মহামারী তদন্তে বন্যপ্রাণী বাণিজ্যের দিকে নজর দেয়ার আহ্বান গবেষকদের

বণিক বার্তা ডেস্ক

নভেল করোনাভাইরাস মহামারীটির উৎস উদঘাটন প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে চীনের বন্যপ্রাণী বাণিজ্য গভীরভাবে তদন্ত করা উচিত বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। মহামারীটির উৎস অনুসন্ধানে একটি বৃহত্তর আন্তর্জাতিক গবেষণা দলের পরিকল্পনা করার আগে সপ্তাহান্তে বিজ্ঞানীদের চীনে পাঠাচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এর পরই গবেষকদের পক্ষ থেকে চীনের বন্যপ্রাণী বাণিজ্যের দিকে মনোনিবেশ করার আহ্বান জানানো হয়।

গত সপ্তাহে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ডব্লিউএইচওর মহাপরিচালক টেড্রোস অ্যাডহ্যানম গেব্রেইসুস বলেছিলেন, এই মিশনের উদ্দেশ্য হলো কভিড-১৯-এর উৎস হিসেবে প্রাণীর ভূমিকা আরো ভালোভাবে বোঝা এবং কীভাবে রোগটি প্রাণী মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হলো তা নির্ধারণ করা।

ডব্লিউএইচওর জরুরি প্রোগ্রামের পরিচালক মাইকেল রায়ান বলেছেন, কী ধরনের তদন্তের প্রয়োজন এবং সেটা কোথায় তা নির্ধারণের জন্য দলটি চীনের কর্মকর্তা বিজ্ঞানীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবে। তদন্ত শুরুর ভালো জায়গা হলো উহান, যেখানে প্রথম অস্বাভাবিক নিউমোনিয়ার সংক্রমণ দেখা দিয়েছিল।

গবেষকরা বলেছেন, চীনের আইনি অবৈধ উভয় বন্যপ্রাণী বাণিজ্যের দিকেই তদন্তের ফোকাস হওয়া উচিত। সেখানে বন্যপ্রাণী শিকারের অঞ্চল, সংরক্ষণাগার, খামার বাজারসহ বন্যপ্রাণী বাণিজ্যের সবদিকে মনোনিবেশ করতে হবে।

হ্যানয়ের ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন সোসাইটি ভিয়েতনামের বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞানী অ্যালিস ল্যাটিন বলেন, বন্যপ্রাণী সরবরাহ শৃঙ্খলের সব অংশের তদন্ত করা দরকার। আমাদের এমন কোনো বন্য বা খামারে পালনকৃত বন্যপ্রাণী প্রজাতির পরীক্ষা করা দরকার, যা চীনের মানুষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ এবং ঘন ঘন যোগাযোগ রয়েছে।

বেশির ভাগ গবেষক একমত হয়েছেন কভিড-১৯ ভাইরাসটি সম্ভবত বাদুড় থেকে এসেছে। তবে এটা মানুষের কাছে পৌঁছাতে যে পথটি নিয়েছে তা এখনো রহস্য হিসেবে রয়ে গেছে। ভাইরাসটি সরাসরি বাদুড় থেকে মানুষে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে এবং সময়ের সঙ্গে বর্তমান মহামারীতে রূপান্তরিত হতে পারে বা এখানে মধ্যবর্তী কোনো প্রাণীও যুক্ত থাকতে পারে। বন্যপ্রাণী বাণিজ্যে অনেক প্রাণী একে অন্যের এবং মানুষের সংস্পর্শে আসে, এটার মধ্য দিয়ে ভাইরাসটি এক প্রজাতি থেকে অন্য প্রজাতির মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

মহামারী শুরুর দিকে ভাইরাসটির উৎস হিসেবে বনরুইকে বিবেচনা করা হয়েছিল, ২০১৭ থেকে ১৯ সালের মধ্যে দক্ষিণ চীনে জব্দ করা প্রাণীগুলোতে বিজ্ঞানীরা করোনাভাইরাস সম্পর্কিত ভাইরাস শনাক্ত করেছিলেন। বনরুইয়ে পাওয়া করোনাভাইরাস কভিড-১৯-এর সরাসরি পূর্বপুরুষের তুলনায় আলাদা ছিল। তবে গবেষকরা বলেছেন, কখন কীভাবে প্রাণীগুলো সংক্রমিত হয়েছিল, তা কভিড-১৯ ভাইরাসের উৎস সম্পর্কে কোনো সূত্র সরবরাহ করতে পারে।

জীববিজ্ঞানী অ্যালিস ল্যাটিন বলেন, ডব্লিউএইচওর তদন্তে দক্ষিণ চীনের অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণী, বিশেষ করে ছোট মাংসাশী প্রাণীদের বাণিজ্যের দিকে নজর দেয়া উচিত। আরেকটি অগ্রাধিকার হলো চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ইউনানের বাদুড়। অঞ্চলটি করোনাভাইরাসের হটস্পট, সেখানে কভিড-১৯-এর নিকটতম ভাইরাস পাওয়া গেছে।

মহামারীটির উৎস বিষয়টি চীনে অত্যন্ত সংবেদনশীল বিষয়ে পরিণত হয়েছে এবং গবেষকরা তাদের গবেষণা প্রকাশের জন্য দেশটির সরকারের অনুমোদনের প্রয়োজন হবে। দেশটির বিজ্ঞানীরা বলছেন, কভিড-১৯-এর জন্য বাদুড় অন্যান্য কয়েকটি প্রাণীকে পরীক্ষা করা হয়েছে, তবে কোনো ফল প্রকাশ করা হয়নি।

নিউইয়র্ক সিটির ইকোহেলথ অ্যালায়েন্সের সভাপতি পিটার দাশাক বলেছেন, এটা অত্যন্ত সংবেদনশীল রাজনৈতিক ইস্যুতে চীনা বিজ্ঞানী জনস্বাস্থ্য নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগের প্রথম পক্ষপাতহীন প্রচেষ্টা হতে চলেছে।

নেচার ডটকম

 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন