অভিযোগপত্র দিচ্ছে সিআইডি

ক্যাসিনো কারবারি এনু-রূপনের ব্যাংকে ১৯ কোটি টাকা, ১২৮ ফ্ল্যাট

নিজস্ব প্রতিবেদক

পুরনো ঢাকার আওয়ামী লীগ নেতা এনামুল হক এনু ও রুপন ভূঁইয়ার নামে ব্যাংকে ১৯ কোটি টাকা এবং বিভিন্ন স্থানে ১২৮টি ফ্ল্যাটের খোঁজ মিলেছে। ক্যাসিনো কারবারের মাধ্যমে উপার্জিত অর্থে এসব সম্পদ গড়ার প্রমাণ পাওয়ার পরে এই দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মানি লন্ডারিং আইনে মামলায় অভিযোগপত্র দিচ্ছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এনু-রুপনের ব্যাংক হিসাবে জমা রয়েছে ১৯ কোটি ১১ লাখ ৩৬ হাজার ৩৯৪ টাকা। আদালতের আদেশে এসব টাকা এখন জব্দ রয়েছে। পুরনো ঢাকার বংশাল, ইংলিশ রোড, নয়াবাজার, মতিঝিল, শান্তিনগর, গুলশান, ধোলাইখাল, নবাবপুর এলাকায় সাতটি বেসরকারি ব্যাংকে এসব টাকা জমা রাখেন ক্যাসিনো কারবারি এই দুই ভাই।

সিআইডির তথ্যমতে, অবৈধ ক্যাসিনো কারবারের মাধ্যমে ব্যাংকে নগদ অর্থ গচ্ছিত রাখার পাশাপাশি স্থায়ী সম্পদও গড়েছেন এই দুই ভাই। এর মধ্যে পুরনো ঢাকার ৩১ নম্বর বানিয়ানগরে ৬টি ফ্ল্যাট রয়েছে। ১০৫ নম্বর লালমোহন সাহা স্ট্রিটে পাঁচটি ফ্ল্যাট, ১০৬ নম্বর লালমোহন সাহা স্ট্রিটে ১০টি ফ্ল্যাট, ১১৬ নম্বর লালমোহন সাহা স্ট্রিটে ছয়টি ফ্ল্যাট, ১১৯ লালমোহন সাহা স্ট্রিটে ছয়টি ফ্ল্যাট ও ১১২ নম্বর লালমোহন সাহা স্ট্রিটে ছয়টি ফ্ল্যাট রয়েছে তাদের।

এরবাহিরে ১০৩ ও ১২০ নম্বর লালমোহন সাহা স্ট্রিটের দুই কাঠা প্লট, ওয়ারীর ৭০ নম্বর দক্ষিণ মৈসুন্দি এলাকায় ১৪টি ফ্ল্যাট আর গেণ্ডারিয়ার ৬৫/২ শাহ সাহেব লেনের ১৭টি ফ্ল্যাট, ৭১নং শাহ সাহেব লেনের চারটি ফ্ল্যাট, ৮ নম্বর শাহ সাহেব লেনের ১৩টি ফ্ল্যাট, এক নম্বর নারিন্দা লেনের পাঁচটি ফ্ল্যাট, ১৪ নম্বর নারিন্দা লেনে চারটি, ১৫ নম্বর নারিন্দা লেনের ১১টি ফ্ল্যাট, ১৪ নম্বর নারিন্দা লেনের দুটি ফ্ল্যাট এবং ৬ নম্বর গুরুদাস সরদার লেনের ১২টি ফ্ল্যাটের মালিক দুই ভাই।

তাছাড়া ৬৫ নম্বর শাহ সাহেব লেনের টিনশেড ভবন, ১৩৫ নম্বর ডিস্টিলারি রোডে একতলা টিনশেড বাড়ি, ওয়ারী থানার পেছনে ৪৪/বি ভজহরি শাহ স্ট্রিটে ৪ কাঠার প্লট, ৮৮ নম্বর মুরগীটোলায় ৯ কাঠা, কেরানীগঞ্জে তেঘরিয়ায় ১৫ কাঠা জমির ওপর বাড়ি, মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান এলাকায় ১০ কাঠার প্লট, শরীয়তপুর নড়িয়ায় ১২ কাঠা, পালং থানায় ২০ শতক এবং নড়িয়ায় ১৪ শতক জমির মালিক এরা দু’জন। 

সিআইডি তদন্ত করে দেখেছে, বাসায় নগদ টাকা ও সোনা রাখার পাশাপাশি ব্যাংকেও বিপুল পরিমাণ টাকা জমা রাখেন এনু ও রুপন ভূঁইয়া।

সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) ইমতিয়াজ আহমেদ জানান, এনু-রুপনের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনের মামলাগুলোর তদন্ত কাজ শেষ হয়েছে। যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

২০১৯ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর এনামুল হক এনু ও রুপন ভূঁইয়াদের পুরনো ঢাকার বানিয়ানগরের বাসায় এবং তাদের দুই কর্মচারীর বাসায় অভিযান চালায় র‌্যাব। সেখান থেকে নগদ পাঁচ কোটি টাকা এবং সাড়ে সাত কেজি স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় সূত্রাপুর ও গেণ্ডারিয়া থানায় তাদের নামে ছয়টি মামলা হয়। 

এবছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি এনু-রুপনের লালমোহন সাহা স্ট্রিটের বাসায় অভিযান চালায় র‌্যাব। ওই বাড়ি থেকে ২৬ কোটি ৫৫ লাখ ৬০০ টাকা জব্দ করা হয়। আর ৫ কোটি ১৫ লাখ টাকার এফডিআরের কাগজ এবং এক কেজি স্বর্ণ জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় দুই ভাইয়ের নামে আরো দুটি মামলা হয়। অন্যদিকে, দুর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক) এনু-রুপনের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়-বহির্ভুত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে পৃথক দুটি মামলা করেছে। মামলায় এনুর বিরুদ্ধে ২১ কোটি ৮৯ লাখ ৪৩ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের এবং রুপনের বিরুদ্ধে ১৪ কোটি ১২ লাখ ৯৫ হাজার ৮৮২ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে দুদক এখনও আদালতে কোনো প্রতিবেদন জমা দেয়নি। এনু-রুপনের আয়ের বড় উৎস ছিল মতিঝিলের ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে ক্যাসিনো ব্যবসা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন