করোনা নেগেটিভ সনদ

বিদেশগামী সব ফ্লাইটেই বাধ্যতামূলক হচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ থেকে সুস্থ হিসেবে গেলেও অন্য দেশে গিয়ে শনাক্ত হচ্ছেন কভিড-১৯ পজিটিভ হিসেবে। সম্প্রতি বেশকিছু যাত্রীর ক্ষেত্রে ধরনের তথ্য পাওয়ায় বহির্বিশ্বে প্রশ্নের মুখে পড়ছে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া ফ্লাইটগুলো। অবস্থায় সব আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের যাত্রীদের ক্ষেত্রেই কভিড-১৯ পরীক্ষা বাধ্যতামূলক হচ্ছে। এরই মধ্যে কভিড পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত পিসিআর ল্যাবের তালিকা প্রকাশ করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস সূত্রে জানা গেছে, সংযুক্ত আরব আমিরাত ভ্রমণ করতে নির্ধারিত পিসিআর ল্যাব থেকে কভিড-১৯ টেস্ট করতে হবে প্রত্যেক যাত্রীকে। যা ১৪ জুলাই থেকে আবুধাবিগামী ১৭ জুলাই থেকে দুবাইগামী ফ্লাইটের জন্য কার্যকর হবে। যাত্রীদের সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকার নির্ধারিত পরীক্ষাগার থেকে কভিড-১৯-এর পিসিআর টেস্ট সম্পন্ন করে সার্টিফিকেট নিতে হবে। যাত্রীদের অবশ্যই পিসিআর ল্যাব থেকে যাত্রার আগের ৯৬ ঘণ্টার মধ্যে করোনা পরীক্ষা করাতে হবে। শুধু নেগেটিভ সার্টিফিকেটধারী যাত্রীরাই মধ্যপ্রাচ্যের ওই দেশটিতে ভ্রমণ করার সুযোগ পাবেন।

এর আগে জুলাই এমিরেটস এয়ারলাইনস থেকে কভিড পরীক্ষাসংক্রান্ত একটি সার্কুলার বাংলাদেশে অবস্থিত এমিরেটস অফিস, ট্রাভেল এজেন্টদের কাছে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, কভিড-১৯ নেগেটিভ সনদ ছাড়া কোনো যাত্রীকে ফ্লাইটে ওঠানো যাবে না। ওই যাত্রী সুস্থ থাকলেও এই সনদ লাগবে। আর করোনা নেগেটিভ সনদ অবশ্যই ভ্রমণের সর্বোচ্চ ৭২ ঘণ্টার মধ্যে হতে হবে। এর বেশি আগের সনদ গ্রহণযোগ্য হবে না। এছাড়া কভিড-১৯ নেগেটিভ সনদ অবশ্যই সরকার স্বীকৃত কোনো ইনস্টিটিউট বা প্রতিষ্ঠান বা হাসপাতাল থেকে সংশ্লিষ্টদের স্বাক্ষরসহ সংগ্রহ করতে হবে। সাধারণ কোনো হাসপাতালের সনদ গ্রহণযোগ্য হবে না। সনদে অবশ্যই পাসপোর্ট অনুযায়ী পুরো নাম, পিতার নাম থাকতে হবে, পাসপোর্ট নম্বর জন্ম তারিখ থাকবে হবে।

ট্রাভেল এজেন্সিগুলো বলছে, কভিড-১৯ নেগেটিভে বিভিন্ন হাসপাতাল যে সনদ দিচ্ছে সেটি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। একই সঙ্গে বাংলাদেশের দেয়া করোনা নেগেটিভ সনদ বহির্বিশ্বে গ্রহণযোগ্যতা হারাচ্ছে। কারণে বিদেশী এয়ারলাইনসগুলো ঢাকা থেকে যাত্রী পরিবহনে কভিড-১৯ পরীক্ষায় নিজেদের পছন্দমতো ল্যাবের তালিকা করছে। এরই মধ্যে ঢাকার তিনটি বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে বিষয়ে আলোচনা শুরু করেছে এমিরেটস এয়ারলাইনস। একই পথে হাঁটছে কাতার এয়ারওয়েজও।

এদিকে ১৭ জুলাই থেকে ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করবে মালয়েশিয়া এয়ারলাইনস। তবে মালয়েশিয়া এয়ারলাইনসের ফ্লাইটে আপাতত বাংলাদেশ থেকে কেবল ট্রানজিট যাত্রী, মালয়েশিয়ার নাগরিক, যারা মালয়েশিয়ার নাগরিক বিয়ে করেছেন, যারা সেকেন্ড হোম করেছেন, স্টুডেন্টস প্রফেশনাল ভিসায় যারা আছেন শুধু তারাই ভ্রমণ করতে পারবেন। মালয়েশিয়া এয়ারলাইনসের ক্ষেত্রেও প্রত্যেক যাত্রীকেই ভ্রমণের ৭২ ঘণ্টা আগে কভিড-১৯-এর সনদ নিতে হবে।

বিষয়ে মালয়েশিয়া এয়ারলাইনসের (বাংলাদেশ) জেনারেল সেলস এজেন্ট (জিএসএ) স্পিডি ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান শেখ বশির আহমেদ মামুন বণিক বার্তাকে বলেন, মালয়েশিয়া এয়ারলাইনসের ফ্লাইটে ঢাকা থেকে কুয়ালালামপুরের যাত্রীদের পাশাপাশি ট্রানজিট যাত্রীও অনেক থাকবে বলে আমরা আশা করছি। বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়ার অনেক যাত্রী আছেন যারা লকডাউনের আগে এসে দেশে আটকা পড়েছেন। তাদের পাশাপাশি থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুরসহ আরো অনেক দেশে যেতে ইচ্ছুক যাত্রীরাও আছেন। যাদের ঢাকা থেকে কুয়ালালামপুরে ট্রানজিট দিয়ে পরিবহন করবে মালয়েশিয়া এয়ারলাইনস। কারণে ঢাকা থেকে যাওয়া প্রত্যেক যাত্রীর জন্যই কভিড টেস্ট বাধ্যতামূলক করে দিয়েছে মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ। তিনি বলেন, যতটুকু জেনেছি যাত্রীদের কভিড পরীক্ষায় ঢাকায় কয়েকটি ল্যাব নির্দিষ্ট করে দেয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ।

এদিকে গতকাল পররাষ্ট্রমন্ত্রী . কে আব্দুল মোমেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক ভার্চুয়াল আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে বিদেশ গমনকারী সব বাংলাদেশীকে এখন থেকে করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট নিয়ে গমন করতে হবে। সরকার অনুমোদিত করোনা টেস্টিং সেন্টার থেকে করোনা পরীক্ষা করে সার্টিফিকেট সংগ্রহ করা যাবে।

সভায় ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের যাচাইয়ের সুবিধার্থে করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে দেয়ার বিষয়ে সভায় সুপারিশ করা হয়। তাছাড়া কর্মসংস্থানের জন্য বিদেশে গমনকারীদের করোনা পরীক্ষার সুবিধার জন্য প্রবাসীকল্যাণ বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি নিবেদিত করোনা টেস্টিং সেন্টার স্থাপনেরও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

প্রসঙ্গত, কভিড-১৯ নেগেটিভ সনদ নিয়ে যাওয়া যাত্রীদের মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছার পর পরীক্ষায় ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়ায় সম্প্রতি ইতালিতে প্রশ্নের মুখে পড়েন বাংলাদেশীরা। যার পরিপ্রেক্ষিতে এরই মধ্যে আগামী অক্টোবর পর্যন্ত ঢাকা থেকে ইতালিগামী কোনো যাত্রী না নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে কাতার এয়ারওয়েজ। একইভাবে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া চীনে যাওয়া বাংলাদেশী যাত্রীদের মধ্যেও কভিড-১৯-এর অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছিল।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন