অনলাইন বৈঠক

করোনা পরিস্থিতিতে নারীর কাজের চ্যালেঞ্জ ও জেন্ডার বাজেটিং

গত ২৩ জুন বণিক বার্তা মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগেকরোনা পরিস্থিতিতে নারীর কাজের চ্যালেঞ্জ জেন্ডার বাজেটিংশীর্ষক এক অনলাইন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় ভার্চুয়াল প্লাটফরমে। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী সম্মানিত আলোচকদের বক্তব্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ  ক্রোড়পত্রে প্রকাশ হলো। আলোচনাটি ইউকেএইডের সহায়তায় অনুষ্ঠিত হয়।




দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

সম্পাদক, বণিক বার্তা

বাংলাদেশ প্রায় ৩০০ বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির একটি দেশ। অর্থনীতি দুটি মূল ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। কৃষি পোশাক শিল্প খাত। কৃষি খাতে অর্ধেকেরও বেশি নারী কর্মী কাজ করেন। আর পোশাক খাতে এখন ৮০ শতাংশের বেশি নারী কর্মী নিয়োজিত। দেশের অর্থনীতির দুটো মূল স্তম্ভেই বড় ভূমিকায় রয়েছেন নারীরা। আমরা দেখছি যে কভিড-১৯ মহামারী স্বাস্থ্যের পাশাপাশি মানুষের কর্মসংস্থানে বড় আঘাত করছে। সারা বিশ্বেই বিপুলসংখ্যক মানুষ কাজ হারাচ্ছে বা হারাবে। বাংলাদেশেও এরই মধ্যে এটি শুরু হয়েছে। পোশাক খাতে এরই মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক প্রতিষ্ঠান কর্মসংস্থান সংকুচিত করেছে। অনেক নারীই কর্মচ্যুত হচ্ছেন। কৃষিতেও বিপুলসংখ্যক নারী কাজ করেন। তাদের সময়ও ভালো যাচ্ছে না। বলা যেতে পারে, কর্মজগতে নারীদের জন্য বিশেষ ধরনের নাজুকতা সৃষ্টি হয়েছে। আমরা এটিও জানি যে স্বাস্থ্যের পাশাপাশি এসএমই প্রতিষ্ঠান তথা অনানুষ্ঠানিক চাকরিতে বিরাটসংখ্যক নারী যুক্ত; উদ্যোক্তা হিসেবে যুক্ত, কর্মী হিসেবে যুক্ত। কিন্তু কভিড-১৯ আমাদের সামগ্রিক তত্পরতায় এক ধরনের ব্যাঘাত ঘটিয়েছে। স্বাস্থ্যের বাইরে, পরিবেশের বাইরে নারীদের নাজুকতা এখন ব্যাপকভাবে উন্মোচিত। স্বাভাবিকভাবে আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম এবার জেন্ডার বাজেট থাকবে। কয়েক বছর ধরে জেন্ডার বাজেটিংয়ের ওপর একটি অধ্যায় সংযোজিত হয়ে আসছে। এবার আমরা তেমন কিছু দেখিনি। এই প্রেক্ষাপটে কভিড-১৯-পরবর্তী যে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে, সেখানে কীভাবে নারীর নাজুকতা দূর করা যায়, বিশেষ পদক্ষেপ নেয়া যায়, সেসব বিষয়ে দিকনির্দেশনা আশা করি।


শাহীন আনাম

নির্বাহী পরিচালক

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন

মর্যাদায় গড়ি সমতা স্লোগানের মধ্য দিয়ে আমরা দীর্ঘদিন ধরে একটি প্রচারাভিযান চালিয়ে এসেছি। কেন এই স্লোগান? কারণ নারী পরিবারে এবং সমাজে একটা যে অসমতার মধ্যে রয়েছেন, তা যদি দূর করতে চাই তাহলে সমাজে সংসারে তার মর্যাদা বাড়াতে হবে। আমাদের উপলব্ধি হলো সমাজে, সংসারে বা রাষ্ট্রে নারীরা যতটা অবদান রাখেন ততটা স্বীকৃতি পান না।। সেজন্য আমরা অনেকদিন ধরে অ্যাডভোকেসি করছি কীভাবে নারীর কাজের একটা আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়া যায়, যাতে সমাজ বুঝতে পারে নারী আসলে কতটা অবদান রাখছেন। এই স্বীকৃতি পেলে সমাজে-সংসারে তার মর্যাদা বাড়বে। কভিড পরিস্থিতি এখন আমাদের প্রত্যেকের জীবনে একটি বড় দুর্যোগ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। কিন্তু প্রান্তিক নারী, শিশু, প্রতিবন্ধী মানুষ কভিড পরিস্থিতিতে আরো অন্যভাবে অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হচ্ছে। তাই আমরা মনে করি, এবারের বাজেটকে সেই আলোকে সাজাতে হবে, যাতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, প্রান্তিক নারী এবং ঘরে কাজ করা নারীদের জন্য ইতিবাচক সুফল বয়ে নিয়ে আসে। দেখা যাচ্ছে, সব কাজের ভার আজ নারীর ওপরে। বলা হয়, এখন লকডাউন চলছে। নারীরা সবসময় লকডাউনেই থাকেন। তারা সবসময় বাড়িতে কাজ করে যান। তাদের জন্য লকডাউন নতুন কিছু নয়। কিন্তু এখন তাদের সঙ্গে অন্যরাও লকডাউনে আছে। ফলে তাদের কাজের ভার বেড়ে গেছে এবং বেড়েছে নির্যাতন। তাদের একটু স্বস্তি দেয়ার জন্য আমরা কী ব্যবস্থা নিয়েছি আমাদের বাজেটে। আমরা সম্প্রতি প্রায় ৫০ হাজার নারীর সঙ্গে কথা বলার ভিত্তিতে একটি জরিপ করেছি। যেখানে দেখা গেছে এখন তাদের প্রতি পারিবারিক সহিংসতা অনেক বেড়ে গেছে। এমনিতেই তার ওপর কাজের ভার বেশি, এর মধ্যে তাকে নির্যাতন করা হলে সেটি অত্যন্ত দুঃখের লজ্জার বিষয়। তাই আমরা আজকে বলতে চাই, কভিড যে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে, সেসব বিষয় সামনে রেখে আমরা যেন কেয়ার ইকোনমির ওপর বিশাল অবদান রাখা নারীদের কিছুটা স্বস্তি এনে দিতে পারি। এই চেষ্টা করতে হবে, যাতে তারা একটি মর্যাদাসম্পন্ন জীবনযাপন করতে পারেন।


বনশ্রী মিত্র নিয়োগী

জেন্ডার অ্যাডভাইজার

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনসহ অনেক সংগঠনের পক্ষ থেকে আমরা দীর্ঘদিন ধরে নারীর অস্বীকৃত কাজগুলোর স্বীকৃতি নিয়ে কথা বলছি। কভিড-১৯ পরিস্থিতিতে নারীর চ্যালেঞ্জ কী এবং জেন্ডার রেসপন্সিভ বাজেটের এখানে কোনো মিসিং লিংক আছে কিনা, সেটি আমরা দেখতে চাই। কয়েক মাস ধরে নারীরা নিজেদের কাজ নিয়ে যে বিরূপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন, তার প্রতিফলন আমরা জেন্ডার রেসপন্সিভ বাজেটে দেখতে পাচ্ছি কিনা, এর একটা ব্যাখ্যা প্রয়োজন। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে নারীর কাজে একটা বহুমুখী লৈঙ্গিক প্রভাব আমরা দেখতে পাচ্ছি। প্রথমত, এটিকে আমি পুরো সমাজ ব্যবস্থা অর্থনীতিতে একটি অভিঘাত (শক) হিসেবে দেখছি। অনেক নারী কাজ হারিয়েছেন। এক্ষেত্রে আমরা কেবল পোশাক খাতের কথা বলি, কিন্তু বিশাল অনানুষ্ঠানিক খাতে বিপুলসংখ্যক নারী যে কাজ হারিয়েছেন, তার কথা খুব একটা বলি না। আমরা যারা সরকারি প্রতিষ্ঠানে, ব্যাংকে কিংবা এনজিওতে কাজ করি, তারা সবসময়ই একটা ওয়ার্ক লাইফ ব্যালান্স করে চলছি। আমরা সারাক্ষণ অফিসের কাজ করছি, একই সঙ্গে পরিবার সামলাচ্ছি। জায়গাটিও আমরা কখনো আলোচনায় নিয়ে আসি না। সাম্প্রতিক সময়ে নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনা বেড়েছে। এসব ঘটনার বিরুদ্ধে আমরা তৃণমূল কিংবা জাতীয় পর্যায় কোথাও প্রতিবাদ করতে পারছি না। সামগ্রিকভাবে কভিড পরিস্থিতিতে কেবল স্বাস্থ্য সমস্যা নয়, এখানে একটি বহুমুখী পরিণামও আছে। এসব বিবেচনায় নিয়ে আমরা বিষয়টি দেখতে চাই। আমরা দেখি যে যেকোনো মানবিক সংকট দুর্যোগে গভীরে প্রোথিত অসমতা-বৈষম্য সবসময় বেড়ে যায়। আমি জোর দিয়ে বলতে চাই, আমরা রাজনৈতিক অর্থনীতির ক্ষেত্রে একটি স্ববিরোধ দেখি। অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার গতিসঞ্চারে নারীরা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। অথচ নারীর এই কাজগুলো জাতীয় আয়ের হিসাবের বাইরে এবং এর কোনো স্বীকৃতিও নেই। এর রাজনৈতিক অর্থনীতির ক্ষেত্রে এটিকে আমি একটি স্ববিরোধ হিসেবে দেখছি। অবস্থার বদল হওয়া জরুরি। পৃথিবী পাল্টাচ্ছে, আমাদের কাজের ধরন পাল্টাচ্ছে। এটা যে কভিড সময়ে পাল্টাচ্ছে তা নয়, কয়েক বছর ধরে পাল্টাচ্ছে। কিন্তু তার পরেও ঘরের কাজে আমরা নারীর মুখটাই দেখি।

নারীর হিসাবের বাইরে থাকা কাজগুলো একটা অর্থনীতিতে সঞ্জীবনী শক্তি (ফুয়েল) হিসেবে কাজ করে। অথচ ঘরের কাজগুলোর কারণে তারা অধস্তন অবস্থানে থাকেন। বিভিন্ন অধিকার থেকে তারা বঞ্চিত হন। সময়, শিক্ষা, দক্ষতা, সমান শ্রম অংশগ্রহণপ্রতিটি জায়গায় নারী বঞ্চিত হচ্ছেন। আমি মনে করি, আমরা যারা প্রেশার গ্রুপ হিসেবে কাজ করি, আমাদের জায়গায় একটা পরিবর্তন আনতে হবে। বিষয়টি পুনর্চিন্তন করতে হবে। সরকারকে তো করতেই হবে। মূলকথা হলো, একটা স্পেস সৃষ্টি করা যায় কিনা, যেখানে সুযোগ থাকবে, অপশন তৈরি হবে এবং নারীরা নিজের কাজ বেছে নিতে পারবেন। নারীর অধিকার নিশ্চিতের ক্ষেত্রে কাজের পছন্দটা খুব জরুরি। এটা গুরুত্বপূর্ণ সময়। এসব প্রতিবন্ধকতা আগেও ছিল, কভিড পরিস্থিতি এটাকে আরো চ্যালেঞ্জিং করে তুলেছে। আমি মনে করি, স্যাটেলাইট সিস্টেম অব অ্যাকাউন্টস দিয়ে জাতীয় আয়ে নারীর কাজের অন্তর্ভুক্তি এর স্বীকৃতি নিশ্চিত করার এখনই সুবর্ণ সময়। অর্থনৈতিক ধাক্কা সামলানো এবং নারীর প্রতিনিধিত্ব আরো জোরদার করতে পারছে কিনা, বাজেটে জায়গাটিই দেখতে চাই, শুনতে চাই।


সেলিম জাহান

সাবেক পরিচালক, জাতিসংঘের মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন কার্যালয়

যেকোনো সংকটে সবসময় দেখা গেছে নারীর ওপর চাপ বেশি পড়েছে। নারী সেই সংকটের শিকারও হয়েছেন এবং নারীর ওপর নেতিবাচক প্রভাবও অনেক বেশি পড়েছে। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতেও এর কোনো ব্যত্যয় নেই। প্রথমে বলা দরকার, ‘কাজবলতে আমরা যেন শুধুবাইরের কাজনা বুঝি। কারণ নারীর কাজের মধ্যে ঘরের কাজও রয়েছে, বাইরের কাজও রয়েছে। এখন যেহেতু সবাই ঘরে অবস্থান করছেন, স্বাভাবিকভাবে সেখানে কাজের চাপ নারীর ওপর বেড়ে গেছে। সহিংসতাও বেড়েছে বলে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের জরিপে উঠে এসেছে। কিন্তু নারীর ঘরের কাজকে কেন্দ্র করে যে সহিংসতা, তা যেন আমরা ভুলে না যাই। এখন বাইরের কাজ বললে তিনটি ক্ষেত্রে আমার মনে হয় দৃষ্টি দেয়া দরকার। এক. প্রাতিষ্ঠানিক খাতের কাজ। দুই. অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের কাজ। তিন. সেবা খাতের কাজ। এখন প্রাতিষ্ঠানিক খাতের কাজে সবাই বলছেন যেহেতু নারী পোশাক শিল্পে অনেক বেশি কর্মরত, অনেক বেশি সংখ্যায় তারা সেখানে কাজ করছেন এবং যেহেতু পোশাক শিল্প এই করোনা পরিস্থিতিতে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত হবে, যেহেতু বাইরে আমাদের পোশাকের চাহিদা কমে যাবে, স্বাভাবিকভাবে সেখানে কর্মরত নারী কর্মীদের ওপর একটা চাপ পড়বে। এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) বলছে যে পোশাক শিল্পে কাজ করা ২০ লাখ নারী সেখানে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত হতে পারেন। আরেকটি দিক হলো, প্রাতিষ্ঠানিক জায়গায় যে নারীরা কাজ করছেন এবং তাদের যদি কাজে আবার ফিরিয়ে আনতে হয় তাহলে আনুষঙ্গিক যেসব সেবা-সুবিধা প্রয়োজন, যেগুলো আগে ছিল, সেগুলো পরিপূরণ করতে হবে। প্রাতিষ্ঠানিক শিল্পের ক্ষেত্রে আমরা সবসময় দেখেছি যখন কোনো সংকট হয়, তখন নারীদের প্রথম ছাঁটাই করা হয়; আবার যখন সংকট থেকে উত্তরণ ঘটে তখন সবার শেষে নারীকে সেখানে কর্মনিয়োজন করা হয়। বৃত্তটি ভাঙতে হবে। আমার মনে হয়, প্রাতিষ্ঠানিক শিল্পে পুরোদমে কাজ শুরু হলে নারী কর্মীদের সব রকম সুবিধা দিতে হবে। সন্তান রাখার ক্ষেত্রে সহায়তা, অন্য সহায়তা দিয়ে তাদের কাজে নিয়ে আসতে হবে। কর্মসংস্থানের সঙ্গে সঙ্গে শুধু একটি কথা বলতে চাই, আমরা স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে উত্তরণ ঘটাব এবং কভিড-১৯-পরবর্তী সময়ে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বহু কিছুই করা হবে। সেক্ষেত্রে নারীর যেসব স্বাস্থ্য চাহিদা আছে, সেটি যেন আমরা ভুলে না যাই। বিশেষ করে প্রজনন স্বাস্থ্য থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যসম্পর্কিত অন্যান্য বিষয় যেন সামনে আনি।

এখন আসি অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের প্রসঙ্গে। এখানে কিন্তু নারীর অবস্থান সবচেয়ে বেশি। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের ক্ষুদ্র উদ্যোগে, ক্ষুদ্র শিল্পে, ক্ষুদ্র ব্যবসায় একটা বিরাটসংখ্যক নারী নিয়োজিত। স্বাভাবিকভাবেই সংকট উত্তরণের পরে দেখা যাবে এবং আগেও দেখা গেছে, ঋণের সুবিধা অন্য সুবিধা পুরুষের ক্ষেত্রে যতখানি যায়, নারীর ক্ষেত্রে ততখানি যায় না। অতএব, এই উত্তরণের পরে যখন আবার অর্থনীতিতে কর্মকাণ্ড অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে আসবে তখন এসব নারী তাদের অবদানের কথাটি যেন ভুলে না যাই। এটি খুব স্বাভাবিক যে সবসময় সুযোগটা (ঋণের সুবিধা, নানা উপকরণের সুবিধা) পুরুষরা যতখানি নিতে পারেন, নারীরা নিতে পারেন না। সেগুলো তাকে দিতে হবে।

পরিশেষে সেবা খাত প্রসঙ্গে আসি। ঘরের বাইরের সেবা খাতেও একটি বিরাট অংশ নারী কাজ করেন। সেবিকা হিসেবে কাজ করছেন, অন্য জায়গায় কাজ করছেন, তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি কিন্তু আমাদের দেখতে হবে। এটি দেখতে হবে কারণে যে কভিড-১৯-এর সংক্রমণ শীর্ষবিন্দুতে উঠে যদি একবার নেমে আসে, তারপর আবারো একটা দ্বিতীয় ঢেউ আসতে পারে। সেক্ষেত্রে যেসব নারী সেবা খাতে আছেন, তাদের কথা যেন আমরা ভুলে না যাই। দীর্ঘমেয়াদে তিনটি কথা বলি পর্যন্ত যা বলা হয়েছে তার পরিপ্রেক্ষিতে। একটি কথা হলো, ঘরের অভ্যন্তরীণ কাজের স্বীকৃতি শুধু প্রতীকী ব্যবস্থা কিন্তু নয়, যখনই আমরা নীতিমালা প্রণয়ন করব, যখনই আমরা সংস্কারের কথা বলব, সংশ্লিষ্ট তথ্য-উপাত্তগুলো অনেক বেশি প্রয়োজন। এটা নিয়ে অনেক কাজ হয়েছে। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন সহযোগী সংস্থা কাজ করেছে। সেই কাজের ভিত্তিতে অনেক গবেষণা হয়েছে, অনেক গবেষক গবেষণা করেছেন। আমার মনে হয়, এর একটা প্রাতিষ্ঠানিক-আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি প্রয়োজন। শুধু প্রতীকী হিসেবে নয়, নীতিমালা যারা নির্ধারণ করবেন, তাদের সাহায্যের জন্য। দ্বিতীয় কথা হলো, আমরা সবসময় জেন্ডার বাজেটিং নিয়ে কথা বলে থাকি। নিশ্চিতভাবে জেন্ডার বাজেটিং একটি আবশ্যিক শর্ত, কিন্তু পর্যাপ্ত নয়। আমার মনে হয়, সামগ্রিক-সামষ্টিক নীতিমালা, খাতওয়ারি নীতিমালা নারীবান্ধব কিনা এবং তাদের সুবিধা করে দেয় কিনা, সেটি দেখতে হবে। যেমন আমাদের করনীতি নারীর বিপক্ষে যায়, সেটি আমাদের দেখতে হবে। আমাদের বাণিজ্যনীতির সুফল সাধারণ নারী, ক্ষুদ্র নারী ব্যবসায়ী পান কিনা, সেটি দেখতে হবে। সুতরাং আমরা যেন কখনো মনে না করি যে জেন্ডার বাজেটিং করার ফলেই নারীদের কাজের ক্ষেত্রে, তাদের অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে সবকিছু হয়ে গেছে। জেন্ডার বাজেটিং একটি সুনির্দিষ্ট পন্থা, কিন্তু সেই পন্থার সঙ্গে সঙ্গে সামগ্রিক কাঠামো-নীতিমালা যদি নারীবান্ধব না হয়, তাহলে শুধু জেন্ডার বাজেটিং করে কোনো লাভ হবে না।

শেষ করব দুটি কথা দিয়ে। একটি কথা হলো, মানসিকতা পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে। সেটি নীতিমালার অনেক বাইরে চলে যাবে। আমার মনে হয়, -জাতীয় আলোচনা যে হচ্ছে, তার মাধ্যমে মানসিকতার পরিবর্তন অনেকটাই সম্ভব। আলোচনায় পুরুষদের আরো অংশগ্রহণ করা প্রয়োজন। কারণ আলোচনায় পুরুষের মানসিকতার পরিবর্তন অত্যন্ত জরুরি। তার জন্য আমার মনে হয়, -জাতীয় অনুষ্ঠানের একটি বড় ভূমিকা আছে। আর দ্বিতীয় কথা হলো, কভিড-১৯-এর এই সময়ে অনেকেই বলছেন, আমরা যেহেতু সমস্যা নিয়ে ব্যস্ত, সংস্কারের এখন আমাদের সময় নেই। আমি মনে করি, সংস্কারের এটাই সময়। অর্থনৈতিক সংস্কার হোক, অন্য সংস্কার হোক, বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার করতে না পারি তাহলে পরবর্তী সময়ে আমরা আরো একটা বিপজ্জনক অবস্থার মধ্যে পড়ে যাব। আমি আশা করব যে বাজেটে এবং অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় আজকের আলোচনার প্রতিফলন ঘটবে এবং প্রণীতব্য যেকোনো নীতিমালার ক্ষেত্রে আজকে আমরা যে আলোচনা করছি, তার প্রতি সহানুভূতিশীল হবেন নীতিনির্ধারকরা।


সেলিমা আহমাদ, এমপি

প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ ওমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি

আসলে কভিড-১৯ মহামারীতে আর্থিকভাবে, সামাজিকভাবে, অর্থনৈতিকভাবে সব দিক থেকেই নারীরা একটা অসুবিধার জায়গায় আছেন। বিশেষভাবে নারী উদ্যোক্তাদের কথা বলা যায়। নারী উদ্যোক্তারা যে ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য করেন, তার একটি বড় খাত বিউটি পার্লার। খাতটি পুরোপুরিভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। খাতে লাখ লাখ নারী শ্রমিক রয়েছেন, তাদের আয়ের পথ বন্ধ এবং উদ্যোক্তাদেরও কোটি কোটি টার্নওভার বন্ধ। আরেকটি জায়গায় নারীরা আছেন, সেটি হলো ফ্যাশন ডিজাইন বুটিক হাউজ। সেখানেও নারীরা পহেলা বৈশাখ ঈদুল ফিতরের দুটি বড় বাজার ধরতে পারেননি। সুতরাং এরই মধ্যে তারা কিন্তু ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এখন প্রশ্ন হলো, তারা কীভাবে ঘুরে দাঁড়াবেন? দুটো জায়গা আছে। একটি হলো, যদি সহযোগিতা না পান তাহলে নারী উদ্যোক্তাদের একটি অংশ ঝরে পড়বে। আর যারা টিকে আছেন, তারাও হয়তো একসময় হারিয়ে যাবেন বা লাভজনক অবস্থানে থাকবেন না। আমরা বাংলাদেশকে যেভাবে এগিয়ে নিতে চাইছি, জননেত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে এগিয়ে নিতে চাইছেন, সেখানে নারীদের উন্নয়ন না হওয়ার কোনো অবকাশ নেই। তবে সত্যি কথা, আমাদের বাজেটে নারী উদ্যোক্তাদের যে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়, তা অনেক সময় ব্যবহূত হয় না। গত বছর বাজেটে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। আমার জানা মতে, ওই অর্থ সদ্ব্যবহারে কোনো প্রকল্প নেয়া হয়নি। যদিও বিগত বছরগুলোয় ৩০-৪০ কোটি টাকার কিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। কিন্তু বছর হয়নি। কারণ মার্চেই দেশে কভিড-১৯ শুরু হয়ে গেছে। ফলে যা- হয়তো বাস্তবায়ন করা হতো, সেগুলো করা হয়নি। গত বছরের বাজেটের বরাদ্দকৃত কোনো অর্থেরই কিন্তু নারী উদ্যোক্তারা সুবিধা পাননি। তাহলে প্রস্তাবিত বাজেটের বরাদ্দের কী হবে এবং কভিড-পরবর্তীতে আমরা কী করতে পারি? এখন ধীরে ধীরে দোকানপাট খুলছে, একটু একটু করে হয়তো বিউটি পার্লারগুলোও খুলবে। কিন্তু তাদের চলতি মূলধন এখন আর নেই। কারণ দু-তিন মাসের অফিস ভাড়া, শ্রমিকদের বেতন দিয়ে এই ছোট ছোট উদ্যোক্তার হাতে অর্থ নেই। সরকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে উদ্যোক্তাদের জন্য। এটাকে আমরা সাধুবাদ জানাই। সেটি বাস্তবায়ন কতটুকু হবে, তা দেখতে হবে। বলা হচ্ছে, প্রণোদনাটা বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমেই দেয়া হবে। শতাংশ সুদে নারী উদ্যোক্তাদেরও ঋণ দেয়া হবে। এটা আরো কমানো যেতে পারে।  বিভিন্ন সময়ে সরকার নারী উদ্যোক্তাদের প্রণোদনা দিয়েছে। তারা নিজেরাও এগিয়ে এসেছেন। আশা করি, বাংলাদেশের নারীরা এবারো এগিয়ে যাবেন। কিন্তু অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সামাজিক উন্নয়নটা আরেকটু সুপরিকল্পিতভাবে, আরেকটু স্বচ্ছতার সঙ্গে, জবাবদিহিতার সঙ্গে দেখা অত্যন্ত প্রয়োজন।


রুপালী চৌধুরী

প্রেসিডেন্ট ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি

ক্ষুদ্র মাঝারি উদ্যোগের ক্ষেত্রে সরকার যে প্রণোদনা ঘোষণা করেছে, তা ব্যাংকের মাধ্যমে বাস্তবায়ন হওয়ার কথা। সেক্ষেত্রে অনেক ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক লেনদেনে নির্ভরতা থাকলেও অনেকে ব্যাংক লেনদেনে যুক্ত নয়। নারী উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে সংখ্যাটি হয়তো আরো কম। সেক্ষেত্রে প্রণোদনা তাদের কাছে কীভাবে পৌঁছবে, সেটি একটি বিরাট প্রশ্নবোধক চিহ্ন। ব্যাংকিং খাতের বাইরে গিয়ে কী করে আমরা তাদের কাছে টাকাটা পৌঁছাতে পারি, সেটি একটা চিন্তার বিষয়। সবাই ভ্যাট দিচ্ছে, কর দিচ্ছে। কাজেই ভ্যাট নিবন্ধন সবার আছে। সেখান থেকে তথ্য নিয়ে কাজ করা যায় কিনা কিংবা ওটার ভিত্তিতে তারা আবেদন করতে পারবেন কিনা, কীভাবে তারা ঋণটা পাবেন বা নেবেন, বিউটি পার্লার বলি, বুটিক বলি বা অন্য যেকোনো ব্যবসা বলি, ব্যাংকিং খাতের বাইরে আমরা কীভাবে পৌঁছতে পারি, সেটাই ভাবনার বিষয়। আমার মনে হয়, এক্ষেত্রে আমাদের বিকল্প ফিন্যান্সিংয়ের ব্যবস্থা করা খুব জরুরি। শিল্পে বিপুলসংখ্যক নারীর কর্মসংস্থান রয়েছে। সেক্ষেত্রে আমি অনুরোধ করব, শুধু ব্যাংকিং খাত নয়, ভ্যাট চালান রেকর্ডের ভিত্তিতে যদি ঋণটা দেয়া হয় তাহলে ভালো হবে। কাউকে হয়তো এককালীন ৫০ হাজার দিতে হবে, কাউকে হয়তো লাখ দিতে হবে, আমাদের বাজেটের আকার অনুসারে সেটি বড় কোনো অংকও নয়। কিন্তু তাদের ওই টাকাটা দিলে অনেক বিজনেস সেন্টার খুলে যাবে। সেক্ষেত্রে অন্য সোর্স অব ফান্ড, যেমন এনজিও কিংবা এসএমই ফাউন্ডেশনকেও ব্যবহার করতে পারি। আমার ধারণা, তাদের ঋণ দেয়া বা এককালীন টাকা দেয়া অনেক বেশি জরুরি।


নাসরিন আউয়াল মিন্টু

প্রেসিডেন্ট, ওমেন অন্ট্রাপ্রেনিউর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ

করোনা পরিস্থিতির জন্য আমাদের অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, জীবনযাত্রা সবকিছুই অনেকটা স্থবির হয়ে গেছে। অনেক ক্ষতি হয়েছে। অনেক মানুষের ব্যবসা চলে গেছে। অনেক মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। এখানে নারী উদ্যোক্তারাও কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এসব উদ্যোক্তাকে কীভাবে পুনর্বাসন করা যায়, সেটি বাজেটে নির্দেশনা নেই। নারীরা প্রতি বছর বসে থাকেন যে এপ্রিল আসবে, পহেলা বৈশাখ আসবে, দুটো ঈদ আসবে, তাদের বিক্রিবাট্টা হবে। বিশেষ করে এসএমই নারীরা পহেলা বৈশাখে নিজেদের পণ্য বিক্রি করেন। এবার তারা ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। পহেলা বৈশাখ পাননি, দুটো ঈদও পাচ্ছেন না। তাহলে বোঝা যাচ্ছে, তারা যে পণ্য সারা বছর ধরে তৈরি করেছেন, সেগুলো ঘরের এক কোনায় পড়ে আছে। এজন্য পরিবারের দিক থেকেও একটা চাপ আসছে। পুঁজিটা আটকানো। তদুপরি আছে সংসারের খরচ। সেজন্য নারীরা ব্যতিব্যস্ত আছেন। তারা পণ্যগুলো কোথায় বিক্রি করবেন? আমার মনে হয়, সরকারকে একটা দায়িত্ব নিতে হবে এখানে কীভাবে নারীদের সাহায্য দেয়া যায়। এবার বাজেট আমার কাছে খুব সাদামাটা মনে হয়েছে। তেমন কোনো দিকনির্দেশনা নেই। প্রতি বছর নারীদের জন্য একটা থোক বরাদ্দ থাকে। এবার তাও নেই। বলা হচ্ছে, এসএমই খাতে প্রণোদনা বাবদ ঘোষিত ঋণের ক্ষেত্রে সরকার সাড়ে শতাংশ সুদ দেবে, আর উদ্যোক্তারা দেবেন সাড়ে শতাংশ। সরকারের কাছে অনুরোধ, ঋণের ক্ষেত্রে এত বেশি সুদ দিয়ে নারী উদ্যোক্তা তথা এসএমইকে তুলে আনা যাবে না। সেক্ষেত্রে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য সুদ শতাংশ শিথিল করা যায় কিনা, সেটি ভাবা দরকার। সেটিও অনেক নারী দিতে পারবেন না। তাদের একটি গ্রেস পিরিয়ড দিতে হবে। যে পরিস্থিতি কভিডে যাচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে অন্তত বছর দুয়েকের জন্য গ্রেস পিরিয়ড রাখা উচিত এসএমই নারীকে তুলে আনার জন্য। নইলে তারা পেরে উঠবেন না। তাছাড়া কোনো দিকনির্দেশনাও নেই। আমি বলব, এই টাকা ছাড়ের জন্য যেসব ওমেন চেম্বার এবং নারী সংগঠন আছে, সবাইকে সম্পৃক্ত করা জরুরি।

বিউটি পার্লারকে শুধু প্রসাধনী শিল্প ধরা যায় না, এটি স্কিন কেয়ারও। দেখা গেছে, প্রসাধন পণ্যের ওপর কর বেড়ে গেছে। আমাদের দেশে গ্রামগঞ্জেও বিউটি পার্লার আছে। কর বাড়ালে এগুলো চলবে কীভাবে? আর এখানে কাজ করেন অনেক নারী। নারীদের কোথায় পুনর্বাসন করা হবে? আমাদের সবকিছু বিবেচনা করে আবার বাজেটকে ঠিকমতো পর্যালোচনা করা দরকার।

আরেকটি বিষয় হলো, ইপিজেডে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ২৫-৩০ শতাংশ জায়গা বরাদ্দ রাখা দরকার। নেপাল, ভারতেও সেটা করা হয়েছে। তাতে অনেক নারী উপকৃত হয়েছেন এবং এসএমই খাত অনেক উপরে উঠে এসেছে। আর ক্ষতিগ্রস্ত নারীদের পণ্যগুলো যদি -কমার্সের মাধ্যমে বিক্রি করা যায়, তার ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ তাদের কোনো আউটলেট নেই। আর নারীদের নিজেদেরও আউটলেট সেই রকম নেই। আবার দোকানপাটও তেমন খোলা যাচ্ছে না। অবস্থায় একটি -কমার্স পোর্টাল যদি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে চালু করা যায় এসএমই নারীদের পণ্য বিক্রি করার জন্য, তাহলে সেটি মনে হয় ভালো কাজ হবে।


রীতি ইব্রাহীম

পরিসংখ্যানবিদ সাবেক সচিব

কভিড আসলে আমাদের জন্য একটি বড় ধাক্কা। মানুষের আমূল পরিবর্তন হয় ধাক্কা খেলে। আমরা একটা ভীষণ ধাক্কা খেয়েছি। শত বছরে যে অসুখটা একবার হয়, সেটি এখন পুরো বিশ্বকে আক্রান্ত করেছে। সুতরাং এখনই সময় ভবিষ্যত্টা অন্যভাবে চিন্তা করার। গতানুগতিকভাবে যেভাবে করতাম, সেভাবে চিন্তা করলে আর হবে না। বেকারত্ব অনেক বেড়ে গেছে। তাদের একটা ব্যবস্থা করতে হবে। আমার মনে হয়, নারীদের প্রজনন স্বাস্থ্য এবং শিক্ষায় অধিক গুরুত্ব দেয়া উচিত। এখানে বাজেট বরাদ্দ দেয়া উচিত। বলা হচ্ছে, পার্লারের নারীরা খারাপ অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। তারা কিন্তু শুধু প্রান্তিক জনগোষ্ঠী নয়, তাদের বেশির ভাগই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীরও বটে। সুতরাং তাদের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেয়া দরকার। ক্ষতিগ্রস্ত নারীদের একটা তালিকা করে যদি সরকার মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ পাঠিয়ে দিতে পারে তাহলে সরাসরি তাদের কাছে পৌঁছবে।

মেয়েদের লেবার ফোর্সের যে কথাটি এসেছে, তার সবচেয়ে ভালো পরিসংখ্যান উঠে আসে টাইম ইউজ সার্ভে থেকে। পুরুষ-নারীর সারা দিনের কাজের তালিকা করলে একজন নারী পুরুষের তুলনায় কতটা বেশি পরিশ্রম করেন, জরিপ থেকে আমরা  সেটি সম্পর্কে ধারণা পাই। কভিড-১৯-এর ফলে আমরা কিন্তু বড় ধরনের একটা ধাক্কা খেয়েছি। ধরনের পরিস্থিতিতে মানুষের চরিত্রের পরিবর্তন হয়। কভিড পুরো বিশ্বকে আক্রান্ত করেছে। সুতরাং ভবিষ্যৎ নিয়ে অন্যভাবে চিন্তা করার এখনই সময়। বেকারত্বের হার অনেক বেড়ে গেছে, তার একটা ব্যবস্থা করতে হবে। পারিবারিক নির্যাতনের পরিমাণও অনেক বেড়ে গেছে। জেন্ডার বাজেটিং করতে গেলে নারীর শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবার বিষয়গুলোয় গুরুত্ব দিতে হবে। সম্প্রতি নারীদের অ্যাবরশন রেট বেড়ে গেছে। তাই মেয়েদের রিপ্রডাক্টিভ হেলথ কেয়ারের জন্য আরো বেশি অর্থ বরাদ্দ দিতে হবে। এটা জেন্ডারের মধ্যে পড়ে। একই সঙ্গে আসে নারীশিক্ষা। একজন মাকে শিক্ষিত করলে ছেলেমেয়েরা অবশ্যই লেখাপড়া শিখবে। বর্তমান কভিড পরিস্থিতিতে ঘরে ঘরে না গিয়ে প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা তাদের শিক্ষিত করতে পারি। কিন্তু আমরা দেখতে পারছি আইটির বিপরীতে অনেক ট্যাক্স ধরা হচ্ছে। বিষয়টা দ্বন্দ্বাত্মক হয়ে যাচ্ছে। কভিড পরিস্থিতিতে আমরা একটা বিষয় দেখলাম যে মানুষ ঘরে বসে অনেক কাজ করতে পারে। কভিড পরিস্থিতিতে মায়েদের মানসিক চাপ বেড়েছে। তিনি একজন প্রান্তিক গোষ্ঠীর মা হতে পারেন আবার করপোরেট অফিসারও হতে পারেন। আমার মতে, নারীদের স্বাস্থ্য শিক্ষার বিষয়গুলোয় আরো অধিক গুরুত্ব দিয়ে বাজেটে বরাদ্দ রাখা উচিত। বিউটি পার্লারগুলোয় যে নারীরা কাজ করেন, তারা শুধু প্রান্তিক নয়, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী। কভিড পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্ত নারীদের তালিকা করে সরকার যদি মোবাইলের মাধ্যমে তাদের কাছে অর্থ পাঠিয়ে দিতে পারে তাহলে তা সরাসরি তাদের হাতে পৌঁছবে। ধরনের একটা বরাদ্দ রাখা উচিত।


এম মান্নান, এমপি

মাননীয় মন্ত্রী, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়

আমি আপনাদের আশ্বস্ত করছি, ওই আলোচনায় যে বিষয়গুলো উঠে এসেছে, তা আমি আরো উপরের পর্যায়ে বয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করব। আমাদের সরকার অনেক সচেতন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেক অ্যাফারমেটিভ অ্যাকশন গ্রহণ করেছেন। তার সবচেয়ে সুদূরপ্রসারী পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসনের ব্যবস্থা করা। এতে নারীদের অবস্থান আগের থেকে আরো বেশি শক্তিশালী হয়েছে, যদিও আলোচনায় সংসদে নারীর সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি উঠে এসেছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে কেউ নতুন কোনো প্রকল্প নিয়ে এলে তিনি সেখানে নারীর অংশগ্রহণ, উপস্থিতির বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে চান। কারণ প্রধানমন্ত্রী নারীর অংশগ্রহণের বিষয়টি নিয়ে অনেক সচেতন। তাই আমরা যারা তার সঙ্গে কাজ করি, তাদেরও বিষয়টি নিয়ে অবশ্যই সচেতন হতে হয়। আজকের আলোচনায় অনেকগুলো বিষয় উঠে এসেছে, অনেক বিষয়ের সঙ্গেই আমি একমত। আমরা বিভিন্ন ক্ষেত্রেই তো ভর্তুকি দিচ্ছি। এসএমই ব্যবসার সঙ্গে যে নারীরা জড়িত রয়েছেন, তাদের যদি ভর্তুকি দেয়া হয়, আমি মনে করি তা একটা ভালো বিনিয়োগ হবে। বিষয়টি আমি সরকারের আরো শক্তিশালী পর্যায়ে নিয়ে যাব। প্রবাসী নারীদের নিরাপত্তার বিষয়টি উঠে এসেছে। আমার মনে হয়, বিষয়টি ঘিরে আমাদেরও একটি শক্তিশালী অবস্থান গ্রহণের সময় এসেছে, যদিও এখানে জীবিকার বিষয়টি জড়িত। সরকারের মনোযোগে বিষয়টি রয়েছে এবং আলোচনা চলছে। শিশুর দিবাযত্ন কেন্দ্রের সংখ্যা বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। আমি মনে করি, বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ। বেসরকারি খাতে বিশেষ করে গার্মেন্টগুলোয় বিভিন্ন চাপে দিবাযত্ন কেন্দ্রের সুযোগ রাখা হয়েছে, কিন্তু এটি আরো বাড়ানো উচিত। কভিড পরিস্থিতিতে পারিবারিক সংহিসতা বাল্যবিবাহ বৃদ্ধির ঘটনাগুলো দুঃখজনক। এটি প্রতিরোধে আমরা সোচ্চার হব। কভিড পরিস্থিতিতে আরএমজি সেক্টরের প্রভাবগুলো নিয়ে আমরা সচেতন আছি। বিশ্ববাজারে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখার ব্যাপারে আমি ভীষণ আশাবাদী। আমরা বর্তমানে উন্নয়নের যে পর্যায়ে রয়েছি, সেখানে আরো বড় ধরনের অর্জনের দিকে এগিয়ে যেতে হলে নারীদের অংশগ্রহণ তাদের সামনে আনার বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও বিষয়গুলো ঘিরে ভীষণ আন্তরিক, যা আমাদের অত্যন্ত আশাবাদী করে। তার নেতৃত্বে নারীর ক্ষমতায়ন আরো বেশি অর্জনের পথে আমরা অগ্রসর হব।


সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

প্রধান নির্বাহী, বেলা

কৃষিতে যদি ১৯টি কাজ থেকে থাকে, তার ১৫-১৬টিই নারী করে থাকেন। কিন্তু তার কোনো অর্থনৈতিক মূল্যায়ন করা হয় না। আবার কৃষিজমির মালিকানার মধ্যে ৯৪ শতাংশই পুরুষের হাতে। মাত্র ছয় ভাগ নারীর হাতে। যখন নারীর কাজ ছিল বীজ সংরক্ষণ, তখন দেশে ধানের বীজের সংখ্যা ছিল ১৫ হাজারের উপরে। এগুলো সরকারি হিসাব। যখন বীজ সংরক্ষণের দায়িত্ব নারীর হাত থেকে সরে গেল, আমাকে-আপনাকে হাইব্রিড চাল খাওয়াতে করপোরেশনরা চলে এল, তখন বীজের নিয়ন্ত্রণ চলে গেল করপোরেশনদের হাতে এবং পুরুষের হাতে। এখন দেশে ধানের প্রজাতি ১০০ থেকে মতান্তরে ৫০টিতে নেমে এসেছে। এটা থেকে নারীর ভূমিকা আমরা বুঝতে পারি। নারীদের বীজ সংরক্ষণের ভূমিকাকে যদি সামাজিকভাবেও সম্মান জানানো হতো তাহলে বীজের প্রজাতিগুলো আমরা হারাতাম না। আজ কভিড বাস্তবতায় সবচেয়ে আগে এমনকি ভ্যাকসিনের আগেও আমাদের চিন্তা হয়েছে যে আমরা খাব কী? খাওয়াব কী? এখন আমরা বলছি এক ইঞ্চি জমিও আমরা অনাবাদি রাখব না, অথচ আগে আমরা কেবল ইকোনমিক জোনের কথা বলে এসেছি। ইকোনমিক জোনের সঙ্গে আমার কোনো বিবাদ নেই, কিন্তু নদী, বন নষ্ট করে যে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চলে, তার কেন্দ্রবিন্দুতে নারী কখনই ছিলেন না। নারী সবসময় বন, নদী, কৃষিজমি, কৃষিসম্পদ, প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষা করে তারপর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্মত হয়েছেন। এবার নারীর ক্ষমতায়ন প্রসঙ্গে বলব যে অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন, স্বাবলম্বী করার কথা বলে মধ্যপ্রাচ্যে নারী শ্রমিক পাঠানো হচ্ছে, অথচ ভয়াবহ সব অভিজ্ঞতা নিয়ে তারা ফেরত আসছেন। আমি মনে করি, দেশের ভেতর নারী নির্যাতনকে যেমন না বলতে হবে, একই সঙ্গে নির্যাতনের শিকার হন এমন কোনো দেশে অর্থনৈতিক স্বাবলম্বী করার জন্য নারীকে পাঠানো যাবে না। জেন্ডারকে আরোপিত বিষয় হিসেবে মনে করার কোনো কারণ নেই। সরকারের প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে, প্রতিটি সরকারি অধিদপ্তরে একটা করে জেন্ডার ফোকাল পয়েন্ট রাখি তাহলে বাজেটিংয়ের সময় এটা কাজে দেবে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে নারীরা কাজ  করছেন, তাদের সন্তান নিয়ে কাজ করা মুশকিল হয়ে পড়ে। কর্মক্ষেত্রগুলোয় ডে কেয়ার সেন্টার রাখার ব্যাপারে সরকার যদি এখানে বাধ্যবাধকতা জুড়ে দেয়, তাহলে সবাই তা করতে বাধ্য থাকবে। খুব বড় পরিসরে করার দরকার নেই, ছোট পরিসরে শুরুটা করা জরুরি।


ফাহমিদা খাতুন

নির্বাহী পরিচালক, সিপিডি

প্রথমত, এবারের বাজেট কভিড বছরের বাজেট হয়নি। তারপর যদি বলা হয়, এটা কভিডের পরিপ্রেক্ষিতে নারী বাজেট হয়েছে কিনা, তাহলে বলবনা। কারণ নারীদের কাজ করতে যেতে যে ধরনের চিরাচরিত বৈষম্য যেমন মজুরিবৈষম্য, কাজের অনিশ্চয়তা, কর্মক্ষেত্রে নিপীড়নের বিপরীতে  সীমিত আকারে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখছি। কয়েক বছর ধরে মন্ত্রণালয়গুলো জেন্ডার বাজেটিং দিচ্ছে, গত বছরের চেয়ে এবার বরাদ্দ শতাংশ বেড়েছে, কিন্তু মজুরিবৈষম্যের বিপরীতে কোনো ধরনের পদক্ষেপের কথা বলা হয়নি। চাকরির অনিশ্চয়তা, বিশেষ করে অনানুষ্ঠানিক খাতের কথা কি বাজেটে উল্লেখ করা হয়েছে? না। ঘরে নারীরা বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করছেন। এক্ষেত্রে বাজেটে বলা হয়েছে, জেলা উপজেলা পর্যায়ে শিশুদের জন্য দিবাযত্ন কেন্দ্র থাকবে। এটা যদি বাস্তবায়িত হয় তাহলে খুব ভালো। এছাড়া নারী শিশু নিপীড়নের বিরুদ্ধে ন্যাশনাল ফরেনসিক  ডিএনএ  প্রোফাইলিং  ল্যাবরেটরি ম্যানেজমেন্ট ডিরেক্টর নেয়া হবে, যাতে নারী শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে যে মামলাগুলো হয়, তা দ্রুত বিচার করা যায়। উল্লিখিত দুটো পদক্ষেপ ছাড়া আর কোনো পদক্ষেপ দেখছি না। যদিও  বরাদ্দ বেড়েছে। তবে বরাদ্দের গুণগত ব্যবহারের বিষয়টাও জরুরি। এছাড়া ৫০ লাখ পরিবারকে যে আড়াই হাজার টাকা করে দেয়ার কথা বলা হয়েছে, তা চাহিদার তুলনায় খুবই কম। অনানুষ্ঠানিক খাতে অনেক নারী কাজ করেন, সে তুলনায় বরাদ্দ খুবই কম। খাতে পাঁচ কোটির উপরে জনসংখ্যা কাজ করছে। তাদের জন্য সহযোগিতা পর্যাপ্ত নয়। আমাদের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিগুলো বেশির ভাগই গ্রামকেন্দ্রিক। প্রণোদনা ত্রাণ কিন্তু গ্রামের পাশাপাশি শহরের মানুষগুলোর জন্যও দিতে হবে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির যে তালিকাটা তৈরি করা হচ্ছে, সেটাকেই রিভাইজ করা হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে যাদের প্রয়োজন তারা নেই, বরং যাদের সাহায্যের কোনো প্রয়োজন নেই, তারা তালিকায় আছে। এটা সংশোধন করতে হলে সরকারি-বেসরকারি সব সংস্থাকে নিয়েই তা করতে হবে। প্রণোদনা  প্যাকেজে ব্যাংক ক্লায়েন্টের সম্পর্কের ভিত্তিতে অর্থ প্রদানের কথা বলা হয়েছে। ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তারা এক্ষেত্রে কী করবেন, তাদের হয়তো ঋণ নেয়ার কোনো রেকর্ডই নেই। তাই প্রণোদনা প্যাকেজ যদি সুনির্দিষ্টভাবে নারীর জন্য না হয়, তাহলে তা নারীদের কাছে পৌঁছবে না বলেই আমার আশঙ্কা।


মনোয়ারা হাকিম আলী

পরিচালক, এফবিসিসিআই

নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বর্তমান সময়টা খুবই চ্যালেঞ্জিং। এফবিসিসিআই এক্ষেত্রে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর সঙ্গে কথা বলেছে। সহায়তা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছে। করোনা পরিস্থিতিতে অনেক নারী উদ্যোক্তা দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে আছেন, অনেকে ঝিমিয়ে পড়েছেন, তাদের জন্য যে ঋণসহায়তার কথা বলা হয়েছে, অনেকে তা দিয়ে পরিস্থিতিতে কীভাবে ব্যবসা চালাবে তা নিয়েও চিন্তিত। তাই আমি মনে করি, আলাদা করে মহিলাবিষয়ক মন্ত্রণালয় বা অন্য কোনো মন্ত্রণালয়ের অধীনে নারী উদ্যোক্তা অধিদপ্তর হওয়া উচিত। ধরনের আলাদা প্লাটফর্ম হলে নারী উদ্যোক্তারা তাদের সমস্যাগুলো যেমন তুলে ধরতে পারবেন, তেমনি নতুন নতুন সুযোগ সম্ভাবনা নিয়ে কাজ করাও সহজ হবে। পাশাপাশি নারী উদ্যোক্তাদের জন্য থোক বরাদ্দ প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বরাদ্দের ব্যবস্থা করা হয়েছে, যা ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। তবে বরাদ্দের অর্থ প্রদান প্রক্রিয়া আরো সহজ করতে হবে। মাঠ পর্যায়ের নারীরা কিন্তু নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করেছেন। গ্রামে অনেক চড়া সুদে ঋণ গ্রহণের পরও তারা তা পরিশোধে সফল হয়েছেন। অথচ দেখা যায় ব্যাংকগুলো তাদের ওপর মোটেও আস্থা রাখে না। আমি আশা করব, ব্যাংকগুলো নারী উদ্যোক্তাদের ওপর আস্থা রাখবে।


কাজী রাবেয়া এমি

রুরাল ম্যানেজার অক্সফাম ইন বাংলাদেশ

কভিড পরিস্থিতিতে আনপেইড কেয়ার ওয়ার্ক ইস্যু নিয়ে এশিয়াজুড়ে অক্সফামের পক্ষ থেকে আমরা একটি ক্যাম্পেইন পরিচালনা করছি। এশিয়ার সরকারগুলোর কাছে আমরা বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেছি। তার মধ্যে কিছু দাবি এরই মধ্যে চলে এসেছে। চাইল্ড কেয়ার এবার আমাদের বাজেটে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এছাড়া সরকারের কাছে সামাজিক সুরক্ষা স্কিমের বরাদ্দ বৃদ্ধির জায়গা থেকে নগদ অর্থ প্রদান, প্রশিক্ষণ, সুরক্ষা সরঞ্জাম বেতন প্রাপ্তির ক্ষেত্রে নারীর সমান অংশগ্রহণের বিষয়টি তুলে ধরেছি। স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে নারীর সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার বিষয়গুলো উল্লেখ করেছি। ভ্যাকসিন আবিষ্কারের পর পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জায়গা থেকে একজন নারীর তা প্রাপ্তির বিষয়টিতে জোর দিয়েছি। বছরের বাজেটে  নতুন কয়েকটি সামাজিক সুরক্ষা স্কিম যোগ হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে দক্ষতা বৃদ্ধি, প্রশিক্ষণ, উন্নয়ন উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ সহায়তা তহবিল, তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে নারীদের ক্ষমতায়ন। এছাড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্য, প্রজনন স্বাস্থ্য পুষ্টিসেবার একটা নতুন স্কিম যোগ হয়েছে। মাননীয় মন্ত্রীর কাছে আমার অনুরোধ থাকবে আমরা বেসরকারি সংস্থাগুলো সাধারণ জনগণকে কীভাবে স্কিমগুলোর  সঙ্গে  সহজে  যুক্ত করে দিতে পারি, সে অনুযায়ী যদি আমাদের একটা দিকনির্দেশনা প্রদান করেন তাহলে খুব ভালো হয়। এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আনপেইড কেয়ার ওয়ার্ক ইস্যুকে চিহ্নিত  করার বাধ্যবাধকতা ছিল আমাদের। কভিড পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যসেবায় অপ্রতুলতার কারণে নারীকে অতিরিক্ত কেয়ার ওয়ার্কের বোঝা নিতে হচ্ছে। জায়গায় আমি বিশেষভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই।


নাজনীন আহমেদ

সিনিয়র রিসার্চ ফেলো বিআইডিএস

প্রথমত, ২০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে নারীদের যে শতাংশ অর্থাৎ হাজার কোটি টাকা অনানুষ্ঠানিক খাতে বরাদ্দের কথা বলা হয়েছে, তা নিয়মগতভাবে দেয়া মুশকিল। কারণ এটা ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে যাবে। হাজার কোটি টাকা এনজিওগুলোর মাধ্যমে এবং হাজার কোটি টাকা চারটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানকে দেয়ার কথা বলেছে, সেখানে কিন্তু সুনির্দিষ্টভাবে নারীদের কথা বলা নেই। যদিও পিকেএসএফ বা পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের বেশির ভাগ গ্রাহক হচ্ছেন নারী। ধরে নেয়া যায়, সেখান থেকে নারীরা বেশি পাবেন। মাননীয় পরিকল্পনামন্ত্রীর কাছে আমার অনুরোধ থাকবে যে এই যে ২০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের কথা ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে বলার কথা হয়েছে, তা নারীদের পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক দুর্বল। যদি অতিরিক্ত সম্ভব হয়, ভালো, না হলে অনানুষ্ঠানিক খাতের নারীদের জন্য বিশেষায়িত ব্যাংক এনজিওগুলোর মাধ্যমে যে অর্থ যাবে, সেখানে কিছু বরাদ্দ বাড়িয়ে দেয়া যায় কিনা, তা দেখতে হবে, তাহলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেখানে নারী গ্রাহক বেশি হওয়ায় তারা বেশি পাবেন। দ্বিতীয়ত, প্রতিটি উপজেলায় ডে কেয়ার সেন্টার প্রতিষ্ঠা একটি ভালো উদ্যোগ। সেক্ষেত্রে একটি উপজেলায় একটিএভাবে না করে যেসব উপজেলায় কাজকর্মের পরিমাণ বেশি, সেখানে অতিরিক্ত ডে কেয়ার সেন্টার যদি করা যায় তা ভালো হবে। তৃতীয়ত, সরকারের প্রণোদনা বা ধরনের বিষয়গুলোয় নারীদের অংশ না নিতে পারার একটি বড় কারণ হচ্ছে তাদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি কম। এটা ব্যাংকি সেক্টর থেকে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সিস্টেম বলি সব জায়গাতেই কম। আমি মনে করি, নারীদের স্মার্টফোন ব্যবহারের সুযোগ বৃদ্ধি করতে হবে। কলেজপড়ুয়া মেয়েদের হাতেও সেলফোন না দেয়ার প্রবণতা লক্ষ করা যায়। দেখা গেছে অনেক উদ্যোক্তা নারীও তারা যদি শিক্ষিত বেশি না হন, তাহলে তারা মোবাইলের খুদে বার্তাগুলোও পড়তে পারেন না। উত্তর দিতে পারেন না। গ্রামের বিভিন্ন নারীর যে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়, সেখানে এগুলো শেখানোর বিষয়টি যদি অন্তর্ভুক্ত করা হয় তাহলে ভালো হবে। তাছাড়া বাজেটে নারীদের জন্য যে থোক বরাদ্দ দেয়া হতো, তা আবার চালু করার জন্য অনুরোধ করব। তাছাড়া ব্যাংকগুলো নারীদের প্রণোদনা দেয়ার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত শর্ত জুড়ে দেয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মে একজন গ্যারান্টর হলেই চলে, কিন্তু সবসময় দুইয়ের অতিরিক্ত গ্যারান্টরও চাওয়া হয়। এটি নমনীয়  করার বিষয়ে আমার অনুরোধ থাকবে।


শরমিন্দ নীলোর্মি 

অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

আমাদের নারী শ্রমশক্তির প্রায় ৭০ শতাংশের কাছাকাছি কৃষক। আমরা সবসময় বলে থাকি নারী মেইনস্ট্রিম। নারী মেইনস্ট্রিম না, তার প্রথম উদাহরণ জেন্ডার বাজেটে এটি ছেঁটে ফেলা হয়েছে। কৃষিতে বিপণন ব্যবস্থা খুব গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু অধিকাংশ নারী ক্ষুদ্র কৃষক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, কভিড পরিস্থিতিতে বিপণন ব্যবস্থার একটা আলাদা নির্দেশিকা থাকা দরকার ছিল কৃষি ক্ষেত্রে। আমি মনে করি, স্থানীয় পর্যায়ে খালি পড়ে থাকা অফিস বা স্কুলগুলোয় গুদাম বানিয়ে তা কাজে লাগানো যেতে পারে। নারী ছোট  কৃষকের কাছ থেকে শস্য কিনে সাময়িক গুদামগুলোয় সংরক্ষণ করে পরবর্তীতে সরকারি বেসরকারি খাতগুলোয় অন্তর্ভুক্ত করে গ্রাম শহরাঞ্চলে বিপণন ব্যবস্থাকে ছড়িয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এতে নারী কৃষক উপকৃত হবেন। কভিড পরিস্থিতি উৎপাদিত পণ্য বিক্রির সক্ষমতা নারীর একেবারেই না থাকার কথা। দ্বিতীয় বিষয়টা হচ্ছে পাবলিক ওয়ার্কস। সরকারি আইনে মাটির কাজ অন্তত ৫০ শতাংশ নারীদের মাধ্যমে করানোর কথা বলা আছে। কিন্তু বিভিন্ন এজেন্সির সঙ্গে কাজ করার বাস্তব অভিজ্ঞতা অনুসারে আমি বলব, সরকার অনুদানকৃত পাবলিক ওয়ার্কগুলোয় নারীকে নেয়া হয় না মনে করা হয়, তারা কম উৎপাদনশীল। কিন্তু ডোনার ফান্ডের ক্ষেত্রে আবার নারীদের নেয়া হয়, এখানে এজেন্সির একটা ইস্যু আছে। আমি বলতে চাই, সুশাসনের মাধ্যমে যাতে নারীদের কাজে সম্পৃক্ত করার বিষয়টিকে বাধ্যতামূলক করে দেয়া উচিত যে পাবলিক ওয়ার্কসের মধ্যে স্থাপনা, মেরামত রক্ষণাবেক্ষণের এত শতাংশ কাজ নারীদের মাধ্যমেই হতে হবে। এলজিইডি যেমন রাস্তা নির্মাণের ক্ষেত্রে নারীদের কাজে লাগায়, তেমনি পানি উন্নয়ন বোর্ড, ত্রাণ মন্ত্রণালয় নারীদের দিয়ে কাজগুলো সম্পাদিত করতে পারে। বাঁধ মেরামতের ক্ষেত্রে স্থানীয় নারীদের কাজে লাগানোর বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে আমি মনে করি। বাল্যবিবাহ রোধ নারীশিক্ষার ক্ষেত্রে আমাদের অর্জনটা যেন অটুট থাকে, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। কভিড পরিস্থিতি যেন আমাদের অর্জনগুলো ম্লান করে না দেয়। তাছাড়া নারীদের ডিজিটালি দক্ষ করে তোলার জন্য বিনা মূল্যে অল্প কিছু ইন্টারনেট ডাটা দেয়া যেতে পারে। এটা মনে করার কোনো কারণ নেই, নারীর জন্য আলাদা কিছু রাখলেই নারীর উপকার হবে। প্রয়োজন একটি কর্মকৌশলের।


সায়মা হক বিদিশা

অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

কভিড-১৯-এর চ্যালেঞ্জগুলোকে আমি পাঁচ ভাগে ভাগ করতে চাই। প্রথমত, আমাদের মূলধারার শ্রমবাজারের চ্যালেঞ্জ, দ্বিতীয়ত, স্বাস্থ্যগত চ্যালেঞ্জ। এখানে মানসিক স্বাস্থ্য আছে, তাছাড়া প্রজনন স্বাস্থ্যের বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ। তৃতীয়ত, পারিবারিক সহিংসতা। চতুর্থত, গৃহস্থালি কাজের ভার। পঞ্চম বিষয়টি হচ্ছে পরিবারের আয় কমে গেলে শিশুর শিক্ষা, স্বাস্থ্য পুষ্টির বিষয়টি ব্যাহত হতে পারে। কন্যাশিশুরা বেশি ভুক্তভোগী হতে পারে, এমনকি বাল্যবিবাহের শিকার হতে পারে। ২০১৬ সালের খানা জরিপ অনুযায়ী কয়েকটি বিশেষ ধরনের কাজে যে নারীরা যুক্ত আছেন, যেমন গৃহপরিচারিকা  হিসেবে যারা কাজ করছেন, ক্ষুদ্র অতি ক্ষুদ্র শিল্পের সঙ্গে যারা জড়িত আছেন, পোশাক শিল্পে কর্মরত যারা আছেন, সেসব নারীর অর্থনৈতিক ঝুঁকিটা অনেক বেশি। দারিদ্র্যসীমার নিচে না থাকলেও কভিড-১৯-এর কারণে তাদের দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাওয়ার ঝুঁকিটা কিন্তু অনেক বেশি। এছাড়া আমাদের গৃহস্থালি কাজের বা অপ্রদর্শিত কাজের ভারের সঙ্গে জেন্ডার বাজেটের একটা সম্পর্ক রয়েছে। টাইম ডায়েরির  মাধ্যমে দেখা গেছে, একজন নারী যিনি মূলধারার শ্রমবাজারে রয়েছেন, তিনি গড়ে দশমিক ঘণ্টা এবং যিনি মূলধারার শ্রমবাজারে নেই, তিনি গড়ে দশমিক ঘণ্টা যে কাজ করেন, সে কাজগুলো অপ্রদর্শিত রয়ে গেছে। অপ্রদর্শিত কাজের ভারটি এমন ধরনের ভার, সেটি কিন্তু নারীর মূলধারার শ্রমবাজারের কাজকে ব্যাহত করতে পারে বলে আমরা গবেষণায় দেখেছি। জেন্ডার বাজেটিংয়ের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের প্রকল্পে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে, কিন্তু দক্ষতা বৃদ্ধি, শিক্ষার সুযোগগুলো অনেক সময় নারী নিতে পারছেন না, কারণ তাদের অপ্রদর্শিত কাজের বোঝাটা টানতে হচ্ছে। তাই অপ্রদর্শিত কাজের স্বীকৃতির বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ কভিডের কারণে পারিবারিক নির্যাতনের হার অনেক বেড়ে গেছে, এটি নির্যাতন কমাতে সাহায্য করবে। শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র নিয়ে আগের বাজেটগুলোয় সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা ছিল, কিন্তু এক্ষেত্রে গুণগত মান নিশ্চিত করার পাশাপাশি ব্যক্তি খাতে যেসব উদ্যোক্তা আছেন, তাদের সঙ্গে নিয়ে কীভাবে এটাকে বাধ্যতামূলক করা যায়, সে বিষয়ে কিছু পরিকল্পনার দরকার রয়েছে। অনানুষ্ঠানিক খাতে বিশেষ করে ক্ষুদ্র কুটির শিল্পে যারা রয়েছেন, তাদের চিহ্নিত করতে হবে। ২০ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনার পাশাপাশি অন্যান্য যে বাজেটারি বরাদ্দগুলো রয়েছে, তা যেন তারা নিতে পারেএজন্য শর্তগুলোকে শিথিল করা সহজ শর্তে ঋণ দেয়ার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে। 

অংশ নিয়েছেন যারা :

প্রধান অতিথি

এম মান্নান, এমপি

মাননীয় মন্ত্রী, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়

 

সম্মানিত আলোচক

সেলিম জাহান        সাবেক পরিচালক, জাতিসংঘের মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন কার্যালয়

শাহীন আনাম        নির্বাহী পরিচালক, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন

সেলিমা আহমাদ, এমপি       প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ ওমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি

রীতি ইব্রাহীম          পরিসংখ্যানবিদ সাবেক সচিব

নাসরিন আউয়াল মিন্টু       প্রেসিডেন্টওমেন অন্ট্রাপ্রেনিউর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান      প্রধান নির্বাহী, বেলা

ফাহমিদা খাতুন     নির্বাহী পরিচালক, সিপিডি

রুপালী চৌধুরী       প্রেসিডেন্ট, ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি

মনোয়ারা হাকিম আলী         পরিচালক, এফবিসিসিআই

সায়মা হক বিদিশা                 অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

শরমিন্দ নীলোর্মি   অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

নাজনীন আহমেদ       সিনিয়র রিসার্চ ফেলো, বিআইডিএস

কাজী রাবেয়া এমি রুরাল ম্যানেজার, অক্সফাম ইন বাংলাদেশ

প্রবন্ধ উপস্থাপক :

বনশ্রী মিত্র নিয়োগী

জেন্ডার অ্যাডভাইজার, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন

সঞ্চালক : দেওয়ান হানিফ মাহমুদ সম্পাদক, বণিক বার্তা

সুপারিশ

  • নারীর পরিবার সমাজে বিদ্যমান অসমতা দূর করতে হলে সমাজ সংসারে তার মর্যাদা বাড়াতে হবে
  • স্যাটেলাইট সিস্টেম অব অ্যাকাউন্টস দিয়ে জাতীয় আয়ে নারীর কাজের অন্তর্ভুক্তি এর স্বীকৃতি নিশ্চিত করার এখনই সময়
  • আমাদের করনীতি-বাণিজ্যনীতির সুফল নারীদের জন্য নিশ্চিতে বিশেষ উদ্যোগ দরকার
  • নারীর সামাজিক উন্নয়নকে আরো সুপরিকল্পিত স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতার সঙ্গে দেখা প্রয়োজন
  • কর্মক্ষেত্রে ডে-কেয়ার সেন্টার গড়ে তুলতে হবে
  • কভিড পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে নারী উদ্যোক্তাদের আলাদা বরাদ্দ দিতে হবে
  • আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে নারীদের সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে
  • সামাজিক সুরক্ষা স্কিমের বরাদ্দ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে নারীর সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে
  • নারীর শারীরিক মানসিক সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে দৃষ্টি দিতে হবে
  • প্রবাসে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে কঠোর নজরদারি পদক্ষেপ নিতে হবে
  • জেন্ডার বাজেটিংকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়ে প্রতি বছরই এটি প্রণয়ন করতে হবে
  • কভিডে নারীর চাপ বাড়ছে, তা প্রশমনে পারিবারিক, সামাজিক রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে উদ্যোগ নিতে হবে

 শ্রুতলিখন: হুমায়ুন কবির রুহিনা ফেরদৌস


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন