রক্ত জমাট বাঁধা করোনাভাইরাসে প্রাণঘাতী!

বণিক বার্তা ডেস্ক

নভেল করোনাভাইরাসে মৃত্যুহার অনেক কম হলেও মৃতদের সংখ্যাটা কিন্তু কম নয়। ভাইরাসটি বিস্তৃত আকারে মানুষদের সংক্রমিত করায় মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে হু হু করে। ভাইরাসটি এখন পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে সাড়ে পাঁচ লাখের বেশি মানুষের প্রাণ নিয়েছে। কিন্তু মৃত্যুর কারণ আসলে কী? এটা জানতে বিজ্ঞানীরা দৃষ্টি দিয়েছেন মৃতদের ময়নাতদন্তের দিকে।

মধ্য মার্চের দিকে প্যাথলজিস্ট সিগুরড লাক্স বলেছিলেন, কভিড-১৯ আমাদের কাছে নতুন একটি রোগ। আমরা এটির অন্তর্নিহিত সত্যটি জানতে চাই। রোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থতা মৃত্যুর কারণ কী, তা নির্ধারণের জন্য কেবল একটি পদ্ধতি রয়েছে। আর সেটা হলো ময়নাতদন্ত করা।

লাক্স কভিড-১৯ সংক্রমণের ঝুঁকি হ্রাসের জন্য কভিড-১৯ আক্রান্ত মৃতদেহ ময়নাতদন্ত করার জন্য দুদিন অপেক্ষা করেন। মার্চে সংক্রমণ ছড়ানোর বিষয়ে খুব বেশি জানা না থাকলেও লাক্স তার সহকর্মীরা অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বনের জন্য পদ্ধতি বেছে নিয়েছিলেন। তার পরও তারা দেখেছেন মৃত্যুর ৪৮ ঘণ্টা পরও সার্স-কোভ- আরএনএ শরীরটিকে মুক্তি দেয়নি। তিনি বলেন, ভাইরাসটি তখনো সংক্রামক ছিল কিনা, তা আমরা জানি না। তবে রোগীর টিস্যুতে ভাইরাসটির জিনগত উপাদান উপস্থিত থাকায় আমরা সতর্ক হয়ে গিয়েছিলাম।

তিনি তার সহকর্মীরাই কভিড-১৯ আক্রান্ত ১১ জন রোগীর ময়নাতদন্ত করেছিলেন। এসব ময়নাতদন্তে তারা কী খুঁজে পেয়েছিলেন, সেগুলো নিয়ে মে মাসে তারা অ্যানালস অব ইন্টারনাল মেডিসিন জার্নালে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছিলেন।

অস্ট্রিয়ার জোহানেস কেপলার ইউনিভার্সিটি লিঞ্জের প্যাথলজি বিভাগের অধ্যাপক সিগুরড লাক্স ময়নাতদন্তের ফলাফল এবং ভাইরাসটির সম্ভাব্য চিকিৎসা নিয়ে দ্য সায়েন্টিস্ট ম্যাগাজিনের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ময়নাতদন্তে সবচেয়ে ক্ষতি হওয়া দেখেছি ফুসফুসে। উভয় ফুসফুসের ভারসাম্যতা এবং ফুসফুসের ক্ষুদ্র বায়ুথলি অ্যালভিওলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ফুফফুসের চারপাশে দুইটা রেখাযুক্ত ঝিল্লি প্লোরাইয়ে সামান্য প্রদাহজনিত পরিবর্তন দেখা গেছে এবং সেখানে সামান্য তরলও ছিল। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আমরা প্রসারিত হূিপণ্ড দেখেছি।

লাক্স বলেন, আমরা একাধিক পালমোনারি ধমনির উপস্থিতি দেখেছি, বিশেষ করে উপরিতলে। বৃহত্তর ধমনিগুলোতে কিছু রক্ত জমাট বাঁধা ছিল, তবে আমরা মনে করি এগুলো উপরিতলে দেখার অর্থ হলো রক্ত জমাট বাঁধা এম্বোলিকের চেয়ে থ্রম্বোটিক। এর মানে হলো রক্তনালির অভ্যন্তরে অন্য কোনো উপাদানের কারণে রক্ত জমাট বাঁধেনি, সেখানে রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থা রক্তের প্রবাহকে বাধা দেয়ার কারণে রক্ত জমাট বেঁধেছে।

এটা ফুসফুসে রক্ত জমাট বাঁধার মতো বিষয় নয়, যা মারাত্মক অসুস্থতার প্রধান কারণ। তবে এটা রক্তনালিগুলো প্রদাহ এবং রক্ত জমাট বাঁধার ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটায়। এটা ফুসফুসের ধমনিগুলোতে অবরোধের সৃষ্টি করে, যা ফুসফুসীয় সঞ্চালনের চাপকে বাড়িয়ে তোলে এবং তারপর এটি শরীরে রক্তপ্রবাহ ঠিক রাখা হূিপণ্ডের অপ্রতুলতার দিকে নিয়ে যায়। পরিশেষে যা মৃত্যু ডেকে আনে।

লাক্স বলেন, ভাইরাসটির কারণেই রক্ত জমাট বাঁধছে কিনা বা ভাইরাসের কারণে শরীরের প্রতিরোধক্ষমতার প্রতিক্রিয়ার কারণে এমনটা ঘটছে কিনা, সেটা এখনো স্পষ্ট নয়। কেউ অনুমান করতে পারে যে উভয়ই রক্ত জমাট বাঁধার কারণ, তবে আমি মনে করি এটা প্রতিরোধক্ষমতার প্রতিক্রিয়ার কারণে হতে পারে, যার প্রদাহজনিত প্রক্রিয়া রক্ত জমাট বাঁধার দিকে নিয়ে যায়।

দ্য সায়েন্টিস্ট

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন