চীনবিরোধী মনোভাব

ভারতে ব্যবসা বাড়ানোর সুযোগ দেখছে স্যামসাং

বণিক বার্তা ডেস্ক

ভারতীয়দের মধ্যে চীনবিরোধী মনোভাব ক্রমান্বয়ে জোরালো হচ্ছে। ভারতে বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের পক্ষ থেকে চীনা পণ্য বর্জনের ডাক দেয়া হচ্ছে। ভারত-চীন সীমান্ত উত্তেজনার জেরে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে ভারতে ব্যবসা জোরদারের সুযোগ হিসেবে দেখছে স্যামসাং। তথ্যপ্রযুক্তি পণ্যের বৃহত্তম বাজার ভারতে চীনভিত্তিক ডিভাইস ব্র্যান্ডগুলোর কারণে টানা কয়েক বছর ধরে খারাপ সময় পার করছে প্রতিষ্ঠানটি। খবর ইটি টেলিকম।

শুধু চীনা ইলেকট্রনিকস ডিভাইসই নয়; চীনবিরোধী মনোভাবের জেরে ভারতে এরই মধ্যে ৫৯টি চীনা অ্যাপ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সোস্যাল মিডিয়ায় চীনা অ্যাপ আনইনস্টলের দাবি ক্রমান্বয়ে জোরালো হচ্ছে। নিষিদ্ধের তালিকায় টিকটক, ইউসি ব্রাউজার, শেয়ারইট, বিগো লাইভ হেলোর মতো জনপ্রিয় অ্যাপ রয়েছে। চীনা এসব অ্যাপকে দেশটির সার্বভৌমত্ব অখণ্ডতা, প্রতিরক্ষা এবং জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি উল্লেখ করা হয়েছে।

ভারত সরকারের দাবি, চীনা অ্যাপগুলো দেশ দেশের নাগরিকদের জন্য বিপজ্জনক। যে কারণে স্মার্টফোন ট্যাবলেটসহ সব ধরনের গ্যাজেটে অ্যাপগুলোর ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ভারতীয়দের ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষাদান এবং দেশের সার্বিক নিরাপত্তার জন্যই অ্যাপগুলো নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। নিষিদ্ধ হওয়া অ্যাপ তালিকায় ভারতে জনপ্রিয় অ্যাপ উইচ্যাটও রয়েছে। চীনা অ্যাপ বন্ধ করার ঘটনায় ভারত-চীন সীমান্ত উত্তেজনা আরো বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতীয়দের চীনা পণ্য বর্জনের ঘোষণায় অনেক বহুজাতিক ব্র্যান্ডের জন্য দেশটিতে ব্যবসা জোরদারের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে, চীনের বাইরের ডিভাইস ব্র্যান্ডগুলোর জন্য ভারত-চীনের সীমান্ত উত্তেজনা আশীর্বাদ হয়ে দেখা দিয়েছে। কারণ তিন বছর আগেও ভারতের স্মার্টফোন বাজারে একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল স্যামসাংয়ের। কিন্তু শাওমি, অপো ভিভোর মতো চীনা ব্র্যান্ডগুলোর দৌরাত্ম্যে বাজারটিতে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে

স্যামসাং। দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটিকে হটিয়ে এরই মধ্যে ভারতের স্মার্টফোন বাজারে শীর্ষ অবস্থানে জায়গা করে নিয়েছে শাওমি। এছাড়া বাজারটিতে দ্বিতীয় অবস্থানও আরেকটি চীনা ডিভাইস ব্র্যান্ডের কাছে হারিয়েছে স্যামসাং। সীমান্ত উত্তেজনার জেরে সৃষ্ট পরিস্থিতিকে স্মার্টফোন ডিভাইসের দ্বিতীয় বৃহৎ বাজারটিতে নিজেদের অবস্থান পুনরুদ্ধারের সুযোগ হিসেবে দেখছে প্রতিষ্ঠানটি। যে কারণে দেশটিতে উপস্থিতি বাড়াতে কাজ করছে।

কেবি সিকিউরিটিসের বিশ্লেষক লি চেং-মিন বলেন, ভারতে চীনে উৎপাদিত ভোক্তা পণ্য সরবরাহ স্মরণকালের সংকটপূর্ণ সময় পার করছে। চীনবিরোধী মনোভাবের কারণে ভারতে চীনা স্মার্টফোন বিক্রি উল্লেখ কমার আশঙ্কা করছে সংশ্লিষ্টরা। এটাকে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগাতে চায় স্যামসাং। নিয়ে প্রস্তুতিও সম্পন্ন করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চের তথ্যমতে, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) ভারতের বাজারে শীর্ষ পাঁচ স্মার্টফোন ব্র্যান্ডের মধ্যে চারটিই ছিল চীনা। শীর্ষ পাঁচে নন-চীনা ব্র্যান্ড হিসেবে একমাত্র স্যামসাং জায়গা পেয়েছিল। জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে ভারতের স্মার্টফোন বাজারের ৩০ শতাংশ দখলে নিয়ে শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছিল শাওমি। বাজারটির ১৭ শতাংশ দখলে নিয়ে দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে ভিভো। অন্যদিকে ক্রমবর্ধমান বাজারটির ১৪ এবং ১২ শতাংশ দখলে নিয়ে যথাক্রমে চতুর্থ পঞ্চম শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে রিয়েলমি অপো। এক সময় শীর্ষে থাকা স্যামসাং জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে ভারতের স্মার্টফোন বাজারের ১৬ শতাংশ দখলে নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে নেমেছে।

ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নতুন করে আলোচনায় ভারত-চীন। এর জের ধরে আবারো দুই দেশের মধ্যে শুরু হয়েছে তিক্ত সম্পর্ক। এরই মধ্যে দুই দেশের মধ্যেই পরস্পরবিরোধী মনোভাব প্রকট আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে ভারতের দিক থেকে চীনবিরোধী মনোভাব স্পষ্ট হয়ে উঠে এসেছে। অবস্থায় ভারতের বাজারে চীনা পণ্য বয়কট করার কারণে স্যামসাং এলজি উপকৃত হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

বিশ্লেষকদের মতে, ভারতের বাজারে চীনা প্রযুক্তিপণ্যের একচেটিয়া আধিপত্যে ভাটা পড়তে শুরু করেছে। সুযোগ কাজে লাগাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে স্থানীয় একাধিক ব্র্যান্ডসহ চীনের প্রতিদ্বন্দ্বী স্যামসাং এলজির মতো বিদেশী ব্র্যান্ডগুলো। স্যামসাংয়ের মতোই দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক ইলেকট্রনিক পণ্য নির্মাতা এলজি আবারো ভারতের স্মার্টফোনের বাজার ধরতে চায়। দেশটিতে চীনবিরোধী মনোভাবের জন্য এটিই সবচেয়ে বড় সুযোগ বলে মনে করছে এলজি।

ভারতের স্মার্টফোন বাজারের আধিপত্য এখন গ্রেট ওয়াল বা চীনের হাতে। ফলে স্থানীয় ব্র্যান্ডগুলো চীনা পণ্যের সঙ্গে পেরে উঠতে সক্ষম হচ্ছে না। একই অবস্থা বিদেশী ব্র্যান্ডগুলোর। কারণে বর্তমান সময়কে স্যামসাং এলজির মতো বিদেশী ব্র্যান্ডের নতুন করে বাজার ধরার অন্যতম সুযোগ বলে মনে করা হচ্ছে। এরই অংশ আগামী দিওয়ালির আগ পর্যন্ত ভারতের বাজারে স্মার্টফোনের উৎপাদন আগের তুলনায় ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি করছে এলজি। পাশাপাশি বিপণন ব্যবস্থাও সম্প্রসারিত করছে প্রতিষ্ঠানটি।

চীনবিরোধী মনোভাব যে অন্য ব্র্যান্ডগুলোর জন্য এক অর্থে আশীর্বাদ, সেটি স্পষ্ট হয়েছে এলজি ইলেকট্রনিকসের মোবাইল কমিউনিকেশন বিভাগের বিজনেস প্রধান অ্যাডভেইট ভেইদিয়ার বক্তব্যে। সম্প্রতি এক সাক্ষাত্কারে তিনি বলেন, গত দুই মাসে ভারতের বাজারে তাদের স্মার্টফোনের বিক্রি ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। চীনবিরোধী মনোভাবের কারণে অল্প সময়ের জন্য হলেও তারা বড় আকারে লক্ষ্য অর্জন করতে সক্ষম হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন