কর্মক্ষেত্রে নিজের গুরুত্ব বাড়াতে করণীয়

লায়লা নাজনীন

একটা সময় ছিল যখন চাকরির পরীক্ষা কিংবা ইন্টারভিউ -এ একাডেমিক পড়াশোনা এবং রেজাল্টের উপর বেশি গুরুত্ব দেয়া হতো। সময়ের সাথে প্রযুক্তির বিকাশ ঘটেছে, সেই সঙ্গে পরিবর্তন এসেছে চাকরির বাজারেও। এখন ভালো ফলাফলের পাশাপাশি ‘সফ্ট স্কিল’ এরও গুরুত্ব বেড়েছে। এখন অনেক চাকরিদাতাই একাডেমিক রেজাল্টের এক্সট্রা কারিকুলামের উপর গুরুত্ব দিচ্ছেন। সেই সঙ্গে অনেকেই ভলান্টিয়ারি কাজের অভিজ্ঞতা আছে এমন লোকজনও প্রাধান্য পাচ্ছে। তাই সময় এসেছে, ‘জব মার্কেট’ অনুযায়ী নিজেদের বদলানোর। নলেজ শেয়ারিং এবং স্কিল ডেভেলপমেন্ট এর পাশাপাশি মাল্টি টাস্কিংয়ের ও অভ্যাস গড়ে তোলা।

জেনে নেয়া যাক কিছু সফ্ট স্কিল সম্পর্কে, যা ‘জব মার্কেটে’ আপনার প্রোফাইলে ‘ভ্যালু’ যোগ করবে এবং কর্মক্ষেত্রে আপনার গুরুত্ব বাড়াবে-

পজিটিভ এটিটিউট
আপনি যদি কোনো ইন্টারভিউ-য়ে প্রশ্নের উত্তর সঠিক নাও দিতে পারেন, আপনার পজিটিভ এটিটিউট এর কারণে ইন্টারভিউয়ার-এর ভালো নজরে আসতে পারেন এবং চাকরির সুযোগও পেয়ে যেতে পারেন। কারণ বর্তমান সুপারভাইজাররা বিশ্বাস করেন, আপনাকে কাজ শিখিয়ে নেয়া যাবে, যদি আপনার মধ্যে পজিটিভ এটিটিউট থাকে। শুধু ইন্টারভিউ নয়, পজিটিভ এটিটিউট এর মাধ্যমে আপনি খুব সহজে অফিস কলিগ এবং বস এর আস্থাভাজন হতে পারেন। যা পরবর্তীতে প্রমোশন এর ক্ষেত্রে সহায়তা করবে। যেমন : আপনার বস আপনাকে কোনো কাজের কথা বললে হুট করে না বলে ফেলা যাবে না। ‘আমি চেষ্টা করবো’ মানসিকতাটা থাকতে হবে।

কমিউনিকেশন স্কিলস
সফ্ট স্কিলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্কিল হচ্ছে কমিউনিকেশন স্কিলস। কমিউনিকেশন এর দক্ষতা অনেকের মধ্যে করবে আপনাকে আলাদা। আপনার কাজের মাত্রাকে করবে গতিশীল এবং সহজতর। কোনো কাজ দিলে সেটা ‘টপ টু বটম’ সুন্দরভাবে সম্পন্ন করা, পিপল ইন্টারেক্শনের সময়ে সুন্দরভাবে গুছিয়ে কথা বলা, রুচিশীল উপস্থাপন ভঙ্গি, বডি ল্যাঙ্গুয়েজ, মনোযোগ দিয়ে কথা শোনা আপনার কমিউনিকেশন স্কিলকে সমৃদ্ধ করে। কমিউনিকেশন স্কিল শুধু কথা বলা বা শোনার মধ্যেই সীমিত না; আপনি কাউকে চিঠি বা ইমেইল পাঠাবেন- সে বিষয়েও আপনার সম্যকজ্ঞান থাকতে হবে। ইংরেজিতে পরদর্শী হওয়ার পাশাপাশি মাতৃভাষাতেও শুদ্ধ-সুন্দরভাবে কথা বলার অভ্যাস গড়ে তোলা আবশ্যক। 

কমার্শিয়াল অ্যাওয়ারনেস
আপনি অর্থনীতি, রাজনীতি এবং টেকনোলজি যে সেক্টর ই কাজ করেন না কেন তা আপনার প্রতিষ্ঠানের উপর একটা  প্রভাব ফেলে। ‘কমার্শিয়াল অ্যাওয়ার’ এর ক্ষেত্রে নিজেকে আপটডেট রাখাটা জরুরি। আপনার প্রতিষ্ঠান যে খাতে, সেই খাতে কী চলছে বা মার্কেট এ আপনার কোম্পানির অবস্থান কোথায়- তা সম্পর্কে আপনার ধারণা থাকা জরুরি। এতে করে আপনি বুঝতে পারবেন মার্কেট এ আপনার কোম্পানির প্রতিযোগী কারা, কীভাবে কাস্টমার বা ক্লায়েন্ট এর চাহিদা পূরণের মাধ্যমে নিজের প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। আপনাকে আরও ভাল সিদ্ধান্ত নিতে, নতুন ধারণা তৈরি করতে, আরও কার্যকরভাবে সমস্যার সমাধান করতে, তাছাড়া দূরদর্শী নেতা হতে সহায়তা করবে। বিভিন্ন  সংবাদপত্র, ব্লগস, পডকাস্ট, সোশ্যাল মিডিয়া মাধ্যমে আপনি প্রতিষ্ঠান বা ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন। কমার্শিয়াল অ্যাওয়ারনেসের মাধ্যমে আপনি শুধু বাইরেরই নয়, কোম্পানির আভ্যন্তরীণ বিষয় সম্পর্কেও বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতে পারেন। আর ম্যানেজমেন্ট যখন দেখবে আপনি বিজনেস বুঝে কাজ করছেন তখন আপনার ভ্যালু কোম্পানিতে আরো বাড়বে।

টিম ওয়ার্ক
চাকরির ক্ষেত্রে টিম ওয়ার্ক করা অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যে প্রতিষ্ঠানেই কাজ করেন না কেন, আপনার কর্মক্ষেত্রে আপনাকে কাস্টমার, ক্লায়েন্ট, কলিগ, সাবর্ডিনেটস, সুপারভাইজার, বস সবার সাথেই টিম ওয়ার্ক করতে হবে। আর এই টিম ওয়ার্ক এর উপরেই নির্ভর করে প্রতিষ্ঠানের কাজের পরিবেশ ও সফলতা। একটা প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন জায়গা থেকে লোক কাজ করেন। একই বাসাতে ভাই-বোনদের মধ্যেই বিবাদ লেগে যায়, কলিগদের সঙ্গেও এমনটা হওয়া অস্বাভাবিক নয়। তবে এ বিষয়টা আপনাকে ‘হ্যান্ডল’ করা শিখতে হবে। সহকর্মীর সঙ্গে কীভাবে ‘অ্যাডজাস্ট’ করে কাজ করবেন তাও আপনাকে আয়ত্ব করতে হবে। 

সেলফ কনফিডেন্স
সেলফ কনফিডেন্স শুধু কর্মক্ষেত্রেই না, জীবনের সর্বক্ষেত্রেই প্রয়োজন। কর্মক্ষেত্রে আপনাকে নিজের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। তবে অহংকারী বা ‘ওভার কনফিডেন্ট’ হওয়া যাবে না। আপনার সহকর্মীদের এবং আপনি যে সংস্থার জন্য কাজ করছেন তার প্রতিও আস্থা রাখতে হবে। কর্মক্ষেত্রে কাজ নিয়ে দ্বিধায় ভুগলে হবে না, কাজে-কর্মে কনফিডেন্ট থাকতে হবে। লো কনফিডেন্ট কর্মীকে কোন ম্যানেজমেন্টই পছন্দ করেন না। সবাই আত্মবিশাসে ভরপুর উদ্যমী মানুষ পছন্দ করেন। তাই সেলফ কনফিডেন্স গড়ে তুলতে হবে, নিজের কাজে ফোকাস করতে হবে। কোনো মানুষ ই পারফেক্ট না, কাজ করতে গেলে সবারই কম-বেশি ভুল হয়, চেষ্টা করতে হবে ভুলের মাত্রা কমানো। আপনার কর্মক্ষেত্রে আপনার ঘাটতিগুলো কী কী, তা খুঁজে বের করতে হবে। স্কিল ডেভেলপ করতে হবে, নিজের প্রতি নিজেকে শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। নিজের ছোট ছোট কাজে সন্তুষ্ট হতে হবে। ভবিষতে আরো ভালো করার প্রবণতা নিজের মধ্যে তৈরি করতে হবে। প্রতিদিন লার্নিং এর আগ্রহ তৈরি করতে হবে নিজের মধ্যে। (চলবে)

লেখক: প্রধান মানবসম্পদ কর্মকর্তা, স্টার সিনেপ্লেক্স 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন