সাত-সতেরো

মস্তিষ্কের মালিকানা!

মো. আব্দুল হামিদ

এক রাজা হঠাৎ ঘোষণা করলেন, তিনি রাজদরবারের সব জিনিস বণ্টন করে দেবেন। বলা হলো, পরদিন সূর্যোদয়ের সময় যে ব্যক্তি যে জিনিস ধরে দাঁড়িয়ে থাকবে, সে- সেটার মালিক হয়ে যাবে! ভোরবেলা দেখা গেল রানী, সভাসদ. পাইক-পেয়াদা সবাই নিজেদের পছন্দমতো সম্পদ ধরে দাঁড়িয়ে আছে। রাজা সিংহাসনে এসে বসলেন। দীর্ঘদিন তার সেবা করা এক দাসী রাজার আসনে হাত দিয়ে পেছনে দাঁড়িয়ে রইল। চূড়ান্ত ঘোষণা দেয়ার আগে রাজা সেই দাসীকে লক্ষ করে বললেন, সবাই কিছু না কিছু নিয়েছে; তুমি কেন নিলে না?

দাসী বলল, হুজুর, আমি তো নিয়েছি! রাজা অবাক হয়ে বললেন, কই স্বর্ণ-মণি-মাণিক্য কোনো জিনিসই তো তুমি ধরে দাঁড়াওনি। তাহলে তোমাকে দেব কী করে? সে বিনয়ের সঙ্গে বলল, হুজুর, আমি তো আপনাকে ধরে আছি! রাজা তার বুদ্ধিমত্তায় মুগ্ধ হলেন। তাই ঘোষণা দিলেন, রাজাকে লাভ করায় (খুব সংগত কারণেই) এখন থেকে প্রাসাদের সব সম্পদের মালিক হবে সেই দাসী! খুব ছোটবেলা আব্বার কাছে গল্পটা শুনেছিলাম। গল্প তো গল্পই, বাস্তবের সঙ্গে তার মিল খুঁজতে যাওয়া নিতান্তই অমূলক, তাই না?

আমার কিন্তু তা মনে হয় না। একটা গল্প শত-সহস্র বছর দেশ-দেশান্তরে টিকে থাকা মোটেই সহজ ব্যাপার নয়। তার মধ্যে এমন কোনো শিক্ষা, উপাদান বা বিনোদন থাকে, যা স্থান-কাল-পাত্রের সীমানা অতিক্রম করে তার উপযোগ ধরে রাখতে পারে। নইলে সেটা হারিয়ে যেত। যেমন আমাদের শৈশবে রুনা লায়লার একটা গান খুব বিখ্যাত ছিল—‘বন্ধু তিনদিন তোর বাড়ি গেলাম দেখা পাইলাম না। এখন কি আর সেটা শোনা যায়? না, কারণ একটা ছোট বাচ্চাও বলবে, এত কষ্ট করে যাতায়াতের কী দরকার ছিল? মোবাইল ফোনে একটা কল করেই তো আলাপ সারা যায়! যাহোক, রাজার সেই গল্পের মূল উপজীব্য হলো, যদি মালিকানা লাভের সুযোগ আসে (বা থাকে), তবে সবচেয়ে দামি বস্তুটির মালিক হও, তাই না?

ভাবছেন, রাজাদের আমল তো সেই কবেই বিদায় নিয়েছে। দাস বা ঔপনিবেশিক প্রথারও অবসান হয়েছে ঢের আগে। আধুনিক এই যুগে মানুষের মালিকানা প্রশ্ন একেবারেই অর্থহীন! সত্যিই কি তাই? একবার ভাবুন তো গত দুই দশকে বিকাশমান এবং সবচেয়ে প্রভাব বিস্তারকারী কোম্পানিগুলোর মূল সম্পদ কী? তাদের প্রতিষ্ঠানের সম্পদের পরিমাণ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। কিন্তু প্রচলিত ধারার অবকাঠামো কিংবা স্থাবর সম্পত্তি কি সেভাবে বাড়ছে? বরং করোনা আঘাত হানার পর তাদের বিদ্যমান অফিস স্পেসগুলোও কমিয়ে ফেলছে! তাহলে ঠিক কোন জিনিসের ওপর অধিকার তাদের সম্পদ বাড়তে সাহায্য করছে, ভেবেছেন কখনো? সেটা হলো আপনার, আমার মস্তিষ্ক! কি বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে?

আচ্ছা, এখন কয়টা বাজে? ঠিক এই মুহূর্তে আপনার কী করার কথা ছিল? হয় গভীর ঘুমে কিংবা অফিসের কাজে ব্যস্ত থাকার কথা ছিল। অফটাইম হলে নিদেনপক্ষে পরিবারকে সময় দেয়া উচিত ছিল। কিন্তু কী আজব ব্যাপার, আপনি সবকিছু অবজ্ঞা করে আমাকে সময় দিচ্ছেন! আজকের দিনের কার্যসূচিতে আমার নিবন্ধ পড়ার জন্য কি বিশেষ কোনো সময় বরাদ্দ ছিল? অবশ্যই না। তার পরও নিজের কাজে হেলা করে লেখাটা পড়ছেন! কিন্তু কেন?

বলতে পারেন, আপনার লেখা পড়লে অনেক কিছু জানা যায়। যদি বলি, জেনে কী লাভ? নেট থেকে প্রতিদিন তো হাজারো বিষয় জানেন। তার ঠিক কয়টা নিজের জীবনে কাজে লাগান? একটা দারুণ লেখা পড়া শেষে তার প্রভাব (আপনার মস্তিষ্কে) কতক্ষণ স্থায়ী হয়? ৩০ সেকেন্ড নাকি মিনিট? এই নিবন্ধ শেষ হওয়ার পর পরই যদি আরিফ আজাদের একটা স্ট্যাটাস নজরে আসে, সেটা পড়বেন না? জনাব আজহারী, তাহেরী, আব্বাসীর ওয়াজ? ট্রাম্পের অমিয় বাণী, ফাঁস হওয়া কারো ফোনালাপ, ওয়েবসিরিজ নির্মাতাদের সার্ফএক্সেল দিয়ে ধুয়ে দেয়া রোস্টিং, সর্বকালের সেরা দশটি গোল কিংবা বিশেষ কোনো গুরুর যোগব্যায়ামের ভিডিও?

এখনো বুঝতে কষ্ট হচ্ছে? ছোটবেলা শুনতাম সন্ন্যাসীরা নির্বিঘ্ন তপস্যা করার জন্য জঙ্গলে আস্তানা গাড়েন। দুনিয়াবি সব প্রকার স্বার্থ থেকে নিজেদের সযত্নে দূরে রাখেন। অথচ এখন তাদের চ্যানেলে থাকে ছয় মিলিয়ন সাবস্ক্রাইবার! কেউ আবার (. বিলিয়ন ডলারের মালিকানায়) হন ভারতের অষ্টম শীর্ষ ধনী! জনাব, হাল আমলে একেকজনের পণ্য একেকটা। কিন্তু টার্গেট অভিন্ন। সেটা হলো, আমাদের উর্বর মস্তিষ্ক!

একবার ভাবুন, চীন-ভারত যদি যুদ্ধ বেধেই যায় তাহলে কী হবেএই বিশ্লেষণে আপনি পর্যন্ত ঠিক কত ঘণ্টা সময় ব্যয় করেছেন? অথচ সেটা যদি বাস্তবে হয়, তবে তা সামান্য এদিক-সেদিক করার ক্ষমতাও কি আপনার বা আমার রয়েছে? এমনকি তারা জরুরি অবস্থা ঘোষণা করায় আমাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম আকাশচুম্বী হলেও তা ঠেকাতে পারব? পেঁয়াজের দাম বাড়ার সময় কি পেরেছিলাম? তাহলে নিজের কাজ ফেলে তাদের মানচিত্র বিশ্লেষণ করার মোজেজা কী?

কারণ আমাদের মস্তিষ্কের সত্যিকার মালিকানা আর নিজেদের হাতে নেই! হাতির তুলনায় মাহুত যত ক্ষুদ্রই হোক না কেন, হাতি ঠিকই তাকে কুর্নিশ করে। অফিসের প্রহরী গা-গতরে যত লম্বা-চওড়াই হোক না কেন, বসের কাছে নিজেকে অতি ক্ষুদ্র মনে করে। কারণ সে বুঝে, শরীরের তুলনায় মাথা অনেক বেশি শক্তিশালী!

পিকনিকে নিশ্চয় হাঁড়িভাঙ্গা (অথবা হিট অ্যান্ড সেভ) খেলাটি দেখেছেন। ওই খেলার প্রধান শর্ত থাকে: নিজের হাঁড়ি অক্ষত রেখে অন্যেরটা ভাঙতে হবে। শেষ পর্যন্ত যার হাঁড়ি অক্ষত থাকে, সেই বিজয়ী হয়। ইন্টারনেট দুনিয়াও অনেকটা সেভাবে চলে। চালাকেরা নানা দক্ষতায় আমাদের হাঁড়ি ভাঙছে। আমরা নিজেদের মূল্যবান সময়, মেধা, শ্রম সবকিছু ব্যবহার করছি তাদের স্বার্থ উদ্ধারে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেটা করতে পেরে নিজেকে ধন্য জ্ঞান করছি! নিত্যদিন খোলা হাজারো চ্যানেল, সাইট, পেজ আর গ্রুপ ঠিক কাজটিই করে যাচ্ছে।

একটা উদাহরণ দিই। নোবেলের সদ্য প্রকাশিত (তামাশা) গানে ডিজলাইক দিয়ে আপনি হয়তো ভাবছেনবিরাট কিছু করে ফেললাম! কিন্তু তাতে তার আদৌ কি কিছু এসে যায়? আমাদের স্মৃতিশক্তি যে গোল্ডফিশের চেয়েও ক্ষণস্থায়ী, তা সে কিন্তু খুব ভালো করে বুঝে। নতুন ইস্যু হাতে আসার সঙ্গে সঙ্গেই তার সমালোচনা বন্ধ হয়ে যাবে, সেটাও সে খুব ভালো করেই জানত। তার ইন্টারভিউয়ে সেটাই প্রকাশ পেয়েছে! বরং রোস্ট করে, নেগেটিভ স্ট্যাটাস দিয়ে আগে যারা তার নামও জানত না, তাদের কাছে আপনি তাকে প্রমোট করেছেন। সমালোচনা করার লক্ষ্যেই অনেকে তার ভিডিও দেখেছে। ফলে তার মোট ভিউ বেড়েছে! সে কিন্তু পয়সা পায় ক্লিক-এর ওপর ভর করে; নেগেটিভ বা পজিটিভ মন্তব্যের জন্য নয়।

আপনারা জানেন কিনা, নেট দুনিয়ায় অনেকেই হেটার্স পোষেন। তাদের অপছন্দ করা ব্যক্তিদের ভিউ, রিভিউ, শেয়ার থেকে তাদের আয়ের বড় অংশ আসে! ফলে ইচ্ছা করেই তারা অনেক সময় বিতর্কিত কনটেন্ট বাজারে ছাড়েন। নোবেলের ক্ষেত্রেও অতি সক্রিয় হাজার দশেক হেটার্স থাকলেই (তার সংসার চলার জন্য) যথেষ্ট! কিন্তু প্রশ্ন হলো, তাকে পচানোর জন্য আপনি যে এত মেধা, শ্রম, সময় বিনিয়োগ করলেন, তা থেকে আপনার অর্জন কী, ভেবেছেন কখনো?

বাংলা ভাষায় দারুণ একটা শব্দ হলো ক্রীড়নক! ফুটবল যেমন পায়ে পায়ে (যথার্থ ক্রীড়নক হিসেবে) এগিয়ে যায়, তেমনি আমরাও দিনের পর দিন -টপিক থেকে সে-টপিকে এগিয়ে চলছি! একবার ভাবুন, ১৩ ঘণ্টার ভাইরাল ঘটনাটি কিন্তু আমরা মোটের ওপর ১৩ ঘণ্টাও মনে রাখিনি! গত এক মাসে আপনি ঠিক কতটা ইস্যুতে গা গরম করেছেন, স্মরণ করতে পারেন? কিন্তু দিন শেষে আপনার অর্জনটা কী? আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন করতে শেখায় না। ফলে সারা জীবনই বিনা প্রশ্নে অন্যের চাপিয়ে দেয়া মত-পথ-তত্ত্ব গ্রহণ করি। তাই দক্ষ প্লেয়াররা আমাদের নিয়ে খেলা করে। আর খেলার যথার্থ উপকরণ হয়ে আমরা ধন্য হই!

ছোটবেলা ভাবতাম বড় হলে স্বাধীন হব। পরিবারের বড় সদস্যদের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধান কমায় অনেকে হয়তো সেই আত্মতৃপ্তিতে ভুগি! কিন্তু ভাবনাচিন্তার দিক থেকে আমরা সত্যিই কতটা স্বাধীন হতে পেরেছি? বরং একেকজন একেক গোষ্ঠীর বিনা বেতনে (স্বনিয়োজিত) এজেন্ট হিসেবে কাজ করছি। অনেক ক্ষেত্রে সাদা-কালো দেখার ক্ষমতাটুকুও গুরুদের কাছে সমর্পণ করে তৃপ্তি বোধ করি। প্লট-ফ্ল্যাট কিংবা গোল্ডের মতো স্থাবর সম্পত্তির মালিকানা স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান; কিন্তু মস্তিষ্কের? উত্তর অজানা নয়।

আমরা দেখি, দখলবাজরা খাস বা পতিত জমিগুলো করায়ত্ত করতে সদা তত্পর থাকে। যে জমিতে নিয়মিত চাষবাস হয়, সেটা কিন্তু সহসা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে না। ঠিক তেমনিভাবে, অলস মস্তিষ্কগুলো সহজেই দখল হয়ে যায়। জ্ঞানের এই মহাসমুদ্রে কোনো বিশেষ জ্ঞানীর দুচার ছত্র পড়ে বা শুনেই জীবনে অনেক কিছু অর্জন করে ফেলার মানসিকতা লালনকারীরাই এমন খপ্পরে পড়ার প্রবণতা বেশি। নানা আদর্শের গুরুরা নির্বিঘ্নে যুগের পর যুগ তাদের মস্তিষ্কে চাষাবাদ করেন। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির সান্নিধ্য এই প্রবণতা কমানোর কথা ছিল। কিন্তু বাস্তবে (খুব সম্ভবত) তার উল্টোটাই হচ্ছে। কবি জীবনানন্দ দাশ যথার্থই বলেছেন: অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে -পৃথিবীতে আজ, যারা অন্ধ সবচেয়ে বেশি আজ চোখে দ্যাখে তারা!

আমার লেখার বড় সমালোচনা হলো, সমস্যা চিত্রায়ণে যতটা মনোযোগী থাকি, সমাধান প্রসঙ্গে থাকি ততটাই উদাসীন। আসলে এত জটিল বিস্তৃত সমস্যার সমাধান ঈঙ্গিত করা দুরূহ কাজ। তাছাড়া একই দাওয়াই সবার জন্য কার্যকর নয়, সেটাও বুঝতে পারি। তাই পাঠকদের ভাবনার দুয়ারটা খুলে দিতে চেষ্টা করি। অধিকাংশই তাতে কান দেয় না। নিতান্তই দুচারজন যদি সতর্ক হয়, সে আশায় ভাবনাগুলো শেয়ার করি।

তবে হ্যাঁ, আমি নিজে কীভাবে সেগুলো ডিল করি, তা বলা যায়। আমিও অডিও-ভিডিও, মুভি-নাটক, স্ট্যাটাস-নিবন্ধ প্রভৃতি সৃষ্টিশীল কাজ দেখতে গিয়ে মাঝেমধ্যে খেই হারিয়ে ফেলি। কিন্তু এক পর্যায়ে নিজেকে প্রশ্ন করিআচ্ছা, আমি তো অন্যের কাজ দেখছি; আমার নিজের কাজের খবর কী? তখন দেখি নির্ধারিত অনেকগুলো কাজ বাকি! নিজেকে তখন চলমান ওই ধারা থেকে প্রত্যাহার করে নিই। তাছাড়া পারতপক্ষে খবরজাতীয় বিষয়গুলো এড়িয়ে চলি। কারণ ইতিবাচক বিষয়ের তেমন নিউজ ভ্যালু না থাকায় প্রায়ই তারা মন খারাপ হওয়ার মতো বিষয়গুলো আমাদের সামনে হাজির করে; যা টেনশন বাড়ানো ছাড়া আর কোনো কল্যাণ করে না।

নির্দিষ্ট কিছু পেজে সংযুক্ত থাকি, যা আমার পেশাগত জ্ঞান বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। মাঝেমধ্যে বিনোদনের জন্য কিছু শো বা মুভি দেখি। ধর্মীয় জ্ঞান বৃদ্ধির আশায় আগে বিভিন্ন বক্তার ওয়াজ শুনতাম। কিন্তু এখন একই বিষয়ে তাদের কয়েকজনের বক্তব্য শুনে কোনো উপসংহারে পৌঁছতে পারি না! কোরআনের মতো এত মৌলিক আদর্শ গ্রন্থের অনুসারীদের এত প্রবল মতপার্থক্য আমাকে পীড়িত করে। আর দিনের প্রথমভাগে (খুব প্রয়োজন ছাড়া) সব প্রকার সোস্যাল নেটওয়ার্কিং এড়িয়ে চলি। কারণ তখন নির্ধারিত কাজ, পড়া লেখায় মনোনিবেশ করতে সচেষ্ট হই। মন খারাপ থাকলে নতুন কোনো বই পড়তে শুরু করি। দ্রুতই বিষয়ের গভীরে ঢুকে যাই, যা মন খারাপের কারণটা ভুলতে সাহায্য করে।

একবার ভাবুনবাথরুমে ঢুকে দেখলেন ট্যাপে পানি নেই। অথচ তখনই গোসল করা দরকার। এমন পরিস্থিতিতে সেখানে থাকা আধা বালতি পানির কতটা সদ্ব্যবহারে তত্পর হন? অথচ স্বাভাবিক সরবরাহ থাকলে কত পানি যে অপচয় হয়, তা খেয়ালই করি না! আমাদের জীবনে সময়ের ব্যাপারটাও তেমনি। করোনাকালে (অনেকের ক্ষেত্রেই) এই অমূল্য বস্তুটির অপব্যবহার ভয়ানকভাবে বেড়েছে। আর এই সুযোগে আমাদের মস্তিষ্কের দখলবাজদের হয়েছে পোয়াবারো! যে আপনি আগে আধা ঘণ্টা সময়ও সোস্যাল নেটওয়ার্কে দিতেন না, সেই আপনি এখন বেলার পর বেলা তার পেছনে ব্যয় করছেন। কিন্তু বলতে পারেন, সেখান থেকে অর্জনটা কী?

আরেকটা ভাবনার বিষয় হলো, আগে ঘণ্টার নাটক কিংবা ঘণ্টার মুভি দেখা শেষে দারুণ এক অনুভূতি হতো। পরিপূর্ণতার এক আনন্দ মনের গহিনে দীর্ঘক্ষণ বিরাজ করত। অথচ এখন ঘণ্টায় ৯০টা ভিডিও দেখেও সেই তৃপ্তি হয় না! ভালো একটা বই পড়ে শেষ করলে বড় টুর্নামেন্ট জেতার আনন্দ হয়। অথচ শতাধিক ফেসবুক স্ট্যাটাস বা -বুক পড়া শেষে সেই মজাটা আর ধরা দেয় না। আগে দিন শেষে ক্ষণিকের বিনোদন মনে যে প্রশান্তি আনত, এখন বিনোদনের সাগরে হাবুডুবু খেয়েও তার সন্ধান মেলে না! বরং এক ধরনের অস্থিরতা আমাদের প্রতিনিয়ত তাড়া করে ফিরছে। ইহজনমে এর হাত থেকে মুক্তি মিলবে বলে মনে হয় না!

 

মো. আব্দুল হামিদ: শাহজালাল বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের শিক্ষক এবং ফেইলিওর ইন সেলস বইয়ের লেখক

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন