নেতাদের ‘মিশ্র বার্তায়’ আস্থা কমেছে মানুষের, খারাপের দিকে যাচ্ছে পরিস্থিতি

বণিক বার্তা ডেস্ক

বিশ্বের অনেক দেশই কভিড-১৯ নিয়ে ভুলপথে রয়েছে। সরকারগুলো যদি এখনই সঠিক ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করে, তবে করোনাভাইরাস মহামারী আরো খারাপ থেকে খারাপতর অবস্থার দিকে যাবে বলে সতর্ক করে দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।

ডব্লিউএইচওর মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম গেব্রেইসাস বলেন, বেশ কিছু দেশ ভুলপথে ছুটছিল। যেসব দেশে প্রমাণিত ব্যবস্থা খাপ খায়নি কিংবা অনুসরণ করা হয়নি সেখানে সংক্রমণ বাড়ছে।

বিশ্বে সংক্রমণের কেন্দ্র এখন আমেরিকা অঞ্চল। এর মধ্যে শীর্ষে যুক্তরাষ্ট্র, যেখানে সংক্রমণ ৩৪ লাখেরও বেশি, মৃত্যু ১ লাখ ৩৫ হাজার ছাড়িয়েছে। এই দেশটিতে আবার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মধ্যে বিভেদ চরমে উঠেছে। ডব্লিউএইচও পরিচালকের বক্তব্যে এসব বিষয়ই উঠে এসেছে। 

সোমবার (১৩ জুলাই) সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে এক বিফ্রিংয়ে তেদ্রোস বলেন, নেতাদের কাছ থেকে ‘মিশ্র বার্তা’ যাওয়ায় মহামারী নিয়ন্ত্রণের কাজে সাধারণ মানুষের মধ্যে আস্থা কমে এসেছে। তার কথায়, ভাইরাসটি এখনো মানুষের এক নম্বর শত্রু হিসেবে বহাল, কিন্তু অনেক সরকার ও জনসাধারণের পদক্ষেপে তার কোনো প্রতিফলন নেই।

ড. তেদ্রোস বলেন, নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, হাত ধোয়া ও মাস্ক পরার মতো বিধিগুলো গুরুত্বের সঙ্গে পালন করা প্রয়োজন। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, অতীতের মতো স্বাভাবিক জীবন খুব নিকট ভবিষ্যতে দেখা যাচ্ছে না। তার কথায়, মৌলিক বিষয়গুলো যদি অনুসরণ না করা হয়, তবে একটিমাত্র ব্যাপারই ঘটবে, মহামারীটি চলতেই থাকবে। এটি খারাপ থেকে খারাপ এবং আরো খারাপ হতেই থাকবে। 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইমার্জেন্সি ডিরেক্টর ড. মাইক রায়ান মনে করেন, আমেরিকা অঞ্চলে লকডাউনের কিছু ব্যবস্থা শিথিল করায় এবং অনেক অঞ্চলে সবকিছু পুনরায় খুলে দেয়ার ফলেই সংক্রমণ তীব্র হয়ে উঠেছে। 

লাতিন আমেরিকা অঞ্চলে করোনাভাইরাসে মৃত্যু হয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার মানুষের। যদিও বলা হচ্ছে, পর্যাপ্ত পরীক্ষা করা হলে সংক্রমণ ও মৃত্যু দুটোই সেখানে আরো বেশি হতে পারে। 

লাতিন আমেরিকার অর্ধেক মৃত্যুই আবার ব্রাজিলে। দেশটির প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারো নিজেই সাধারণ মানুষের মাস্ক পরার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন এবং তিনি প্রকাশ্যে মাস্কহীন সমর্থকদের সঙ্গে সাক্ষাতও করেছেন। সেই বলসোনারো এখন করোনা পজিটিভ।

ড. রায়ান বলেন, বিশাল অঞ্চলব্যাপী লকডাউন অর্থনীতির ওপর অনেক বড় প্রভাব ফেলে একথা সত্যি, কিন্তু ভাইরাসটির বিস্তার রুখতে নির্দিষ্ট অঞ্চল ধরে ধরে স্থানীয়ভাবে লকডাউন কার্যকর করা জরুরি হয়ে পড়েছে। 

তিনি সরকারগুলোর প্রতি সনির্বন্ধ অনুরোধ জানান যেন ‘সুনির্দিষ্ট’ ও ‘শক্ত’ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। তিনি যোগ করেন, ‘নাগরিকদের বুঝতে হবে এবং তাদের জন্য নিয়ম পালন করা যেন সহজ হয় সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে।’

ড. রায়ান আরো বলেন, ‘ভাইরাসের সঙ্গেই কীভাবে বেঁচে থাকা যায় সেটি শিখতে হবে আমাদের।’ তিনি মনে করেন না, কয়েক মাসের মধ্যেই করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন এসে যাবে। 

এছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই কর্মকর্তা মনে করেন, কভিড-১৯ থেকে সেরে ওঠা রোগীর মধ্যে ইমিউনিটি তৈরি হয় কিনা, কিংবা তৈরি হলেও তা কতদিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়, সে ব্যাপারে এখনো নিশ্চিত হতে পারেননি তারা। অবশ্য সোমবার লন্ডনের কিংস কলেজের এক স্টাডি বলেছে, ইমিউনিটি হয় খুব স্বল্পমেয়াদি।

সূত্র: বিবিসি 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন