নভেল করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট সংকট সঠিকভাবে মোকাবেলা করতে না পারার কারণেই ইসরায়েলের অর্থনীতি খাদের কিনারে চলে এসেছে। আর এ অদক্ষতার জন্য সরকার পুরোপুরি দায়ী। এমনই দাবি তুলে রাজধানী তেল আবিবে বিক্ষোভ প্রকাশ করেছে ইসরায়েলের কয়েক হাজার নাগরিক। খবর বিবিসি।
শনিবার তেল আবিবের রবিন স্কয়ারে সমবেত বিক্ষোভকারীদের মধ্যে তরুণদের সংখ্যাই বেশি ছিল। তারা সবাই মুখে মাস্ক পরে ছিল। তবে বিক্ষোভ চলাকালে তাদের সামাজিক দূরত্বের নির্দেশনা খুব একটা মানতে দেখা যায়নি।
বিক্ষোভকারীরা অভিযোগ করেছে, প্রাণঘাতী মহামারীটির সংক্রমণ প্রতিরোধে লকডাউন আরোপ করে সরকার। এ বিধিনিষেধের কারণে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা আর্থিকভাবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে। সংকট মোকাবেলায় তাদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ইসরায়েল সরকার। কিন্ত সেই ক্ষতিপূরণের অর্থ সময়মতো মিলছে না।
মূলত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, স্বনির্ভর কর্মী ও পারফর্মিং আর্ট সংশ্লিষ্ট কয়েকটি দল এ বিক্ষোভের আয়োজন করে। নভেল করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে তাদের অনেকেরই আয়ের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে অনেক কষ্টের মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে তাদের। সরকারের সহায়তা স্কিম থেকে যে অর্থ প্রদানের প্রতিশ্রুতি তাদের দেয়া হয়েছিল, তা তারা পায়নি বলে জানিয়েছে।
লকডাউন পরিস্থিতিতে সাময়িক ছুটিতে যাওয়া বেতনভুক্ত চাকরিজীবীরা সরকারের তরফ থেকে বেকার ভাতার সুবিধা পেয়েছে। কিন্তু স্বনির্ভর কর্মী ও উদ্যোক্তারা বলছে, কয়েক মাস অপেক্ষা করেও তারা সরকারের প্রতিশ্রুত অর্থ সহায়তা পাচ্ছে না।
একটি সাউন্ড ও লাইটিং কোম্পানির ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইকেল গেইস্ট-কাসিফ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘আমার মোট ৪০ জন কর্মী রয়েছে। তাদের বেতন-ভাতাদি দিতে হবে। অথচ এ মুহূর্তে আমার কোনো আয় নেই। এ কারণে আমরা চাই, স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত যেন সরকার আমাদের অর্থ সহায়তা দেয়। মার্চের মাঝামাঝি সময় থেকে শুরু, এপ্রিল, মে ও জুনের পুরোটা সময়ই আমরা কোনো কাজ করতে পারিনি। জুলাই ও আগস্টে বিপর্যয় আরো বাড়বে বলেই মনে হচ্ছে আমার।’
এদিকে সহায়তাবঞ্চিতদের দাবি-দাওয়ার বিষয়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনয়ামিন নেতানিয়াহু শুক্রবার তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন—প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে এমনটাই দাবি করা হয়েছে। নেতানিয়াহু তাদের বলেছেন, ‘আপনাদের যে অর্থ দিতে চেয়েছি, তা দ্রুত ছাড় করা হবে। আমরা আমাদের সব প্রতিশ্রুতিই পূরণ করব।’
বিশ্বজুড়ে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে মার্চের মাঝামাঝি থেকেই কঠোর লকডাউন দিয়েছিল ইসরায়েল। মে মাসের শেষের থেকে বিধিনিষেধগুলো ধীরে ধীরে শিথিল করা হয়।
জনস হপকিনস ইউনিভার্সিটির তথ্য অনুযায়ী, গতকাল সকাল পর্যন্ত ইসরায়েলে কভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে ৩৭ হাজার ৪৬৪ জন। তাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৩৫৪ জনের।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে একদিনে সর্বোচ্চ সংক্রমণ রেকর্ড করা হয় গত বৃহস্পতিবার। এদিন ১ হাজার ৫০৪ জনের শরীরে নভেল করোনাভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত হয়। করোনা প্রতিরোধে লকডাউনের কারণে ইসরায়েলে কর্মসংস্থান ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরই মধ্যে দেশটিতে বেকারত্বের হার বেড়ে ২১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।