উত্তোলন কমলেও বাড়তে পারে বৈশ্বিক চাহিদা

বণিক বার্তা ডেস্ক

চলতি বছর অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক চাহিদা পূর্বাভাস বাড়িয়েছে ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি (আইইএ) তবে নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বছর জ্বালানি পণ্যটির বৈশ্বিক উত্তোলনে নিম্নমুখী প্রবণতা ফেলতে পারে বলে সতর্ক করেছে প্রতিষ্ঠানটি। খবর রয়টার্স।

প্যারিসভিত্তিক আইইএর সর্বশেষ মাসভিত্তিক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ২০২০ সালে বিশ্বজুড়ে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের চাহিদা দাঁড়াতে পারে দৈনিক গড়ে কোটি ২১ লাখ ব্যারেলে। প্যারিসভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটির আগের মাসের প্রাক্কলনের তুলনায় পণ্যটির বৈশ্বিক চাহিদা পূর্বাভাস বাড়ানো হয়েছে দৈনিক গড়ে চার লাখ ব্যারেল। মূলত চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) পণ্যটির বৈশ্বিক চাহিদা যে হারে কমার আশঙ্কা করা হয়েছিল তার তুলনায় কম কমেছে। ফলে সামগ্রিকভাবে পণ্যটির বৈশ্বিক ব্যবহারের পূর্বাভাস বাড়িয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

আইইএর সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে জ্বালানি তেলের বাজার প্রত্যাশার তুলনায় দ্রুত অগ্রগতি লাভ করেছে। তবে বৃহত্তর অর্থে বাজারটি নিয়ে অনিশ্চয়তা এখনো কাটেনি। কয়েকটি দেশ দ্বিতীয় ধাপে ফের নভেল করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের মুখে পড়েছে। ফলে মহামারী পরিস্থিতি যে নিয়ন্ত্রণে চলে আসছে এটা ভাবার কোনো সুযোগ নেই। এতে পণ্যটির উত্তোলন নিয়ে আশঙ্কা থেকেই যায় এবং চলতি বছর জ্বালানি পণ্যটির উত্তোলন উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসতে পারে।

তবে চীনসহ অনেক দেশে নভেল করোনাভাইরাস পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। এসব দেশে লকডাউন অনেকটা শিথিল করে আনা হয়েছে। শিল্প আর্থিক খাতগুলো কার্যক্রমে ফিরেছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গতি ফিরেছে। ফলে গত মে জুনে এসব দেশে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের চাহিদায় বড় ধরনের উল্লম্ফন দেখা গেছে। পণ্যটির আমদানিতে আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে চীন। চলতি মাসেও পণ্যটির চাহিদা বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আইইএ।

এদিকে বছর জ্বালানি তেলের পরিশোধন কার্যক্রম ব্যাপক হারে কমে যেতে পারে বলে সাম্প্রতিক পূর্বাভাসে জানিয়েছে আইইএ। এমনকি আগামী বছরও পণ্যটির পরিশোধন কার্যক্রম ২০১৯ সালের সমপর্যায়ে ফেরার সম্ভাবনা ক্ষীণ। অন্যদিকে আগের প্রতিবেদনের তুলনায় পণ্যটির চাহিদা পূর্বাভাস বাড়ালেও তা গত বছরের সমপর্যায়ে উঠবে না বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এমনকি ২০২১ সালে গিয়েও পণ্যটির চাহিদায় ২০১৯ সালের তুলনায় দৈনিক গড়ে ২৬ লাখ ব্যারেল কম থাকতে পারে। মূলত পরিবহন খাতে বিশেষ করে আকাশ ভ্রমণে জ্বালানি চাহিদা হ্রাস এক্ষেত্রে মূল প্রভাবক হিসেবে কাজ করবে। কেরোসিন জেট ফুয়েলের চাহিদা গত বছরের তুলনায় এক-তৃতীয়াংশ কমেছে।

তবে সময় বাজারে পণ্যটির বাড়তি সরবরাহ কমে আসার প্রত্যাশা করছে প্রতিষ্ঠানটি। এর পেছনে মূল ভূমিকা রাখতে পারে অর্গানাইজেশন অব পেট্রোলিয়াম এক্সপোর্টিং কান্ট্রিস (ওপেক) এর মিত্র দেশগুলো। মহামারীর প্রথমদিকে জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক চাহিদায় অপ্রত্যাশিত ধস নামে। সময় পণ্যটির দাম কমে শূন্য ডলারের নিচে নেমে গিয়েছিল। পণ্যটির দামে চাঙ্গা ভাব ফেরাতে এপ্রিলের শেষের দিকে করণীয় নির্ধারণে বসে ওপেক প্লাস। বৈঠকে ওপেকভুক্ত দেশ, রাশিয়া এবং অন্য সহযোগী দেশগুলো মে জুনজুড়ে জ্বালানি পণ্যটির উত্তোলন সক্ষমতার তুলনায় দৈনিক গড়ে ৯৭ লাখ ব্যারেল কমিয়ে আনার বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছে, যা পণ্যটির মোট বৈশ্বিক সরবরাহের ১০ শতাংশ। ওপেকের ইতিহাসে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো এটাই সর্বোচ্চ জ্বালানি তেলের উত্তোলন হ্রাস চুক্তি। পরবর্তী সময়ে চুক্তিটির মেয়াদ আরো এক মাস বাড়িয়ে চলতি মাসের শেষ পর্যন্ত নেয়া হয়।

চাহিদা মন্দার সময়ে বাজার থেকে উদ্বৃত্ত সরবরাহ রোধ করে জ্বালানি তেলের দামে চাঙ্গা ভাব ফেরানোর চেষ্টায় অনেকটা সফল হয়েছে ওপেক প্লাসের চুক্তিটি। অ্যাঙ্গোলা, ইরাক নাইজেরিয়া যথযথভাবে চুক্তি না মানলেও জোটটি তাদের সরবরাহ কমানো প্রতিশ্রুতির শতভাগ পূরণে সক্ষম হয়েছে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। চলতি বছরের জুনে ওপেক প্লাসের অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের উত্তোলন কমে গত তিন দশকের সর্বনিম্নে নেমেছে। গত জুনে ওপেকের ১৩টি সদস্য দেশ সম্মিলিতভাবে দৈনিক গড়ে কোটি ২৬ লাখ ৯০ হাজার ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলন করেছে, আগের মাসের তুলনায় যা দৈনিক গড়ে ১৯ লাখ ২০ হাজার ব্যারেল কম। একই সঙ্গে পণ্যটির উত্তোলনের হার ১৯৯১ সালের মে মাসের পর থেকে সর্বনিম্ন। উপসাগরীয় যুদ্ধের জের ধরে ওই সময় পণ্যটির উত্তোলন রেকর্ড কমে গিয়েছিল।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন