অরক্ষিত বিজেএমসির ২৫ হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি

যথাযথ নিরীক্ষাপূর্বক রক্ষায় পদক্ষেপ নিক কর্তৃপক্ষ

সরকারের ঘোষণার পর রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোয় থাকা সম্পদ সম্পত্তি অরক্ষিত পড়ে রয়েছে। এর আর্থিক মূল্য সরকারি প্রতিবেদন অনুযায়ী ২৫ হাজার কোটি টাকা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকৃত মূল্য আরো বেশি হবে; যার মধ্যে জমি, যন্ত্রপাতি থেকে শুরু করে উৎপাদিত পণ্যও রয়েছে। বিজেএমসির পরিচালনা পর্ষদের ২০১৬ সালের ২৮ মার্চ অনুষ্ঠিত পর্ষদ সভার সিদ্ধান্তের আলোকে ভ্যালুয়ার নিয়োগ করে পাটকলগুলোর স্থায়ী সম্পত্তির পুনর্মূল্যায়ন করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। সে নির্দেশনা অনুযায়ী ভ্যালুয়ার মিলগুলোর স্থায়ী সম্পত্তির পুনর্মূল্যায়ন করেছেন। সব মিলের পুনর্মূল্যায়ন প্রতিবেদন একীভূত করে একটি সমন্বিত প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে। তথ্য-উপাত্তে স্থায়ী সম্পদের পুনর্মূল্যায়নকৃত টাকার অংক উল্লেখ করেছে বিজেএমসি। এতে প্রতীয়মান হয় বিপুল সম্পদের অধিকারী হয়েও বিজেএমসি শুধু দুর্বল ব্যবস্থাপনা পুরনো যন্ত্রপাতির কারণে লোকসান গুনেছে বছরের পর বছর। সরকারি সম্পত্তি অরক্ষিত থাকার খবরটি নতুন নয়। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা রাষ্ট্রায়ত্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সম্পদ সম্পত্তি বিনষ্টসহ দখলের প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয় নিয়মিত। এসব বন্ধে কারো কোনো আগ্রহ দেখা যায় না। সরকারি সম্পদ সম্পত্তির অপচয় কোনো অবস্থাতেই কাম্য নয়। কারণ এগুলো জনগণের, তাদের পক্ষ থেকে সরকার শুধু এর ব্যবস্থাপনা করে। পাটকল বিক্রি বা বেসরকারি বা পিপিপির মাধ্যমে পরিচালনার অতীত অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। সরকারি সম্পদ সম্পত্তি হাতিয়ে নিয়ে ফেলে রাখার উদাহরণও রয়েছে আমাদের সামনে। পাটকল বন্ধ বা বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়ার সরকারি সিদ্ধান্তের সুযোগ নিয়ে এগুলো যেন লুটপাট না হয়, তা নিশ্চিতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে নিয়োজিত করা যেতে পারে।

এর আগে সংস্কার করে জুট মিল চালু করতে হবে শর্ত দিয়ে যেসব জুট মিল ব্যক্তিমালিকানায় ছেড়ে দেয়া হয়েছিল, সেগুলো কিন্তু চালু করা হয়নি। যারা শর্ত  মেনে মিলগুলো নিয়েছিলেন, তারা সেই শর্ত পালন করেননি, ভঙ্গ করেছেন। এমনকি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পাওনা পরিশোধের জন্য বারবার চিঠি দেয়া সত্ত্বেও তা পরিশোধ করেননি। উপরন্তু, মিলের যাবতীয় মেশিনারি স্থাপনা সরকারের অজান্তে বিক্রি করে দিয়েছেন। তাই বেসরকারি খাতে দেয়া চারটি পাটকল ফিরিয়েও নিয়েছে সরকার। অবস্থায় সদ্য বন্ধ হওয়া ২৫টি জুট মিলের ভবিষ্যৎ পিপিপির বেসরকারি অংশের মালিকরা শর্ত ভঙ্গ করবেন না, তার নিশ্চয়তা কী? রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো দীর্ঘদিন ধরেই লোকসান করে আসছিল। লোকসানের কারণগুলোও বহুদিন ধরেই জানা। বিভিন্ন সময়ে লোকসানের কারণ হিসেবে দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা, সমন্বয়হীনতা, পাট ক্রয়ে সিন্ডিকেটের প্রভাব, আধুনিকায়নে গাফিলতি, বাজারজাতে উদ্যোগের অভাবএগুলো চিহ্নিত করা হলেও ব্যাপারে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। বরং লোকসানের অজুহাত দেখিয়ে বিভিন্ন সময় শ্রমিকদের বকেয়া বেতন দেয়া হয়নি, পেনশনের অর্থ আটকে দেয়া হয়েছে এবং পাটকল বন্ধ করে তা বেসরকারীকরণ করা হয়েছে। এত দিন ধরে যে পরিকল্পনা করা হয়েছিল, তা বাস্তবায়ন করা হয়ে ওঠেনি।

সরকারের সম্পদ সম্পত্তির নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইন রয়েছে, আছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। পাটকলের সম্পত্তি সম্পদ রক্ষায় সরকার যথাযথ উদ্যোগ নেবে বলে প্রত্যাশা। কারখানাগুলোয় পতিত পড়ে থাকা জমি ব্যবহারের মাধ্যমেই প্রতি বছর বিপুল অর্থ আয় করা সম্ভব। কিন্তু সেটি করা হয়নি পরিকল্পনার অভাবে। এখন সময় এসেছে সারা দেশে সরকারি কারখানার মোট সম্পদ সম্পত্তির পরিমাণ এবং তার আর্থিক মূল্য সঠিকভাবে হিসাব করার। শুধু হিসাব নয়, এসবের সুষ্ঠু ব্যবহারও নিশ্চিত করতে হবে। এতে সরকারি প্রতিষ্ঠানের লোকসানের পরিমাণও কমে আসবে। যেসব সম্পদের আর প্রয়োজন নেই, সেগুলো বিক্রি করে দেয়ার ব্যবস্থাও রাখা চাই। সরকারি সম্পত্তি সম্পদ রক্ষায় আইনের সংশোধন প্রয়োজন হলে সেটিও করতে হবে। সম্পদ সম্পত্তি ব্যবহারে সরকারের অদক্ষতা দুর্বলতার কারণে প্রতি বছর বাজেট থেকে বিপুল অর্থ এক্ষেত্রে বরাদ্দ দিতে হচ্ছে। প্রথমেই সংস্কার আনতে হবে ব্যবস্থাপনায়। সরকারের করপোরেশনগুলোয় শুদ্ধি অভিযান চালাতে হবে। দুর্নীতিমুক্ত করে গড়ে তুলতে হবে এগুলো। একই সঙ্গে দক্ষ লোকের সন্নিবেশ ঘটানো জরুরি। ভারতেও সরকারের সম্পদ সম্পত্তি অরক্ষিত থাকার নজির ছিল। দেশটির রাজ্য কেন্দ্রীয় সরকার বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে সরকারি সম্পত্তি রক্ষায় পদক্ষেপ নিয়েছে। আমাদেরও একই পথ অনুসরণ করতে হবে। রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর সম্পদ সম্পত্তির সঠিক পরিমাণ এবং আর্থিক মূল্য হিসাবপূর্বক তা রক্ষায় কর্তৃপক্ষ কার্যকর উদ্যোগ নেবে বলে আমাদের প্রত্যাশা। একই সঙ্গে সেসবের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করাও জরুরি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন