করোনার কারণে ৯ হাজার কর্মী ছাঁটাইয়ের পথে এমিরেটস

বণিক বার্তা ডেস্ক

বৈশ্বিক মহামারী নভেল করোনাভাইরাসের কারণে নয় হাজারের মতো কর্মী ছাঁটাই করতে যাচ্ছে বিমান পরিবহন সংস্থা এমিরেটস। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক এয়ারলাইনসটির প্রেসিডেন্ট স্যার টিম ক্লার্ক জানিয়েছেন, এরই মধ্যে তারা এক-দশমাংশ কর্মী ছাঁটাই করেছেন। কিন্তু পরিস্থিতি বিবেচনায় তারা আরো ছাঁটাইয়ের পথে হাঁটছেন। সব মিলিয়ে ছাঁটাই করা হতে পারে বিমান পরিবহন সংস্থাটির কর্মী সংখ্যার ১৫ শতাংশ। খবর বিবিসি।

এই প্রথম বিশ্বের সর্ববৃহৎ দীর্ঘযাত্রার বিমান পরিবহন সংস্থা এমিরেটস কী পরিমাণ কর্মী ছাঁটাই করা হবে তা প্রকাশ করল। করোনা সংকট হাজির হওয়ার আগে এমিরেটসের মোট কর্মী ছিল ৬০ হাজার। মূলত নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৈশ্বিক বিমান পরিবহন খাতের ওপর মারাত্মক আঘাত হেনেছে। লকডাউন সীমান্ত বন্ধের কারণে কার্যত স্থগিত ছিল বিশ্বের অধিকাংশ এয়ালাইনের ফ্লাইট। বাস্তবতায় এক সাক্ষাত্কারে স্যার টিম বলেন, করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এমিরেটসের অবস্থা ঠিক অন্যদের মতো অতটা খারাপ ছিল না। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে মনে হচ্ছে, এয়ারলাইনসটিকে বেশ কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। অথচ করোনা সংক্রমণের আগে মনে করা হচ্ছিল, ২০২০ সাল এমিরেটসের জন্য শ্রেষ্ঠ বছর হতে যাচ্ছে।

বিমান পরিবহন খাতে ঢালাও কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘটনা এমিরেটসের কর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। পরিস্থিতি যে যেকোনো সময় তাদের জন্যও বাজে হতে পারে, সে বিষয়ে তারা শঙ্কার মধ্যেই ছিলেন। অথচ বিষয়ে এয়ারলাইনসের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করে কিছু বলা হচ্ছিল না, যা কর্মীদের মাঝে হতাশা বাড়িয়ে দিচ্ছে। জানা গেছে, গত সপ্তাহে এমিরেটসের সাড়ে চার হাজার পাইলটের মধ্যে অন্তত ৭০০ জনকে ছাঁটাইয়ের নোটিস দেয়া হয়। এর মানে হলো, করোনা সংকট সৃষ্টির পর নিয়ে অন্তত হাজার ২০০ জনকে বলা হলো যে তাদের চাকরি থাকছে না।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এমিরেটসের ছাঁটাইয়ের প্রক্রিয়া হবে তাদের এয়ারবাস উড়োজাহাজকেন্দ্রিক। কারণ এমিরেটসের সুপারজাম্বো এয়ারবাস এ৩৮০এস মডেলের উড়োজাহাজে প্রায় ৫০০ যাত্রী পরিবহন করা হয়। অন্যদিকে বোয়িং ৭৭৭ মডেলের উড়োজাহাজে পরিবহন করা হয় তুলনামূলক কম যাত্রী। কিন্তু বর্তমানে আকাশপথে যাত্রীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে। এর মানে হলো, বর্তমান পরিস্থিতিতে এয়ারবাসের চেয়ে বোয়িংয়ের উড়োজাহাজের ফ্লাইট পরিচালনাই যুক্তিযুক্ত। অবস্থায় পাইলটদের পাশাপাশি কয়েক হাজার কেবিন ক্রুকেও আর প্রয়োজন নেই বলে জানিয়ে দিয়েছে এমিরেটস।

২৯০টি বিমান পরবিহন সংস্থার প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন দি ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইএটিএ) পূর্বাভাসে জানিয়েছে, চলতি বছর বৈশ্বিক এয়ারলাইনসের ক্ষতি ছাড়িয়ে যাবে হাজার ৪০০ কোটি ডলারেরও বেশি। পাশাপাশি চাকরি হারাবে খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ১০ লাখ মানুষ। শুধু এমিরেটসই নয়, সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের তিন বৃহত্তম বিমান পরিবহন সংস্থার অন্যতম ইউনাইটেড এয়ারলাইনসও ছাঁটাইয়ের কথা জানিয়েছে। ইউনাইটেড কর্তৃপক্ষ তাদের কর্মীদের সতর্ক করে দিয়ে জানিয়েছে, বিমান ভ্রমণ চাহিদা পতনের কারণে তাদেরকে ৩৬ হাজার কর্মী ছাঁটাইয়ের পথে হাঁটতে হতে পারে।

বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান কাওয়েনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জ্যেষ্ঠ গবেষণা বিশ্লেষক হেলেন বেকার বলেন, বৈশ্বিক মহামারীকে কেন্দ্র করে যেসব বিষয় পরিস্থিতি বর্তমানে আবর্তিত হচ্ছে, তাতে চলতি বছর মার্কিন এয়ারলাইনসগুলো তাদের সাড়ে সাত লাখের মধ্যে অন্তত দুই লাখ কর্মীকে ছাঁটাই করতে পারে। অবস্থায় মার্কিন এভিয়েশন ইউনিয়নগুলো কেন্দ্রীয় সরকারকে তার বেইলআউট প্যাকেজে আরো অর্থ যুক্ত করার জন্য চাপ দিয়ে আসছে। তবে রাষ্ট্রীয় সহায়তা পেতে এয়ারলাইনসগুলোকে সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ কর্মীদের চাকরির সুরক্ষা নিশ্চিত কতে হবে।

আইএটিএর মুখপাত্র বলেন, যে হারে কর্মী ছাঁটাই করা হচ্ছে, তাতে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে বিমান পরিবহন খাত কী পরিমাণ ভয়াবহ আর্থিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তার মতে, ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া রোধে সরকারগুলো যে পদক্ষেপ নিয়েছে, তার পেছনে যথেষ্ট যুক্তি রয়েছে। কিন্তু একই সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের পদক্ষেপের কারণে সৃষ্ট আর্থিক ক্ষতির বিষয়েও পূর্ণ জ্ঞান রাখতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন