হোম অফিস বিশ্বজুড়ে কফির ব্যবহার কমিয়েছে

বণিক বার্তা ডেস্ক

নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশ লকডাউন পদ্ধতি বেছে নিয়েছে। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান হোম অফিসের মাধ্যমে কার্যক্রম চালাচ্ছে। এতে সবচেয়ে চাপের মুখে পড়েছে ক্যাফে রেস্টুরেন্ট ব্যবসাগুলো। অধিকাংশ রেস্টুরেন্ট বন্ধ হয়ে গেছে। এমনকি অনেক দেশে মহামারী পরিস্থিতির উন্নতি হলেও খাতটি স্বাভাবিকে ফিরতে পারেনি। ক্যাফে বা রেস্টুরেস্ট কফির মোট বৈশ্বিক ব্যবহারের একটা বিরাট অংশ দখল করে আছে। ফলে লকডাউন বা হোম অফিসের দৌরাত্ম্য পানীয় পণ্যটির বৈশ্বিক ব্যবহার কমিয়ে আনতে প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে।

ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব এগ্রিকালচারের (ইউএসডিএ) তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর ২০১১ সালের পর প্রথমবারের মতো কফির বৈশ্বিক ব্যবহারে নিম্নমুখী প্রবণতা পড়তে পারে। এমনকি খুচরা পর্যায়ে পানীয় পণ্যটির ক্রয়-বিক্রয় ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেলেও সামগ্রিকভাবে মন্দা ভাব পিছু ছাড়ছে না। মূলত ক্যাফে রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকায় খাতটির চ্যালেঞ্জ আরো বেড়েছে। কফির বৈশ্বিক ব্যবহারের ২৫ শতাংশ ব্যবহার হয় ক্যাফে রেস্টুরেন্টে।

আন্তর্জাতিক পণ্যবাজার গবেষক ম্যারেক্স স্পেকট্রন বলেন, নভেল করোনাভাইরাসের সবচেয়ে খারাপ প্রভাবগুলোর মধ্যে একটা বিশ্বের প্রায় প্রতিটি বড় অঞ্চলে ক্যাফে সংস্কৃতির অন্তর্ধান ঘটছে। মহামারীতে বিশ্বজুড়ে ৯৫ শতাংশের বেশি আউট অব হোম মার্কেট বন্ধ হয়ে গেছে বলে অনুমান করছেন তিনি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে লন্ডনের কফি শপ চেইনে আরোপিত বিধিনিষেধগুলো শিথিল করে আনা হচ্ছে। তবে অফিস কর্মীদের পরিবেশনাকারী ১০টি কফিশপ এখনো বন্ধ রয়েছে।

পরিস্থিতিতে কফির চাহিদা যদি শিগগিরই না বাড়ে, তবে বিশ্বজুড়ে খাতটির সঙ্গে জড়িত প্রায় ১২ কোটি ৫০ লাখ মানুষের জীবিকা অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে। গত কয়েক বছর ধরে কফির বাম্পার ফলন হয়েছে। এতে পণ্যটির বৈশ্বিক চাহিদা ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ার পরও বাজারে উদ্বৃত্ত সরবরাহ বেড়ে গিয়েছে, যা দাম কমাতে প্রভাব ফেলেছে। ফলে পণ্যটির আবাদকারী কৃষকদের আর্থিক সংকট বেড়েছে। এর ওপর মহামারীর প্রাদুর্ভাব সংকট আরো বাড়িয়ে তুলেছে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বহুজাতিক বিনিয়োগ ব্যাংকিং কোম্পানি আর্থিক পরিষেবা প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপ ইনকরপোরেশনের পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি পাউন্ড অ্যারাবিকা কফির গড় দাম দাঁড়াতে পারে ৯০ সেন্টে, আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় যা ১০ শতাংশ কম। এছাড়া এরই মধ্যে কফির শীর্ষ উৎপাদনকারী অঞ্চলগুলোতে কৃষকদের দরিদ্রতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শিশুশ্রমে ঝুঁকির বিষয়ে সতর্ক করেছে ইন্টারন্যাশনাল কফি অর্গানাইজেশন (আইসিও)

তবে কিছু প্রতিষ্ঠান বছরের দ্বিতীয়ার্ধে পণ্যটির বাজার চাঙ্গার আশা করছে। লন্ডনভিত্তিক প্রসিদ্ধ বাজার গবেষণা সংস্থা মিন্টেলের এপিএসি খাদ্য পানীয়বিষয়ক বিশ্লেষক ত্যান হেন হং বলেন, কফির জন্য সবচেয়ে দ্রুতবর্ধমান বাজার হচ্ছে এশিয়া। এশিয়ার অনেক দেশ লকডাউন তুলে নিয়েছে বা শিথিল করে এনেছে। এতে চলতি বছরের বাকি সময়ে অঞ্চলের ক্যাফে রেস্টুরেন্টগুলো ক্ষয়ক্ষতি অনেকটা পুষিয়ে উঠতে পারবে, যা কফির ব্যবহার বৃদ্ধিতে প্রভাবক হিসেবে কাজ করতে পারে। তবে ইউএসডিএর প্রাক্কলন অনুযায়ী, পানীয় পণ্যটির বৈশ্বিক ব্যবহারে চাঙ্গা ভাব ফিরতে খাতসংশ্লিষ্টদের আগামী বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে।

 ব্লুমবার্গ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস অবলম্বনে

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন