নভেল করোনাভাইরাসের কারণে এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন (অ্যাপেক) অঞ্চলের অর্থনীতি পূর্বানুমানের চেয়ে আরো গভীর সংকোচনে পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অ্যাপেক পলিসি সাপোর্ট ইউনিটের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ আশঙ্কা করা হয়েছে। খবর মডার্ন ডিপ্লোমেসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছর অ্যাপেক অঞ্চলের অর্থনীতিতে ৩ দশমিক ৭ শতাংশ সংকোচন দেখা যেতে পারে। ফলে সার্বিকভাবে এ অঞ্চলে অর্থনৈতিক উৎপাদন কমতে পারে ২ লাখ ৯০ হাজার কোটি ডলার। এর আগে গত এপ্রিলে ২ দশমিক ৭ শতাংশ সংকোচনের প্রাথমিক পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল।
অ্যাপেক পলিসি সাপোর্ট ইউনিট এমন এক সময়ে তাদের সংকোচনের পূর্বাভাস বাড়াল, যখন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) গোটা বিশ্বেরই সংকোচনের পূর্বাভাস বাড়িয়েছে। সম্প্রতি আইএমএফ জানায়, মহামারীর কারণে চলতি বছর বিশ্ব অর্থনীতিতে ৪ দশমিক ৯ শতাংশ সংকোচন দেখা যেতে পারে, যেখানে তাদের আগের পূর্বাভাস ছিল ৩ শতাংশ সংকোচনের।
অ্যাপেক পলিসি সাপোর্ট ইউনিটের পরিচালক ড. ডেনিস হিউ বলেছেন, ‘করোনা মহামারীর ব্যাপ্তিকাল দীর্ঘায়িত হচ্ছে। ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাবও পড়ছে পূর্বানুমানের চেয়ে বেশি। বিশেষ করে যখন কয়েকটি দেশে নতুন করে সংক্রমণের খবরও পাওয়া যাচ্ছে।’
ড. হিউ আরো বলেছেন, ‘অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের লক্ষণ যে একেবারেই নেই, তা নয়। তবে এটি অনেকাংশেই নির্ভর করছে প্রতিষেধক সহজলভ্য হওয়া ও সুচিকিৎসার ওপর। এছাড়া মহামারী মোকাবেলায় বিভিন্ন দেশের সরকার যেসব আর্থিক নীতি গ্রহণ করেছে, সেগুলোর কার্যকারিতাও অর্থনৈতিক উত্তরণের গতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’
প্রতিবেদনে ধারণা করা হয়েছে, আগামী বছর ৫ দশমিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়াতে পারে অ্যাপেক অঞ্চলের অর্থনীতি। তবে তা নির্ভর করছে চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধের মধ্যে মহামারীকে নিয়ন্ত্রণে আনা যায় কিনা, তার ওপর।
নভেল করোনাভাইরাসের বিস্তার প্রতিরোধে সারা বিশ্বের মতো অ্যাপেক অঞ্চলও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ও কঠোর লকডাউনের কবলে পড়েছে। আর এসবের কারণে গৃহস্থালি ভোক্তা ব্যয়, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ কার্যক্রমে স্থবিরতা নেমে এসেছে। ফলে বছরের প্রথম প্রান্তিকে এ অঞ্চলের প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ২ শতাংশ কমে যায়।
বছরের প্রথম তিন মাসে অ্যাপেক অঞ্চলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পণ্য বাণিজ্য। দুটি বিষয় এক্ষেত্রে যুগপৎ প্রভাব ফেলেছে। প্রথমত, বাণিজ্য উত্তেজনা। দ্বিতীয়ত, সরবরাহ ব্যবস্থার স্থবিরতা। অ্যাপেক পলিসি সাপোর্ট ইউনিটের গবেষক ও প্রতিবেদনটির লেখক রিয়া সি হার্নান্দো বলেছেন, ‘সার্বিকভাবে পরিমাণ ও মূল্য—উভয় দিক থেকেই অ্যাপেক অঞ্চলে পণ্য বাণিজ্য কমেছে। বিশেষ করে খাদ্য ও ওষুধ সরবরাহে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আরোপের কারণে প্রথম প্রান্তিকে বণিজ্যের দুরবস্থা আরো বেড়েছে।’
উল্লেখ্য, প্রথম তিন মাসে মূল্যের ভিত্তিতে অ্যাপেক অঞ্চলের রফতানি বাণিজ্য কমেছে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। আর আমদানি কমেছে ৪ দশমিক ১ শতাংশ।
গত বছর অঞ্চলটিতে প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ কমেছে ৩ দশমিক ১ শতাংশ। আর গ্রিনফিল্ড ইনভেস্টমেন্ট কমেছে ২০ দশমিক ৪ শতাংশ।
করোনা মহামারীকে ঘিরে এ মুহূর্তে জনস্বাস্থ্য ও অর্থনীতিতে চরম অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। এ অবস্থায় অ্যাপেক অর্থনীতিগুলোকে সর্বোচ্চ কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে
পলিসি সাপোর্ট ইউনিট। এর মধ্যে রয়েছে করোনার দ্বিতীয় প্রকোপ যেন ফিরে আসতে না পারে, সেজন্য নিশ্ছিদ্র প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়া। একই সঙ্গে মানুষ যেন চরম দারিদ্র্যের কবলে না পড়ে এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো যেন ঋণখেলাপি না হয়, তা নিশ্চিত করতে প্রণোদনামূলক আর্থিক ও মুদ্রানীতিও অব্যাহত রাখতে হবে।
এছাড়া সদস্য দেশগুলোকে ডিজিটাল প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্যও আহ্বান জানানো হয়েছে প্রতিবেদনে। এসব বিনিয়োগের মধ্যে রয়েছে প্রযুক্তিগত অবকাঠামো সম্প্রসারণ, কর্মীদের ডিজিটাল দক্ষতা বাড়ানো এবং ব্যবসা ও সুশাসন প্রক্রিয়ার আধুনিকীকরণ। এ ধরনের বিনিয়োগের ফলে অর্থনীতি আরো বেশি উদ্ধাবনী ও গতিশীল হবে।
