ধস নেমেছে ভারতের চা রফতানিতে

বণিক বার্তা ডেস্ক

নভেল করোনাভাইরাসের মহামারীর জের ধরে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক শ্লথতা মন্দার আশঙ্কা অন্যান্য অনেক খাতের মতো ভারতের চা রফতানিতেও ধস নামিয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশটি থেকে পানীয় পণ্যটির রফতানি আগের অর্থবছরের তুলনায় সাড়ে শতাংশের বেশি কমে ২৪ কোটি কেজিতে নেমে এসেছে। লকডাউনে দেশটিতে কমতির দিকে রয়েছে চা উৎপাদনও। টি বোর্ড অব ইন্ডিয়ার সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে তথ্য জানানো হয়েছে। খবর ইকোনমিক টাইমস বিজনেস লাইন।

ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ চা উৎপাদনকারী রফতানিকারক দেশ। টি বোর্ড অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ভারত থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে সব মিলিয়ে ২৫ কোটি ৪৫ লাখ কেজি চা রফতানি হয়েছিল। সর্বশেষ ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশটি থেকে পানীয় পণ্যটির সম্মিলিত রফতানি দাঁড়িয়েছে ২৪ কোটি কেজিতে, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় দশমিক শতাংশ কম। সেই হিসেবে এক বছরের ব্যবধানে ভারত থেকে চা রফতানি কমেছে কোটি ৪৫ লাখ কেজি।

সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের আওতাধীন সিআইএসভুক্ত দেশগুলো ভারত থেকে রফতানি হওয়া চায়ের প্রধান ক্রেতা। সর্বশেষ অর্থবছরে এসব দেশে সব মিলিয়ে কোটি ৯৪ লাখ কেজি চা রফতানি করেছেন ভারতীয় রফতানিকারকরা। এর আগের অর্থবছরে সিআইএসভুক্ত দেশগুলোয় ভারত থেকে কোটি লাখ কেজির বেশি চা রফতানি হয়েছিল।

তবে সিআইএসভুক্ত দেশগুলোয় কমলেও সর্বশেষ অর্থবছরে ভারত থেকে ইরানে চা রফতানি বেড়েছে। সময় ইরানের বাজারে কোটি ৬৪ লাখ ৭০ হাজার কেজি চা রফতানি করেছে ভারত। আগের অর্থবছরে ভারত থেকে ইরানে রফতানি হওয়া চায়ের পরিমাণ ছিল কোটি ১০ লাখ ২০ হাজার কেজি। ভারত থেকে রফতানি হওয়া চায়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্রেতা দেশ ইরান।

মহামারীর পাশাপাশি সম্পর্কের বৈরিতার জের ধরে গত অর্থবছরে পাকিস্তানে চা রফতানি কমিয়েছে ভারত। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ভারত থেকে পাকিস্তানে কোটি ৪৬ লাখ কেজি চা রফতানি হয়েছিল। গত অর্থবছরে পাকিস্তানে পানীয় পণ্যটির রফতানি ৩৩ লাখ কেজি কমিয়ে এনেছে ভারত। তবে একই সময়ে চীনের বাজারে ভারতীয় চা রফতানি বেড়ে কোটি ২৭ লাখ কেজি ছাড়িয়ে গেছে। এর আগের অর্থবছরে চীনে সব মিলিয়ে কোটি লাখ ৮০ হাজার কেজি চা রফতানি করেছিল ভারত।

টি বোর্ড অব ইন্ডিয়া বলছে, বিদায়ী অর্থবছরের মাঝামাঝি সময় থেকে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক শ্লথতা ভারতীয় চা রফতানি খাতকে তুলনামূলক মন্থর করে দিয়েছিল। অর্থবছরের শেষ নাগাদ বিশ্বজুড়ে নভেল করোনাভাইরাসের মহামারী ছড়িয়ে পড়ে। প্রাণঘাতী ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে লকডাউনে কার্যত ঘরবন্দি হয়ে পড়ে বিশ্বের প্রায় অর্ধেক মানুষ। বৈশ্বিক অর্থনীতি আরো স্থবির হয়ে পড়ে। ভারতেও টানা লকডাউন চা শিল্পকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দেয়। এসব পরিস্থিতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে ভারত থেকে পানীয় পণ্যটির রফতানি কমাতে প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে।

করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে গত ২৪ মার্চ ভারতজুড়ে লকডাউন ঘোষণা করেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এর পর পরই শ্রমিক পরিবহন সংকটে বন্ধ হয়ে যায় ভারতের অসংখ্য চা বাগান কারখানার কার্যক্রম। লকডাউনের পর প্রথম মাসে (এপ্রিল) দেশটিতে চা উৎপাদন ৫৪ শতাংশ কমেছে বলে জানিয়েছে টি বোর্ড অব ইন্ডিয়া। প্রতিষ্ঠানটির তথ্য অনুযায়ী, গত এপ্রিলে ভারতে সব মিলিয়ে কোটি ৯০ লাখ হাজার কেজি চা উৎপাদন হয়েছে। সময় উৎপাদিত চায়ের মধ্যে কোটি ৩৭ লাখ ৯০ হাজার কেজি সিটিসি ৪৭ লাখ ৪০ হাজার কেজি অর্থোডক্স জাতের। বাকিটা গ্রিন টি।

উল্লেখ্য, লকডাউনের জের ধরে গত এপ্রিলে আসাম, পশ্চিমবঙ্গসহ উত্তর ভারতের রাজ্যগুলোয় চা উৎপাদন কমে কোটি ৩৯ লাখ ১০ হাজার কেজিতে নেমেছে। তামিলনাড়ুসহ দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলোয় সময় পানীয় পণ্যটির উৎপাদন কমে দাঁড়িয়েছে কোটি ৫১ লাখ ১০ হাজার কেজিতে।

 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন