বিদেশীদের জন্য কোয়ারেন্টিন শিথিল করেছে যুক্তরাজ্য

বণিক বার্তা ডেস্ক

ফ্রান্স, ইতালি, বেলজিয়াম, জার্মানি, স্পেনসহ ৫৮টি দেশ থেকে ভ্রমণকারীদের জন্য কোয়ারেন্টিনের বিধি শিথিল করেছে যুক্তরাজ্য সরকার। গতকাল থেকে চালু হওয়া নিয়ম অনুসারে এই ৫৮টি দেশ থেকে আসা ভ্রমণকারীরা যুক্তরাজ্যের তিনটি দেশে প্রবেশ করলে তাদের বাধ্যতামূলকভাবে ১৪ দিন সেলফ আইসোলেশনে থাকতে হবে না। খবর সিএনএন।

এই ৫৮টি দেশের তালিকা থেকে বাদ পড়াদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য যুক্তরাষ্ট্র, চীন পর্তুগাল। এসব দেশের পরিস্থিতি পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনার পর নতুন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে বলে ব্রিটিশ সরকার জানিয়েছে।

ইংল্যান্ডের পাশাপাশি ওয়েলস উত্তর আয়ারল্যান্ডে ভ্রমণকারীরাও ছাড়ের সুবিধা পাবে। তবে যুক্তরাজ্যের অন্তর্গত হলেও একই ধরনের পৃথক একটি তালিকা তৈরি করেছে স্কটল্যান্ড। তবে তাদের তালিকাটি একটু ছোট, যেখানে জায়গা হয়েছে ৩৯টি দেশের। স্কটল্যান্ডের সংক্ষিপ্ত তালিকায় স্পেনের ঠাঁই হয়নি।

যুক্তরাজ্যের পরিবহনবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী গ্র্যান্ট শ্যাপস বলেছেন, আপনি যদি অবকাশে থাকেন বিদেশে ভ্রমণ করতে ইচ্ছুক থাকেন অথবা কোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান যদি তাদের কার্যক্রম আবার চালু করতে চায়, তবে ব্রিটিশ জনগণ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য এটি একটি সুসংবাদ।

তবে প্রয়োজন মনে হলে ফের কঠোর বিধিনিষেধ আরোপে পিছপা হবে না যুক্তরাজ্য। শ্যাপস বলেন, অবস্থায় আসতে গোটা জাতি নিরলস পরিশ্রম করেছে। কারণে আমাদের সুরক্ষার বিষয়টিকে সবার আগে দেখতে হবে। আমরা যেসব দেশের সঙ্গে সংযুক্ত হতে যাচ্ছি, সেখানে যদি সংক্রমণ আবার বেড়ে যায়, তবে সে অনুযায়ী দ্রুত ব্যবস্থা নিতে দ্বিধা করব না আমরা।

গত জুন ভ্রমণকারীদের জন্য বাধ্যতামূলক দুই সপ্তাহের কোয়ারেন্টিন বিধি চালু করে যুক্তরাজ্য সরকার। তবে চালুর পর থেকেই পর্যটন খাতসংশ্লিষ্টদের সমালোচনার তীরে বিদ্ধ হতে হয় তাদের। খাতসংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, নভেল করোনাভাইরাসের কারণে যে স্থবিরতা নেমে এসেছিল, তা থেকে উত্তরণের গতি শ্লথ করে দেবে সরকারের সিদ্ধান্ত।

সরকারকে পদক্ষেপ থেকে পিছু হটার জন্য চাপ দিতে প্রচারণা চালাচ্ছে কোয়াশ কোয়ারেন্টিন নামে একটি ক্যাম্পেইন গ্রুপ। এর সদস্য পল চার্লসের মতে, সরকারের নির্দেশনা অকার্যকর অপ্রয়োগযোগ্য সিএনএন ট্রাভেলকে তিনি বলেন, গত কয়েক সপ্তাহে বহু মানুষ তাদের কাজ হারিয়েছে। কারণ কোয়ারেন্টিনের ভয়ে বিদেশীরা এখন যুক্তরাজ্যে ভ্রমণের জন্য বুকিং দিতে চাইছে না। ফলে কোয়ারেন্টিনের বিধিনিষেধ ভবিষ্যতের বুকিংয়ের জন্যও বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

উপরোল্লিখিত ৫৮টি দেশ থেকে আসা পর্যটকদের বাধ্যতামূলকভাবে সেলফ আইসোলেশনে থাকতে হবে না। তবে তাদের কিছু তথ্য দিতে হবে। যেমন যুক্তরাজ্যে এসে তারা কোথায় উঠবে, কিংবা তাদের ট্রিপের মেয়াদ কতদিন, সেসব তথ্য জানাতে হবে সরকারকে।

যুক্তরাজ্যের পরিবহন মন্ত্রণালয় মনে করছে, এই ৫৮টি দেশ থেকে আসা ভ্রমণকারীরা যুক্তরাজ্যের জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য তুলনামূলক কম ঝুঁকির কারণ হবে।

সম্প্রতি ব্রিটিশ সরকার জানিয়েছে, করোনা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হওয়ায় ইংল্যান্ডে জিমনেশিয়াম, সুইমিংপুল, অবকাশকেন্দ্র, বিউটি পার্লার আউটডোর শিল্পকেন্দ্রগুলো পুনরায় চালু করা যাবে।

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যে কভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছে লাখ ৮৮ হাজার জন। তাদের মধ্যে মারা গেছে ৪৪ হাজার ৬০২ জন। সংক্রমণের সংখ্যায় বিশ্বে ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাজ্য। আর মৃতের সংখ্যায় রয়েছে তৃতীয় অবস্থানে। মাস দুয়েক ধরে যুক্তরাজ্যে করোনা সংক্রমণের গ্রাফ নিম্নমুখী। বিশেষ করে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে সংক্রমণ অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। সর্বশেষ ২৭ জুন সংক্রমণ হাজার ছাড়িয়েছিল। এর পর থেকে শনাক্তের সংখ্যা হাজারের নিচেই রয়েছে।

ইংল্যান্ডে কভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে লাখ ৬১ হাজার। এছাড়া লন্ডনে ৩৩ হাজার ৭২৯, স্কটল্যান্ডে ১৮ হাজার ৩১৫, ওয়েলসে ১৫ হাজার ৮৯০ উত্তর আয়ারল্যান্ডে হাজার ৮৮৪ জন কভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন