামে দেশের হাজারেরও বেশি তরুণী-কিশোরীকে দুবাইয়ে পাচার এবং তাদের দেহ ব্যবসায় জড়াতে বাধ্য করেছে আন্তর্জাতিক নারী পাচারকারী চক্রের সদস্যরা। এসব নারীকে দুটি বিদেশী এয়ারলাইনস এজেন্সির মাধ্যমে দুবাইয়ে পাঠানো হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন