কীভাবে গোটা শরীরকেই আক্রান্ত করে কভিড-১৯

বণিক বার্তা ডেস্ক

নভেল করোনাভাইরাস শরীরের কোন কোন অঙ্গকে আক্রান্ত করে, এ নিয়ে গবেষণার যেন শেষ নেই। নতুন গবেষণায় দেখা গেল, এটা বলতে গেলে গোটা শরীরকেই আক্রান্ত করে ফেলে! 

আগে বিশেষজ্ঞরা বলছিলেন, ভাইরাসটি ফুসফুস আর শ্বাসযন্ত্রকেই বেশি মাত্রায় আক্রান্ত করে। এর পক্ষে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণও রয়েছে। মারা যাওয়া বেশিরভাগ রোগীই শ্বাসকষ্টে ভুগেছেন। আর ফুসফুসকে আক্রান্ত করলে রোগী নিউমোনিয়ায় ভোগেন।

সম্প্রতি এক গবেষণার পর চিকিৎসকরা বলছেন, ভাইরাসটি আক্রান্ত করে কিডনি, যকৃত, হৃৎপিন্ড, মস্তিষ্ক, স্নায়ুবিক সিস্টেম, চামড়া, গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল (পাকস্থলী ও অন্ত্র সম্পর্কিত) ট্র্যাকসহ বিভিন্ন অঙ্গকে।

নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির আরভিং মেডিক্যাল সেন্টারটি কভিড-১৯ রোগীতে টইটম্বুর ছিল কয়েক মাস ধরেই। এ হাসপাতালটির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের একটি দল তাদের নিজস্ব রোগী আর সারা বিশ্বের নানা প্রান্তের রোগীদের তথ্য সংগ্রহ করে তা নিয়ে গবেষণা করেছেন।

ব্যাপকভিত্তিক চিত্র থেকে তারা দেখতে পান, করোনাভাইরাস মূলত মানব শরীরের প্রতিটি বড় অঙ্গকেই আক্রান্ত করে। এটি সরাসরি অঙ্গকে ক্ষতিগ্রস্ত করার পাশাপাশি রক্তের ক্লট তৈরি করে (যা থেকে স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাক হতে পারে), হৃৎপিণ্ড তার স্বাভাবিকতা ও ছন্দ হারায়, কিডনি থেকে রক্ত ও প্রোটিন বেরিয়ে যায় আর চামড়ায় নানা ধরনের র‌্যাশ ওঠে। এছাড়া মাথাব্যথা, মাথা ঘুরানো, মাংসপেশীতে ব্যথা, পাকস্থলীতে ব্যথা হয়। জ্বর, কাশি এবং শ্বাসযন্ত্রের পরিচিত উপসর্গ ছাড়াও আরো নানা উপসর্গ দেখা যায়।

এই রিভিউ নিয়ে কাজ করা কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির কার্ডিওলজিস্ট আকৃতি গুপ্ত বলেন, ‘কভিড-১৯কে বহুমাত্রিক রোগ হিসেবেই বিবেচনা করে চিকিৎসা দিতে হবে চিকিৎসকদের। রক্ত জমাট বাধার অনেক খবরই আসে, কিন্তু এসব রোগীর বিরাট একটি অংশই কিডনি, হৃৎপিণ্ড, মস্তিষ্ক ক্ষয়জনিত সমস্যায় ভোগেন। কাজেই শ্বাসযন্ত্রের সমস্যার পাশাপাশি চিকিৎসকদের এসবেরও চিকিৎসা দিতে হবে।’

ন্যাচার মেডিসিন জার্নালে লেখা নিবন্ধে আরো বলা হয়, ‘গবেষণার ফল বলছে, অধিকাংশ অঙ্গই আক্রান্ত হতে পারে, কিংবা বহুলাংশ। কেননা ভাইরাসটি সরাসরি কোষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।’

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শরীরের ইমিউন সিস্টেমকেও আক্রমণ করে বসে। এতে কিছু প্রদাহী প্রোটিন তৈরি হয়, যাকে বলা হয় সাইটোকিনস। এই প্রদাহ কোষ ও অঙ্গকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এবং তথাকথিত সাইটোকিন ঝড় গুরুতর উপসর্গ সৃষ্টি করে। 

গবেষক দলের অন্যতম ডা. মহেশ মাধবন বলেন, ‘ভাইরাসটি অস্বাভাবিক ধরনের এবং এটি মানুষের শরীরে কত ধরনের প্রকাশ ঘটাচ্ছে, যা দেখে অভিভূত না হয়ে উপায় নেই।’

সূত্র: সিএনএন

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন