দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

বণিক বার্তা ডেস্ক

দেশের বিভিন্ন স্থানে সকাল থেকে ভারি বৃষ্টিপাত উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে বেড়েছে গঙ্গা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা, দুধকুমার, সুরমা, আত্রাইসহ অধিকাংশ নদ-নদীর পানি। বেশ কয়েকটি নদীতে পানি বিপত্সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে সিলেট, সুনামগঞ্জ, রংপুর, কুড়িগ্রামসহ অন্তত ১০ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।

প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:

কুড়িগ্রাম: জেলায় ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা, দুধকুমারসহ ১৬টি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গতকাল বিকালে ধরলা তিস্তার পানি বিপত্সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। দ্রুত বাড়ছে ব্রহ্মপুত্রসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানিও।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম জানান, গতকাল বেলা ৩টায় পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে বিপত্সীমার সেন্টিমিটার তিস্তা নদীর পানি কাউনিয়া পয়েন্টে বিপত্সীমার সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এছাড়া ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপত্সীমার সেন্টিমিটার নুনখাওয়া পয়েন্টে ১৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। ধরলার পানি অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় রাজারহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নের কালুয়া এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভাঙনের হুমকিতে পড়েছে বলেও জানান তিনি।

কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. রেজাউল করিম জানান, কুড়িগ্রামের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি সভা করা হয়েছে। সভায় বন পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সচিব জিয়াউল হাসান উপস্থিত ছিলেন। এরই মধ্যে আমরা বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি।

সিলেট: ঢল আর অতিবৃষ্টিতে সিলেটের কয়েকটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এছাড়া কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা এলাকায় বন্যা দেখা দিয়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে উপজেলায় দ্বিতীয় দফা বন্যা দেখা দিল।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন আচার্য জানানউপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন বন্যা আক্রান্ত হয়েছে। ৩৬টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। কিছু মানুষ সেখানে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের শুকনো খাবার বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন থেকে আক্রান্তদের জন্য ২৫ টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

এদিকে গতকাল সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপত্সীমার ৭০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এছাড়া গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর উপজেলার অনেক নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে নিচু এলাকার হাজারো পরিবার পানিবন্দি রয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড জৈন্তাপুর উপজেলা কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হবে। সারি নদীসহ সবকটি নদনদীর পানি বিপত্সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

সুনামগঞ্জ: সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হয়েছে। অতিবৃষ্টি পাহাড়ি ঢলে পানি বাড়ায় জেলা শহরসহ ১১ উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় সুরমা নদীর পানি বিপত্সীমার ৬০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

এদিকে পৌর শহরের কাজির পয়েন্ট, ষোলঘর, সাহেব বাড়ীঘাট, নবীনগর, উকিলপাড়া, মধ্যবাজার, বড়পাড়া, তেঘরিয়া এলাকায় পানি প্রবেশ করেছে। এছাড়া জেলার ১১ উপজেলার নিম্নাঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। অন্যদিকে সুনামগঞ্জ, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, ছাতক, দোয়ারাবাজার, জামালগঞ্জসহ অধিকাংশ উপজেলায় পানি ঢুকে সরাসরি সড়কপথে জেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সবিবুর রহমান বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে ১২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ভারতের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে সুনামগঞ্জে আর তিন-চারদিন বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি আরো অবনতি হতে পারে বলে জানান তিনি।

রংপুর: তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে রংপুরের গঙ্গাচড়ার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের চর ইচলী, শংকরদহ, বাগেরহাট, জয়রাম ওঝা, চর চল্লিশাসালের প্রায় আড়াই হাজার পরিবার, কোলকোন্দ ইউনিয়নের চিলাখাল, মটুকপুর, বিনবিনার চরের প্রায় ১৭০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। কোলকোন্দ ইউনিয়নের বিনবিনার চরের হুমায়ুনের বাঁধের ১০০ ফুট ভেঙে গিয়ে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়েছে। এতে করে দুই হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

গজঘণ্টা ইউনিয়নের ছালাপাক, জয়দেব, রাজবল্লভের কিছু অংশ নদী পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ফলে ইউনিয়নের ৫০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। মর্ণেয়া ইউনিয়নের চর মর্ণেয়া, নীলারপার এলাকার এক হাজার পরিবার, নোহালী ইউনিয়নের চর বাগডোহরা, চর নোহালী, বৈরাতির প্রায় দুই হাজার পরিবার, পীরগাছা উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নের হাগুড়িয়া হাশিম, শিবদেবসহ পাঁচটি গ্রামের প্রায় ৫০০ পরিবার পানিবন্দি হয়েছে। কাউনিয়া উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নের ঢুষমারার চর, পাঞ্জরভাঙ্গা, চরগদাই, গোপিডাঙ্গা, নিজপাড়া তালুক শাহবাজপুরের কিছু এলাকায় পানি ঢুকে পড়েছে। এতে করে বালাপাড়া ইউনিয়নের প্রায় দুই হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

গঙ্গাচড়া লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ্ আল হাদী বলেন, গত শুক্রবার রাত থেকে তিস্তায় পানি বেড়েছে। ফলে আমার ইউনিয়নের নদীর বামতীরের প্রায় সব এলাকার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এসব মানুষের মাঝে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে।

জেলা ত্রাণ পুনর্বাসন কর্মকর্তা একেএম ইদ্রিস আলী বলেন, পর্যাপ্ত পরিমাণ ত্রাণসামগ্রী মজুদ আছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমাদের যথেষ্ট প্রস্তুতি রয়েছে।

লালমনিরহাট: তিস্তার পানি হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে গতকাল বিপত্সীমার ২৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে হয়। এছাড়া হাতীবান্ধা উপজেলার ডালিয়া পয়েন্টেও বিপত্সীমার ওপর দিয়ে তিস্তার পানি প্রবাহিত হয়।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, তিস্তা নদীর পানি বিপত্সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নীলফামারী জেলার জলঢাকা, ডিমলা এবং লালমনিরহাটের পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ, আদিতমারী, লালমনিরহাট সদর উপজেলার বেশকিছু ইউনিয়নের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তিস্তা ব্যারাজের সবগুলো জলকপাট খুলে দিয়ে পানিপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। নদী-তীরবর্তী লোকজনকে নিরাপদে থাকতে দুই জেলার প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে।

সিরাজগঞ্জ: যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ সদর কাজিপুর পয়েন্টে গত শুক্রবার রাত থেকে আবার বাড়তে শুরু করেছে।

গতকাল সন্ধ্যায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী একেএম রফিকুল ইসলাম জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনার পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে ২০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপত্সীমার ২৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। কাজীপুর পয়েন্টে ২৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপত্সীমার ১৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ৭২ ঘণ্টা পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে।

এদিকে বৃষ্টি আর বন্যার কারণে জেলার কাজিপুর, সদর, বেলকুচি, শাহজাদপুর চৌহালী উপজেলার নিম্নাঞ্চলের প্রায় দেড় লাখ মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছে।

নাটোর: গতকাল নাটোরে আত্রাই নদের পানি বিপত্সীমার ১৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এতে বন্যায় প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে জেলার সিংড়া গুরুদাসপুর উপজেলা।

নাটোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, অতিবৃষ্টির কারণে নাটোরের আত্রাই নদের পানি বিপত্সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

জেলা প্রশাসক মো. শাহরিয়াজ জানান, বন্যা মোকাবেলায় জরুরিভাবে প্রস্তুতি সভা করা হয়েছে। বন্যায় দুর্ভোগে পড়া মানুষের জন্য ১৫০ টন চাল এবং আড়াই লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন