নভেল করোনাভাইরাস

চট্টগ্রামে নমুনা পরীক্ষায় অনাগ্রহে কমেছে শনাক্তের হার

দেবব্রত রায় চট্টগ্রাম ব্যুরো

চট্টগ্রামে গতকাল পর্যন্ত নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে ১১ হাজার ছাড়িয়েছে। গত জুনে চট্টগ্রামে সবচেয়ে বেশি মানুষের শরীরে ভাইরাসটি শনাক্ত হয়। তবে এক সপ্তাহ ধরে শনাক্তের হার একদম কমে গেছে। একই সঙ্গে কমেছে নমুনা পরীক্ষার হারও।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরীক্ষার ফলাফল পেতে দেরি হওয়া, সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন হওয়া, টেস্টিং ফি আরোপসহ বিভিন্ন কারণে মানুষের মধ্যে ভাইরাস পরীক্ষার আগ্রহ নষ্ট হয়ে গেছে। এজন্য এক মাসের ব্যবধানে শনাক্তের হার ৩৫ থেকে নেমে ২০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এখন কোনো নমুনা জট নেই। তার পরও যাদের উপসর্গ আছে তারা ঘরেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। কারণে টেস্টিং ল্যাবগুলোয় মানুষের করোনার নমুনা পরীক্ষার ভিড় নেই।

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের নমুনা পরীক্ষার বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চট্টগ্রাম মহানগরে এবং উপজেলা শহরে গত মে মাসের শেষের দিকে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকে। ২৭ মে থেকে জুন পর্যন্ত আটদিনে করোনা শনাক্তের হার ছিল ৩৫ দশমিক ১৬ শতাংশ। মে থেকে ১১ জুন পর্যন্ত করোনা শনাক্তের হার ছিল ২৮ দশমিক ১০ শতাংশ। ১২-১৯ জুন পর্যন্ত প্রায় ২৫ শতাংশ। ২০-২৫ জুন পর্যন্ত প্রায় ২৩ শতাংশ। অন্যদিকে ২৬ জুন থেকে জুলাই পর্যন্ত করোনা শনাক্তের হার প্রায় ২১ শতাংশ, -১২ জুলাই পর্যন্ত করোনা শনাক্তের হার প্রায় ২০ শতাংশে নেমে এসেছে।

এদিকে নমুনা জট থাকার কারণে -১০ জুন পর্যন্ত গড়ে হাজার ২০০-এর উপর নমুনা পরীক্ষা করা হলেও গত দুইদিনে নমুনা সংকটের কারণে পরীক্ষা হয়েছে মাত্র হাজার ২২টি। তবে দ্রুত ফলাফল পাওয়ার জন্য বেসরকারি দুটি ল্যাবে করোনার নমুনা পরীক্ষার হিড়িক পড়েছে দেশে অবস্থান করা প্রবাসীদের।

চট্টগ্রামে বিভিন্ন করোনা টেস্টিং বুথ সূত্রে জানা গেছে, মে মাসের মাঝামাঝি থেকে জুনের মাঝামাঝি পর্যন্ত গড়ে হাজারের উপরে নমুনা নেয়া হলেও গত সপ্তাহ থেকে নমুনা সংগ্রহের পরিমাণ গড়ে ৫০০ থেকে ৬০০তে নেমে এসেছে। এখন চট্টগ্রামের সরকারি এবং বেসরকারি ল্যাবে গড়ে দেড় হাজারের বেশি করোনার নমুনা পরীক্ষা করার সক্ষমতা আছে। তবে নমুনা কমে যাওয়ার কারণে সেই সক্ষমতা ব্যবহার করতে পারছে না ল্যাবগুলো।

এদিকে চট্টগ্রামে এখন নমুনা জট না থাকলেও সরকারি ল্যাবগুলো গত সপ্তাহজুড়েই নমুনা সংকটে পড়েছে। এমনকি নমুনা সংকট বেড়ে যাওয়ায় সিভাসু, বিআইটিআইডি, চমেক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আগের তুলনায় পরীক্ষা নেমে এসেছে অর্ধেকে। গত সপ্তাহে যে ল্যাবগুলোয় দেড় হাজারের কাছাকাছি নমুনা পরীক্ষা করা হতো, বতর্মানে ৫০০ থেকে ৭০০তে নেমে এসেছে। এমনকি গত ১১-১২ জুন নমুনা না থাকায় সিভাসু কোনো করোনার নমুনা পরীক্ষা করতে পারেনি।

চট্টগ্রামে ফৌজদারহাট বিআইটিআইডির ল্যাবপ্রধান ডা. শাকিল আহমেদ বণিক বার্তাকে বলেন, কিছুদিন ধরে প্রতিদিনের চাহিদার অর্ধেক নমুনা পাচ্ছি। কারণে নমুনা পরীক্ষা কমে গেছে। এমনকি নমুনা কম আসায় সিভাসুতে গত দুইদিনে তা পাঠাতে পারিনি, যার কারণে বিআইটিআইডিতে নমুনা পরীক্ষা অর্ধেকে নেমে এসেছে। অন্যদিকে সিভাসুতে গত দুইদিন কোনো নমুনা পরীক্ষা করানো সম্ভব হয়নি। ঈদের সময়কে কেন্দ্র করে আবার যাতে সংক্রমণ না বাড়ে সেজন্য আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন সেখ মো. ফজলে রাব্বি বণিক বার্তাকে বলেন, চট্টগ্রামের পাঁচটি এবং কক্সবাজারের একটি ল্যাবে করোনা পরীক্ষার সক্ষমতা বেড়েছে। কিন্তু এখন সেই সক্ষমতা ব্যবহার করতে পারছি না। জুনের শুরু থেকে ২০ জুন পর্যন্ত পরীক্ষায় শনাক্তের হার ৩০-৩৫ শতাংশ ছিল। কয়েক দিন ধরে আমরা পর্যবেক্ষণ করছি, আক্রান্তের সংখ্যা ২০ শতাংশের নিচে নেমে আসছে। এখন আক্রান্ত সংখ্যা কমেছে।

নমুনার সংখ্যা কমে আসার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, টেস্টিং বুথে কয়েক দিন আগেও নমুনা দেয়ার জন্য ভিড় ছিল অনেক বেশি। এখন সেটা নেই। নমুনা জটও এখন আর নেই। নমুনা কম থাকার কারণে ল্যাবগুলোয় পরীক্ষা কমে গেছে। তাছাড়া এখন জট না থাকায় নমুনার ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে দ্রুততম সময়ের মধ্যে। তবে আমরা নমুনা পরীক্ষা কম আসছে বলে স্বস্তিতে আছি এমন না। সামনে কোরবানির ঈদ। সেজন্য আমাদের সতর্কতা বজায় রেখে চলতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন