ভার্সিটি বন্ধ, বর্ষাকালে তরমুজ ফলিয়ে সাফল্য

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, টাঙ্গাইল

মাসুদ পারভেজ, গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি বিভাগের শেষবর্ষের শিক্ষার্থী। করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে গত মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়। বাধ্য হয়েই টাঙ্গাইলের ঘাটাইলের গোপিনপুর (আমচালা) গ্রামে বাড়িতে অবস্থান করছিলেন তিনি। অবসরে পরীক্ষামূলকভাবে বর্ষাকালেও তরমুজ চাষে সফলতা পেয়েছেন।

মাসুদ পারভেজের ভাষায়, আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন সন্মানিত শিক্ষক করোনায় খাদ্য ঘাটতি মোকাবিলায় শাক সবজি, ফলমূল চাষের ব্যাপারে উৎসাহমূলক বার্তা দেন। সবকিছু মিলিয়ে ভবিষ্যৎ কৃষিবিদ হিসেবে আমার মনে হয়েছে অর্জিত জ্ঞান আর এই বাধ্যতামূলক অবসর মিলিয়ে কিছু একটা করি।

তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে অফসিজনে কিছু বিদেশী জাতের তরমুজ পরীক্ষামূলক চাষ হচ্ছে। কিন্তু আমি শুরু করি দেশী জাতের তরমুজ বীজ নিয়ে। যার ফলস্বরূপ আজ বলতে পারি তরমুজের কোন নির্দিষ্ট সিজন নেই। এটি বছরের বারোমাসই চাষযোগ্য।

কৃষি বিজ্ঞানের এই শিক্ষার্থীর সঙ্গে আলাপ কালেই ‍জানা গেলে, তরমুজ Cucurbitaceae পরিবারের একটি ফল। এর বৈজ্ঞানিক নাম Citrullus lanatus। আমাদের দেশে তরমুজ চাষের মূল সময় শীতকাল। তবে বৈজ্ঞানিকভাবে চাষ করলে পুষ্টি চাহিদা মেটাতে তরমুজ হতে পারে বারোমাসি ফল।

মাসুদ পারভেজ অসময়ে তরমুজ চাষে সফলতার বিষয়ে বলতে গিয়ে বলেন, উঁচু বীজতলা বা মাচা তৈরি, রাসায়নিক সারের পরিমাণ কমিয়ে জৈব সারের প্রয়োগ বৃদ্ধি, বৃষ্টি কাঁদার হাত থেকে রক্ষা করতে উঁচু মাচার ব্যবহার, কৃত্রিম পরাগায়ন, মাছি পোকা দমনে সেক্স ফেরোমন ফাঁদ, মাচায় তরমুজকে রক্ষা করতে ব্যাগিং, রোগের লক্ষণ দেখে সঠিক সময়ে সঠিক ঔষুধ প্রয়োগ ইত্যাদি সবকিছুর সঠিক প্রয়োগই হতে পারে বর্ষা বা গ্রীষ্মে তরমুজ চাষে সাফল্যের মূল সূত্র।

তিনি আরও বলেন, অসময়ে তরমুজ চাষের সময় কৃষককে সচেতন থাকতে হবে তরমুজের গোড়া পঁচা, গামি স্টেম ব্লাইট, অ্যানথ্রাকনোজ সহ অন্যান্য রোগের দ্রুত শনাক্ত ও সমাধানের বিষয়ে।

সবকিছু মিলিয়ে কৃষিবিদ হিসেবে বলতে পারি বাংলাদেশর মাটি সোনার মাটি। এখানে তরমুজ চাষের সুনির্দিষ্ট কোনো সিজন নেই।

সরেজমিনে দেখা যায়, বর্ষাকালেও তার মাচায় ঝুলছে ছোট-বড় অনেক তরমুজ। বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেও তরমুজ চাষ করে সফল তিনি। এই তরমুজের স্বাদও ভালো।

অসময়ে মাসুদের তরমুজ চাষে সফলতা দেখে এলাকার অনেক কৃষক সুস্বাদু এই ফল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন বলে জানা গেছে।

ঘাটাইল কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, বর্ষাকালে তরমুজ চাষে কৃষকদের বীজ, পরামর্শ ও প্রয়োজনীয় কারিগরি সহযোগিতা দেয়া সম্ভব। এ সময়ে তরমুজ চাষ করতে কৃষকের এক বিঘা জমিতে খরচ হতে পারে ৪০-৫০ হাজার টাকা। ভালো ফলন হলে বিঘা প্রতি উৎপাদিত তরমুজ আড়াই লাখ থেকে ৩ লাখ টাকায় বিক্রি সম্ভব। অল্প পুঁজি ও অল্প সময়ে লাভ বেশি করে লাভবান হতে পারেন কৃষকরা।

কৃষি অফিস বলছে, ঘাটাইলে বর্তমানে বারোমাসি তরমুজের চাষ শুরু হয়নি। পরীক্ষামূলকভাবে দুএকজন এই তরমুজ চাষ করছেন। তবে এই বিষয়ে কৃষকদের মধ্যে প্রচারণা চালানো গেলে ব্যাপক ভিত্তিতে এটি চাষ করে কৃষকরা লাভবান হতে পারবেন।

পারভেজ হাসান, টাঙ্গাইল

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন