এইডসের প্রাথমিক দিনগুলো থেকে কভিড-১৯-এর শিক্ষা

উইলিয়াম এ. হ্যাজেলটাইন

৩৬ বছর আগে আমরা এখনকার সময়ের মতো একটি নতুন এবং রহস্যময় বৈশ্বিক মহামারীর মাঝে ছিলাম। কেবল যুক্তরাষ্ট্রেই এক মিলিয়নের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছিল এইচআইভিতে এবং মারা গিয়েছিল ১২ হাজার মানুষ। সে সময় আমরা ভাইরাসটি কীভাবে কাজ করে, তা জানার একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে ছিলাম। কিন্তু তার পরও কিছু নেতা আশাবাদী দাবি করতে পিছপা হননি। তারা দাবি করেছিলেন দুই বছরের মধ্যে এইডসের ভ্যাকসিন পাওয়া সম্ভব।

এখন কভিড-১৯-এর সময়েও আমরা একই ধরনের অবস্থায় আছি। কেবল যুক্তরাষ্ট্রেই লাখ লাখ লোক আক্রান্ত হয়েছে এবং লাখ ৩০ হাজারের বেশি মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে। কীভাবে নভেল করোনাভাইরাস কাজ করে এবং মানুষকে কীভাবে আক্রান্ত করে, সে সম্পর্কে সীমিত জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও অনেকেই ২০২১ সালের মধ্যে কভিড-১৯-এর ভ্যাকসিন আবিষ্কারের সম্ভাবনার কথা বলছে। যেটাকে আমি অতিরঞ্জিত বলেই মনে করছি। আমার আজকের দিনের অনুভূতি ৩৬ বছর আগের অনুভূতির মতোই। হ্যাঁ, ভ্যাকসিন আবিষ্কার সম্ভব, কিন্তু এটা কোনোভাবেই নিশ্চিত কিছু না।

প্রতিটি মরণঘাতী ভাইরাস একটি গল্প বলে। এর রহস্য যতই উন্মোচিত হতে থাকে, আমরা ভ্যাকসিন আবিষ্কারের সম্ভাবনা নিয়ে আরেকটু জানতে পারি। উদাহরণস্বরূপ পোলিও ভাইরাস শুরুতেই আমাদের জানায় যে দ্রুত ভ্যাকসিন দেয়া সম্ভব। যখন ভাইরাসটি শরীরে প্রবেশ করে, তখন তা অ্যান্টিবডি তৈরির মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানায় যা রোগজীবাণুকে পুরোপুরিভাবে দূর করে। এটা অনেকটা হিট অ্যান্ড রান-এর মতো। ভাইরাস একবার আঘাত করে এবং এরপর চলে যায়। আর একবার অ্যান্টিবডি তৈরি হলে এটা আর কোনো ক্ষতি করতে পারে না।

কিন্তু এইচআইভি আমাদের জানায়, ভ্যাকসিন একটি দীর্ঘমেয়াদি চ্যালেঞ্জিং বিষয় হতে পারে। প্রাদুর্ভাব উদঘাটনের সঙ্গে আমরা অ্যান্টিবডির লেভেল ট্র্যাক করতে শুরু করি এবং সংক্রমিতদের টি সেল গণনা করতে শুরু করি। দুটিরই উচ্চ স্তর আমাদের দেখায় যে রোগীদের ইমিউন সিস্টেম অবিশ্বাস্যভাবে কার্যকর এবং অন্য যেকোনো রোগের জন্য আমরা যা দেখেছি তার চেয়ে অধিক শক্তিশালী। কিন্তু সর্বোচ্চ মাত্রায় কাজ করার পরও শরীরের ইমিউন সিস্টেম ভাইরাস দূর করার জন্য যথেষ্ট নয়। পোলিওর হিট অ্যান্ড রানের বিপরীতে এইআইভি ভাইরাসকে পাকড়াও করে এবং শরীরে আটকে রাখে। আপনি একবার সংক্রমিত হওয়ার পর রোগজীবাণু ততক্ষণ পর্যন্ত অবস্থান করে যতক্ষণ শরীর তা পুরোপুরি নির্মূল করে না ফেলে। যদিও পরিস্থিতির অর্থ এই নয় যে ভ্যাকসিন তৈরি অসম্ভব। কিন্তু এর অর্থ হচ্ছে ভ্যাকসিনের বিকাশ সহজ নয়।

সার্স-কোভ- তে এইচআইভি পোলিও উভয়ের প্রতিধ্বনি রয়েছে। ৬০ বছর ধরে করোনাভাইরাস পর্যবেক্ষণ করে আমরা জেনেছি যে শরীরের ইমিউন সিস্টেম ভাইরাসকে দূর করতে পারে। কিন্তু করোনাভাইরাস খুবই রহস্যময়। এটি আপনার ইমিউন সিস্টেমকে বিকৃত করতে পারে, শরীর থেকে চলে যাওয়ার পরও। পাশাপাশি এটা পুনরায় আপনার ইমিউন সিস্টেমে প্রবেশ করতে পারে এবং আপনাকে আবারো অসুস্থ করতে পারে। এটা হিট অ্যান্ড রান কিংবা ক্যাচ অ্যান্ড কিপ নয়, বরং রেখে ভুলে যাওয়ার মতো ব্যাপার। যেখানে ভাইরাস একজন ব্যক্তিকে একাধিকবার আক্রান্ত করতে পারে।

সার্স-কোভ- আমাদের বলছে ভ্যাকসিনের পথ মোটেই সহজ নয় এবং এটি প্রতিবন্ধকতায় পরিপূর্ণ। যদিও কোনো কোনো মানুষ অ্যান্টিবডি দ্বারা কভিড-১৯ কে অকার্যকর করতে পারে, কিন্তু সবাই তা পারে না। তাই কোনো ভ্যাকসিন আদৌ সবাইকে সুস্থ করতে পারবে কিনা তা অজানা। এছাড়া কতদিন পর্যন্ত এই অ্যান্টিবডি সুরক্ষা দেবে তাও পরিষ্কার নয়।

তাই দেখা যাচ্ছে ভ্যাকসিন আবিষ্কারের পথে অনেক উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তাই ২০২১ সালের মাঝেই কার্যকর নিরাপদ ভ্যাকসিন চলে আসবে, এমন কিছু বিশ্বাস করার আগে আমাদের একটু স্থির হয়ে চিন্তা করতে হবে। ভ্যাকসিন আমাদের কাছে না থাকতে পারে, তবে আমরা আশাহীন নই। অন্য মেডিকেল সলিউশনগুলো ট্রান্সমিশন চেইন ভাঙার জন্য কার্যকর প্রমাণিত হতে পারে। ভিন্ন ধরনের ওষুধ ভাইরাসের সংখ্যাবৃদ্ধি রুখতে পারে। এইচআইভিসহ অন্য অনেক  ভাইরাল রোগের ক্ষেত্রে অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ রোগীকে চিকিৎসা এবং অন্যদের সংক্রমিত হওয়া থেকে রক্ষা করতে পারে। এজন্য এসব অ্যান্টিভাইরালকে ধন্যবাদ দেয়া যেতে পারে। নতুন এইচআইভি সংক্রমণ হ্রাস পেতে শুরু করেছে এবং এইচআইভি পজিটিভ হওয়া মানে এখন আর নিশ্চিত মৃত্যু নয়।

সায়েন্টিফিক আমেরিকান

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন