নাইকোর ছেড়ে দেয়া ছাতকে গ্যাস অনুসন্ধান করবে বাপেক্স

জেসমিন মলি

কানাডীয় কোম্পানি নাইকোর ছেড়ে দেয়া ছাতকে গ্যাস অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স) নাইকোর বিরুদ্ধে মামলায় বিজয়ের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের পরিত্যক্ত ওই এলাকায় থ্রিডি সিসমিক সার্ভের জন্য নতুন প্রকল্প প্রস্তাব নিয়ে কাজ করছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান। ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে এসব ব্লকে সিসমিক সার্ভে পরিচালনার জন্য সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ছাতকসহ অন্যান্য কয়েকটি স্থানে থ্রিডি সিসমিক সার্ভের সম্ভাব্যতা পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। ১২, ১৩, ১৪ নম্বর ব্লক সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড (এসজিএফএল) বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেডের (বিজিএফসিএল) নামে বরাদ্দ থাকায় অনুসন্ধানকাজে সমস্যা হয়েছে। বাপেক্সের পরিচালনা পর্ষদের মাধ্যমে এসব ব্লক বাপেক্সের অনুকূলে বরাদ্দ প্রদানের জন্য কাজ চলছে।

সুনামগঞ্জ জেলায় ১২ নম্বর ব্লকে ছাতক গ্যাসক্ষেত্রে সর্বশেষ কাজ করেছে নাইকো। গ্যাস ব্লো আউটের কারণে নাইকোর কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায় ১৩ বছর আগে। জ্বালানি খনিজ সম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বিনিয়োগ বিরোধ নিষ্পত্তিসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সালিসি আদালতে (ইকসিড) -সংক্রান্ত মামলার রায় বাংলাদেশের পক্ষেই এসেছে। ইকসিড রায়ে বলেছে, বিস্ফোরণের দায় নাইকোকেই নিতে হবে এবং নাইকো বাংলাদেশকে ক্ষতিপূরণ প্রদান করবে। ক্ষতির বিষয়টি চূড়ান্ত করতে আগামী সেপ্টেম্বর মাসে আবার শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে, তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে সেটি পিছিয়ে যেতে পারে।

ছাতকের গ্যাস কাঠামোর মধ্যে একটি ফাটল রয়েছে। তাই এটি ছাতক পূর্ব ছাতক পশ্চিম নামে দুই ভাগে বিভক্ত। ১৯৫৯ সালে পাকিস্তান পেট্রোলিয়াম ৭৫ কিলোমিটার সিসমিক সার্ভে করে ছাতক পশ্চিমে গ্যাসের সন্ধান পায়। এরপর ১৯৬০ সালে এখানে প্রথম কূপ খনন করা হয়। হাজার ১৩৫ মিটার পর্যন্ত খোঁড়া হয়। এর মধ্যে হাজার ৯০ মিটার থেকে হাজার ৯৭৫ মিটারের মধ্যে নয়টি গ্যাসসমৃদ্ধ স্তরের (স্যান্ডস্টন) সন্ধান মেলে। তখনকার তথ্যমতে, এখানে ২৬৫ বিলিয়ন ঘনফুট (বিসিএফ) গ্যাস রয়েছে। এর মধ্যে ২৬ বিসিএফ তোলা হয়েছে। ছাতক পূর্বে এখনো কোনো অনুসন্ধান কূপ খনন করা হয়নি। এদিকে, অস্ট্রেলিয়ান কোম্পানি ওয়েলড্রিলের ১৯৯১ সালের জরিপ মতে, ছাতকে সাত টিসিএফ গ্যাস রয়েছে।

১৯৬০ সালে ছাতক- নামে এই কূপ থেকে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গ্যাস তোলা শুরু হয়। এখান থেকে দৈনিক ৪০ লাখ ঘনফুট গ্যাস তোলা হতো। এই গ্যাস ছাতক সিমেন্ট পেপার মিলে সরবরাহ করা হতো। ১৯৮৪ সালের পর গ্যাস উত্তোলন বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৮৫ সালে ওয়ার্কওভার করা হলেও তা সফল হয়নি। এরপর গ্যাসক্ষেত্রটিতে আর অনুসন্ধানকাজ চালানো হয়নি। পরে ১৯৯৮ সালে নাইকো ছাতকসহ কয়েকটি গ্যাসক্ষেত্র প্রান্তিক (পরিত্যক্ত) দেখিয়ে গ্যাস অনুসন্ধানের প্রস্তাব দেয়। ১৯৯৯ সালে নাইকো বাপেক্স একটি যৌথ সমীক্ষা চালায়। সে সময় বাপেক্স ছাতক পূর্ব গ্যাসক্ষেত্রকে প্রান্তিক ঘোষণার বিষয়ে আপত্তি জানায়। ২০০১ সালের পর ছাতক পূর্ব পশ্চিমকে একটি গ্যাসক্ষেত্র দেখিয়ে পুরো গ্যাসক্ষেত্র পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। ২০০৩ সালের ১৬ অক্টোবর নাইকো বাপেক্সের মধ্যে জয়েন্টভেঞ্চার চুক্তি গ্যাস ক্রয় চুক্তি সই হয়। ২০০৫ সালে ছাতক পশ্চিমে টেংরাটিলায় একটি কূপ খনন করতে গিয়ে দুই দফা বিস্ফোরণ ঘটে। এতে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পুড়ে যায় বলে ধারণা করা হয়। এর পর থেকে পেট্রোবাংলা নাইকোর কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করে আসছে। বিষয়ে স্থানীয় আদালতে ২০০৭ সালে একটি মামলা দায়ের করে পেট্রোবাংলা। আর নাইকো ইকসিডে গিয়ে ক্ষতিপূরণ না দেয়ার জন্য একাধিক মামলা করে। তবে ইকসিডের মামলার রায় বাংলাদেশের পক্ষে এসেছে।

বাপেক্সের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ছাতক খুবই সম্ভাবনাময় গ্যাসক্ষেত্র। সুরমা বেসিনে অবস্থিত গ্যাসক্ষেত্রে বড় মজুদ রয়েছে বলে ধারণা। নাইকোর গ্যাস বিস্ফোরণে দুর্ঘটনায় ক্ষতি হয়েছে মাটির ওপরের স্তরে। তবে মাটির অনেক গভীরে পুরো গ্যাস কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। ফলে এখানে গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন