ক্ষুদ্র ব্যবসা রক্ষায় ভারতের ৪ হাজার কোটি ডলারের প্যাকেজ অপর্যাপ্ত

বণিক বার্তা ডেস্ক

কয়েক মাসের লকডাউন শেষে ভারতে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো চালু হলেও নয়াদিল্লির কাছাকাছি মিরুত শহরের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য তা কঠিন মুহূর্ত হিসেবে দেখা দিয়েছে। পোশাক শিল্প থেকে ক্রীড়াসামগ্রী তৈরি কিংবা আসবাব তৈরির প্রতিষ্ঠানগুলো ন্যূনতম সক্ষমতা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। আগে যে শহরটির রাস্তা কর্মজীবী মানুষ যানবাহনে ভরপুর ছিল, সেখানে এখন গবাদিপশু স্বাধীনভাবে হেঁটে বেড়াচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার ক্ষুদ্র ব্যবসাগুলোকে চাঙ্গা করতে যে হাজার কোটি ডলারের প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলেন, তা যথেষ্ট মনে হচ্ছে না এবং ভারতের অর্থনীতির মেরুদণ্ড বিবেচিত ওই ব্যবসাগুলোর বেশির ভাগই বাঁচানো কঠিন ঠেকবে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের রকম তিন ডজন উদ্যোক্তা। 

কেউ কেউ বলছেন, মহামারীতে তারা এত ধাক্কা খেয়েছেন যে তাদের জন্য নতুন ঋণ তেমন অর্থ বহন করছে না; বরং পণ্য সেবা কর (জিএসটি) হ্রাস এবং ঋণের সুদ অব্যাহতির মাধ্যমে সরকার প্রকৃত সহায়তা করতে পারে বলে মনে করছেন তারা।

অন্যরা বলছেন, যদিও মোদি ঋণ সুবিধা উন্মুক্ত করার কথা বলছেন, কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলো যে গভীর সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তাদের জন্য ব্যাংকগুলোকে আশ্বস্ত করা কঠিন ঠেকছে।

স্কুল হোটেলের জন্য ইস্পাতের আসবাব তৈরিকারী মিরুতভিত্তিক একটি কোম্পানির স্বত্বাধিকারী অশোক বলছেন, মহামারীর আগে কোম্পানির বার্ষিক আয় কোটি রুপি বা লাখ ৩৩ হাজার ডলারের কাছাকাছি থাকলেও বর্তমানে ১০ কর্মীর আটজনকে ছাঁটাইয়ে বাধ্য হয়েছেন তিনি। এমনকি কোম্পানিটি একেবারে বন্ধ করে দেয়ার কথা ভাবছেন বলেও জানা গেছে। 

পুরো নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অশোক আরো বলেন, ঋণ পেতে দ্বারে দ্বারে দৌড়ানোর চেয়ে কোম্পানি বন্ধ করে দেয়াই উত্তম। এছাড়া ব্যবসা কার্যক্রম ধুঁকতে থাকার কারণে যে ব্যাংক থেকে আগে ঋণ নিয়েছেন, তা জানিয়ে দিয়েছে যে তার নতুন ঋণপ্রাপ্তির সম্ভাবনা ক্ষীণ।

ব্যবসায়ীরা যে সংকটের মুখোমুখি হচ্ছেন, সে বিষয়ে ঋণসহায়তা পরিকল্পনা গ্রহণকারী অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে রয়টার্সের অনুরোধে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

দশমিক ট্রিলিয়ন ডলারের ভারতের অর্থনীতির প্রায় এক-চতুর্থাংশের প্রতিনিধিত্ব করে ক্ষুদ্র ব্যবসাগুলো। মহামারীতে মারাত্মকভাবে আক্রান্ত খাতে ৫০ কোটিরও বেশি কর্মী কাজ করছেন।

মোদির দপ্তরে পাঠানো দ্য কনসোর্টিয়াম অব ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের এক চিঠিতে বলা হয়, সরকারি সহায়তার অভাবে প্রায় ৩৫ শতাংশ ক্ষুদ্র ব্যবসাই বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

ব্যাংকগুলো বলছে, যদিও ঋণ দিতে সরকারের তরফ থেকে চাপ রয়েছে, কিন্তু ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো ঋণ নিতে এগিয়ে আসছে না।

সরকারি উপাত্তে দেখা গেছে, হাজার ১৪৫ বিলিয়ন রুপি ঋণের জন্য বরাদ্দ হলেও মাত্র ৫৬১ বিলিয়ন রুপি ঋণ হস্তান্তর করেছেন ঋণদাতারা, যা অনুমোদিত ঋণের মাত্র ১৯ শতাংশ। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, ঋণদাতারা অতিরিক্ত নথিপত্রের দাবি করছে বা যে প্রতিষ্ঠানগুলোর জরুরি ঋণসহায়তা দরকার, সেগুলো ব্যাংকের কাছে অযোগ্য মনে হচ্ছে।

ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার পরিস্থিতির পেছনে যা ভূমিকা রেখেছে, তার মধ্যে রয়েছে সরবরাহকারীদের বকেয়া অর্থ না পাওয়া, ক্রয়াদেশ শূন্যের কোটায় নেমে আসা এবং তার বিপরীতে বিদ্যুৎ, মজুরি, অন্যান্য ব্যাংকঋণের কিস্তি পরিশোধে অর্থব্যয় অব্যাহত থাকা।

মাত্র ২৫ শতাংশ কারখানা সক্ষমতা নিয়ে কাজ করা মিরুতের একটি তৈরি পোশাক কারখানার মালিক সঞ্জীব রাস্তোগি বলেন, সরকারি সহায়তা তহবিল থেকে আমরা এখনো রুপিও পাইনি।

গত দুই মাসে ৩৫ লাখ রুপি লোকসান গুনেছে রাস্তোগির প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমান পরিস্থিতি বহাল থাকলে আগামী তিন মাসের মধ্যে কারখানা বন্ধ করে দিতে হবে বলে মনে করেন তিনি।

ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের মিরুত চ্যাপ্টারের চেয়ারম্যান অনুরাগ আগারওয়াল জানান, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে মিরুতের ১০ হাজার বস্ত্র কারখানার ২৫ শতাংশ হয় বন্ধ করে দেবে বা ঋণখেলাপিতে পরিণত হবে।

রয়টার্স

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন