মানবদেহের বিকাশে কার্বোহাইড্রেটের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উৎস গম। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি প্রতিদিন গম ও গম থেকে তৈরি বিভিন্ন খাবার খায়। বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে বেশি উৎপাদিত কৃষিপণ্যের তালিকায় গম রয়েছে দ্বিতীয় অবস্থানে। কৃষিপণ্যটির উৎপাদন ও রফতানিতে এগিয়ে রয়েছে এশিয়া, ইউরোপ, উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলো। অন্যদিকে সবচেয়ে বেশি গম আমদানি করে আফ্রিকা ও এশিয়ার দেশগুলো। গত বছর বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে গমের শীর্ষ উৎপাদনকারী, রফতানি ও আমদানিকারক দেশ এবং অঞ্চল নিয়ে এবারের ধারাবাহিক আয়োজন—
মিসর
গম উৎপাদন ও রফতানিতে আফ্রিকার দেশগুলো বেশ পিছিয়ে রয়েছে। তবে কৃষিপণ্যটির আমদানিতে এগিয়ে রয়েছে এ মহাদেশ। উত্তর আফ্রিকার দেশ মিসর গত বছর গম আমদানিকারকদের বৈশ্বিক তালিকায় শীর্ষে ছিল। এ সময় মিসরের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি গম আমদানির রেকর্ড হয়েছে। ২০১৯ সালে মিসরীয় আমদানিকারকরা আন্তর্জাতিক বাজার থেকে সব মিলিয়ে ১ কোটি ৩৩ লাখ টন গম আমদানি করেছেন, যা আগের বছরের তুলনায় ৭ দশমিক ৭২ শতাংশ বেশি। ২০১৮ সালে দেশটিতে মোট ১ কোটি ২৩ লাখ ৪৭ হাজার টন গম আমদানি হয়েছিল, যা আগের বছরের তুলনায় দশমিক ৪৮ শতাংশ কম। টানা সাত বছর ধরে দেশটি বছরে এক কোটি টনের বেশি গম আমদানি করে আসছে।
টানা সাত বছরের চাঙ্গা ভাব কাটিয়ে গত বছর মন্দার মুখে পড়েছে বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ গম আমদানিকারক দেশ ইন্দোনেশিয়া। বিদায়ী বছরে দেশটিতে সব মিলিয়ে ১ কোটি ৮ লাখ টন গম আমদানি হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১ দশমিক ২৩ শতাংশ কম। এর আগের বছরে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে ইন্দোনেশীয় আমদানিকারকরা সব মিলিয়ে ১ কোটি ৯ লাখ ৩৪ হাজার টন গম আমদানি করেছিলেন, যা আগের বছরের তুলনায় ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ বেশি। দেশটির ইতিহাসে এটাই ছিল সবচেয়ে বেশি গম আমদানির রেকর্ড। টানা পাঁচ বছর ধরে দেশটি বছরে এক কোটি টনের বেশি গম আমদানি করে আসছে।
রফতানিকারকদের তালিকায় এগিয়ে থাকলেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অভ্যন্তরীণ চাহিদার জের ধরে তুরস্ক প্রতি বছর গম আমদানিতেও এগিয়ে থাকে। গত বছর দেশটি বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ গম আমদানিকারকের স্বীকৃতি পেয়েছে। বিদায়ী বছর দেশটিতে সব মিলিয়ে ১ কোটি ৫ লাখ টন গম আমদানি হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় রেকর্ড ৬৪ দশমিক ৯৪ শতাংশ বেশি। দেশটির ইতিহাসে এটাই কৃষিপণ্যটির আমদানির সর্বোচ্চ রেকর্ড। এমনকি ২০১৯ সালে তুরস্কের আমদানিকারকরা প্রথমবারের মতো ১ কোটি টনের বেশি গম আমদানি করেছেন। এর আগের বছর দেশটিতে সাকল্যে ৬৩ লাখ ৬৬ হাজার টন গম আমদানি হয়েছিল, যা আগের বছরের তুলনায় ৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ বেশি।
বিশ্বের চতুর্থ শীর্ষ ও দক্ষিণ আমেরিকায় শীর্ষ গম আমদানিকারক দেশ ব্রাজিল। গত বছর দেশটিতে সব মিলিয়ে ৭২ লাখ টনের কিছু বেশি গম আমদানি হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় রেকর্ড ২ দশমিক ৫৬ শতাংশ বেশি। দেশটির ইতিহাসে এটাই কৃষিপণ্যটি আমদানির সর্বোচ্চ রেকর্ড। এর আগের বছর ব্রাজিলে সব মিলিয়ে ৭০ লাখ ২০ হাজার টন গম আমদানি হয়েছিল, যা আগের বছরের তুলনায় দশমিক ১ শতাংশ কম। টানা দুই বছরের মন্দা ভাব কাটিয়ে গত বছর চাঙ্গা হয়ে উঠেছে ব্রাজিলের গম আমদানি খাত।
২০১৮ সালে ফিলিপাইনের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি গম আমদানির রেকর্ড হয়েছিল। ওই বছর দেশটির আমদানিকারকরা আন্তর্জাতিক বাজার থেকে সব মিলিয়ে ৭৫ লাখ ৪৬ হাজার টন গম আমদানি করেছিলেন, যা আগের বছরের তুলনায় ২৪ দশমিক ৫৪ শতাংশ বেশি। তবে গত বছর দেশটিতে কৃষিপণ্যটির আমদানি ৪ দশমিক ৫৯ শতাংশ কমে ৭২ লাখ টনে নেমে এসেছে। এর মধ্য দিয়ে গত বছর বিশ্বের পঞ্চম শীর্ষ গম আমদানিকারক দেশের তকমা পেয়েছে ফিলিপাইন। (চলবে)
ইউএসডিএ ও এগ্রিমানি
