ভাইরাস শনাক্তে সাশ্রয়ী ও দ্রুততম উপায় হতে পারে পুল টেস্ট

বণিক বার্তা ডেস্ক

গ্রীষ্মকালীন সময়ে কভিড-১৯ সাময়িকভাবে থামবে বলে মনে হলেও, জুনে এসে ফের সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। সংক্রমণ বাড়ার কারণে টেস্টিংয়ের প্রয়োজনীয়তাও বেড়ে যায়। আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজের ডিরেক্টর . অ্যান্থনি ফাউসি ঘোষণা দিয়ে জানান, স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা পুল টেস্টিংকে বিবেচনা করছেন। প্রশ্ন হচ্ছে পুল টেস্টিং কী এবং কেন এটা প্রয়োজন?

দলের পরীক্ষা, ব্যক্তির না

পুল টেস্টিংয়ের মূল ধারণা হচ্ছে এটি স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের অনুমতি দেয় একটি ছোট দলকে পরীক্ষা করার। যাকে বলা হয় পুল। এটি মূলত একটি টেস্টের মাধ্যমে করা হয়। এর অর্থ হচ্ছে আপনি দ্রুত অনেক লোকের পরীক্ষা করতে পারবেন কম টেস্ট এবং কম অর্থ খরচ করে।

একই সময়ে একজন ব্যক্তিকে পরীক্ষা করার পরিবর্তে অনেকের কাছ থেকে নমুনা নিয়ে একসঙ্গে মিক্স করা হয় এবং একবার পরীক্ষা করা হয়। যদি টেস্টের ফল নেগেটিভ আসে তবে পুলের সবাই নিরাপদ। কিন্তু যদি পজিটিভ আসে তবে পুলের সবাইকে আলাদাভাবে টেস্ট করা হয়।

উদাহরণস্বরূপ ধরা যাক, একটি কর্মক্ষেত্রে ২০ জন মানুষ, যেখানে একজন আক্রান্ত। পুল টেস্টিং যা করবে তা হলো ২০ জনকে পাঁচজন করে চারটি দলে ভাগ করবে। প্রত্যেকের থেকে নমুনা নিয়ে তা গ্রুপের অন্য সদস্যদের নমুনার সঙ্গে মিশ্রিত করা হবে। এরপর প্রত্যেক গ্রুপের নমুনা পরীক্ষা করা হবে। ২০ জনের জন্য প্রাথমিকভাবে লাগবে ৪টি টেস্ট। পরীক্ষার ফলে একটি মাত্র গ্রুপ পজিটিভ এলে বোঝা যাবে সে গ্রুপের কেউ সংক্রমিত। পরে সেই গ্রুপের পাঁচজনকেই আলাদাভাবে পুনরায় টেস্ট করা হয়। তখন সেই অসুস্থ ব্যক্তি বা ব্যক্তিরা চিহ্নিত হবে।

সব মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে নয়টি টেস্টের মাধ্যমে ২০ জনকে পরীক্ষা করা সম্ভব হয়। যদি আলাদাভাবে করতে হতো হবে ২০ জনের জন্য ২০টি টেস্ট লাগত।

বাস্তবতা হচ্ছে, কতটা টেস্ট বাঁচানো যাবে তা নির্ভর করছে মূলত আক্রান্ত লোকের ভগ্নাংশের ওপর। যদি সংক্রমণের হার উচ্চ হয় তবে পরীক্ষা অনেকগুলো পুল পজিটিভ হতে পারে। তখন আরো বেশি মানুষের রি টেস্টের প্রয়োজন হবে। সে সঙ্গে টেস্ট বাঁচানোর পরিমাণও কমে আসবে।

উদাহরণস্বরূপ লস অ্যাঞ্জেলেসে একটি কভিড-১৯ আক্রান্ত সন্দেহে পুল টেস্ট করা হয় জুনের ২৭ তারিখ। যেখানে শতাংশ লোকের পজিটিভ ফল আসে। যে কারণে এখানে হ্রাস পেয়েছে ৫০ শতাংশ টেস্ট। কিন্তু মন্টানায় যেখানে জনসংখ্যার . শতাংশ লোক সংক্রমিত ছিল, যেখানে পুল টেস্টিং দ্বারা ৯০ শতাংশ টেস্টিং হ্রাস হয়।

এটা কি কাজ করে?

উপসর্গহীন রোগের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে পুল টেস্টিং ব্যবহ্রত হয়ে আসছে। স্টেট ল্যাবগুলো এটা ব্যবহার করেছে ক্ল্যামিডিয়া গনোরিয়ার রোগ শনাক্তের জন্য। রেড ক্রস এটি ব্যবহার করে হেপাটাইটিস বি সি, জিকা ভাইরাস এইচআইভি রোগীদের রক্তদান করার জন্য। বর্তমান সময়ে এসে অনেক স্থানে এটি ব্যবহার করা হচ্ছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত করার জন্য।

স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি পুল টেস্টিং ব্যবহার করেছে সামুদ্রিক অঞ্চলে কভিড-১৯-এর প্রাথমিক বিস্তৃতি বোঝার জন্য। নেব্রাস্কার পাবলিক হেলথ ল্যাবরেটরি পাঁচজনের দলে ভাগ করে নমুনা সংগ্রহ করে পুল টেস্ট করেছে।

কিছু মানুষ অবশ্য উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যে পুলিংয়ের থেকে সংগৃহীত নমুনা হ্রাস পিসিআর টেস্টের যথার্থতা কমিয়ে দিতে পারে, যা নমুনায় ভাইরাল আরএনএর খোঁজ করে। তবে সৌভাগ্যক্রমে গবেষকরা এরই মধ্যে দেখিয়েছেন যে পুল টেস্টিং স্বতন্ত্র টেস্টিংয়ের মতোই নির্ভুল।

আরেকটি উদ্বেগ হচ্ছে সংক্রমণের প্রকোপ। যখন সংক্রমণের হার বেড়ে ১৫ শতাংশের বেশি হবে তখন অনেক বেশি পুল পজিটিভ হবে এবং সে সময়ে পুলিং খুব বেশি আর কার্যকর থাকবে না। সৌভাগ্যক্রমে অনেক ক্ষেত্রে শতাংশ কেস পজিটিভ হতে দেখা যাচ্ছে। যেমন টেক্সাসের মতো চরম হটস্পটেও ১০ শতাংশ কিংবা তার বেশি কেস পজিটিভ হতে দেখা গেছে। তাই পুল টেস্টিং এখনো কার্যকর।

তবে পুল টেস্টিংয়ে শক্তি দেখা যাবে তখনই যখন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বড় পরিসরে জনগণের মাঝে এভাবে টেস্ট শুরু করবেন। অনেক ক্ষেত্রে রোগীরা সম্প্রতি তখনই টেস্ট করছে যখন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা তাদের সংক্রমিত বলে সন্দেহ করছেন। কিন্তু উপসর্গহীন প্রাক-উপসর্গ অবস্থার রোগী খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। আর এরাই সংক্রমণ ছড়ানোর জন্য প্রধানত দায়ী। কারণেই বিশেষজ্ঞরা সবাইকে টেস্ট করার পক্ষে কথা বলছেন। সাধারণ জনগণের মাঝে সংক্রমণের হার শতাংশেরও কম বলে অনুমান করা হয়এমনকি খুব তীব্রভাবে আঘাতপ্রান্ত রাজ্যগুলোতেও। পরিপ্রেক্ষিতে পুল টেস্ট খরচ কমাতে পারে ৮০ শতাংশ কিংবা তার বেশি।

এরপর কী করতে হবে?

এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ৩০ মিলিয়নের মতো কভিড-১৯ টেস্ট সম্পন্ন করেছে, যা জনসংখ্যার ১০ শতাংশের কম। তবুও অনেক বিশেষজ্ঞ আমেরিকার সব জনগণকে প্রতি তিন মাসে অথবা কোনো কোনো ক্ষেত্রে দুই সপ্তাহ পর টেস্ট করার কথা বলছেন।

এছাড়া আমেরিকার ল্যাবগুলোর টেস্টিং উপাদানের স্বল্পতাকে বিবেচনায় নিলে, কোম্পানিগুলোর পক্ষে পর্যাপ্ত পরিমাণে স্বতন্ত্র টেস্টের উপাদান দ্রুত উৎপাদন করা কঠিন বলে মনে হয়। সেক্ষেত্রেও পুল টেস্ট কম টেস্টের মাধ্যমে অধিক মানুষকে স্ক্রিনিং করতে পারে।

তবে এক্ষেত্রে বাধা হতে পারে খরচ। যদি ল্যাবগুলো একজন ব্যক্তির টেস্টের চেয়ে পুল টেস্টে অধিক অর্থ দাবি করে তবে খরচ বাঁচানো সম্ভব হবে না। তাই সাশ্রয়ী হওয়াটাও জরুরি। তবে সময়ে এসে পুল টেস্টই পারে ভাইরাসের গতি নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা রাখতে।

দ্য কনভারসেশন

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন