যশোর জেনারেল হাসপাতালে বসছে হাই-ফ্লো অক্সিজেন প্লান্ট

বণিক বার্তা প্রতিনিধি যশোর

নভেল করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের জন্য যশোর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে এবার হাই-ফ্লো অক্সিজেন প্লান্ট বসানো হচ্ছে। এতে শ্বাসকষ্টজনিত রোগীদের কষ্ট লাঘবের পাশাপাশি অক্সিজেন সংকট কেটে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

গত শুক্রবার সকালে যশোর সার্কিট হাউজে অনুষ্ঠিত করোনাভাইরাস প্রতিরোধের লক্ষ্যে গঠিত জেলা কমিটি সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। সভায় উপস্থিত ছিলেন প্রতিরক্ষা সচিব . মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল। তিনি যশোর জেলার করোনা প্রতিরোধ ত্রাণ কার্যক্রমের সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সভা থেকে অনুরোধ জানানো হলে . আবু হেনা যশোর হাসপাতালে দ্রুত অক্সিজেন প্লান্ট বসাতে প্রয়োজনীয় ভূমিকা রাখবেন বলে কথা দেন।

সভা শেষে যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন জানান, জেনারেল হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন মেরামতসহ অক্সিজেন সরবরাহে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কভিড-১৯ পরিস্থিতিতে যশোরের দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিব বিষয়টি শুনেছেন এবং বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন বলে জানিয়েছেন।

সিভিল সার্জন জানান, যশোর জেনারেল হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন রয়েছে। কিন্তু তা ব্যবহার উপযোগী নয়। এখন করোনা পরিস্থিতিতে অক্সিজেন লাইন জরুরি হয়ে উঠেছে। সে কারণে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. দিলীপ কুমার রায় জানান, কভিড-১৯ মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ার পর বিভিন্ন হাসপাতালে তরল অক্সিজেন প্লান্ট স্থাপনের উদ্যোগ নেয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। যে ৩৯টি হাসপাতালে প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা ছিল, তার মধ্যে যশোর ছিল না। বিষয়টি জানতে পেরে ঊর্ধ্বতন মহলে যোগাযোগ করে যশোর জেনারেল হাসপাতালকে তালিকাভুক্ত করা হয়।

তিনি বলেন, হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে ছয়টি বড় অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে। রয়েছে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইনও। কিন্তু তা অকেজো। মেরামতের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ এসে এরই মধ্যে সার্ভে করে গেছে। আমার জানামতে, তারা এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট পেশও করেছে। বিষয়টি নিয়ে আমি ডিরেক্টর হসপিটালসের সঙ্গেও কথা বলেছি। ইউনিসেফ কাজ করবে। আশা করি, দ্রুতই যশোরে অক্সিজেন প্লান্ট বসবে এবং সঞ্চালন লাইন মেরামত হয়ে যাবে।

তত্ত্বাবধায়ক ডা. দিলীপকুমার রায় জানান, এখন জেলা শহরের রোগীদের ফুসফুসে অক্সিজেন সরবরাহ করা হয় পোর্টেবল সিলিন্ডারের মাধ্যমে। সিলিন্ডারের মাধ্যমে হাই-ফ্লো অক্সিজেন সরবরাহ করা যায় না। কিন্তু কোনো কোনো রোগীর, বিশেষ করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির তীব্র শ্বাসকষ্ট হয়। তার দরকার হয় হাই-ফ্লো অক্সিজেন সরবরাহের। ধরনের রোগীর জন্যই মূলত অক্সিজেন প্লান্ট সরবরাহ লাইন দরকার।

তিনি জানান, তরল অক্সিজেন প্লান্ট স্থাপন করা হলে সেখানে বিপুল পরিমাণ অক্সিজেন মজুদ থাকবে। রোগীদের মাথার কাছে থাকবে অক্সিজেন সরবরাহ লাইন। সেখান থেকে হাই-ফ্লো অক্সিজেন সরবরাহ করা হবে রোগীর শরীরে। সাধারণ সিলিন্ডারে ন্যাজাল ক্যানোলা সেট হয় না। সেক্ষেত্রে প্রযুক্তি খুবই কার্যকর। অঞ্চলের কোথাও তরল অক্সিজেন প্লান্ট ছিল না। করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে কয়েক দিন আগে খুলনায় একটি প্লান্ট বসানো হয়েছে।

এর আগে গত মাসের শেষে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ছয়টি আইসিইউ ভেন্টিলেটর আনা হয়। কিন্তু সেগুলো এখনো ব্যবহার করা হয়নি। কেন ব্যবহার করা যাচ্ছে না জানতে চাইলে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক বলেন, ভেন্টিলেটর পেয়েছি, কিন্তু আইসিইউ বেড পাইনি। তাছাড়া ভেন্টিলেটর স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় পূর্ত কাজ এখনো শেষ করা যায়নি।

দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলাগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বাধিক করোনা রোগীর অবস্থান যশোরে। জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে স্বাস্থ্য বিভাগ হিমশিম খাচ্ছে। আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা সরঞ্জাম ছাড়া মরণাপন্ন রোগীদের বাঁচানো সম্ভব না বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন