বালাসী-বাহাদুরাবাদ ফেরিঘাট প্রকল্প

ড্রেজিং করে বালি নদীতেই ফেলেছে ঠিকাদার

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানী থেকে উত্তরাঞ্চলে যাতায়াতের বিকল্প পথ তৈরির লক্ষ্যে জামালপুরের বাহাদুরাবাদ গাইবান্ধার বালাসী ঘাটের মধ্যে যমুনা নদীতে নৌ চ্যানেল তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এজন্য নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের একটি উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে এরই মধ্যে সমাপ্ত হয়েছে নদীর ড্রেজিং। তবে ড্রেজিং করা বালির অর্ধেকই নদীর অভ্যন্তর পাড়ে ফেলেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ফলে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে উত্তোলন করা বালি দিয়ে ফের নৌ চ্যানেলটি ভরাট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) এক প্রতিবেদনে তথ্য উঠে এসেছে।

বালাসী বাহাদুরাবাদ ফেরিঘাটসহ আনুষঙ্গিক স্থাপনা নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ফেরিঘাট বেসিন এবং ফেরি রুট চ্যানেল তৈরির জন্য ৩০ লাখ ঘনমিটার ড্রেজিং করা হয়েছে। সবমিলে প্রকল্পটির জন্য কোটি ৩৮ লাখ ঘনমিটার ড্রেজিং করা হয়েছে। প্রকল্পের ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) অনুযায়ী, মাটির ডাইক এবং তরজার বেড়া নির্মাণ করে সেখানে ড্রেজিংয়ের বালি সংরক্ষণের কথা। তবে আইএমইডির নিবিড় পরিবীক্ষণ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ড্রেজিং করা বালির ২৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ ফেলা হয়েছে নদীতে। আর ২৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ বালি ফেলা হয়েছে নদীর পাড়ে। অর্থাৎ প্রায় ৫১ শতাংশ বালিই ফেলা হয়েছে নদী নদীর পাড়ে। অন্যদিকে ৪৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ বালি মাটির ডাইক বানিয়ে ফেলা হলেও সেখানে কোনো বেড়া দেয়া হয়নি।

এক সময়ের জনপ্রিয় ফেরি রুট বালাসী-বাহাদুরাবাদ নাব্য সংকটে ২০০৪ সাল থেকে বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৭ সালে ঘাটটি নতুন করে চালুর উদ্যোগ নেয় সরকার। ওই বছরের মার্চে ঘাটটির নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন তৎকালীন নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান। শুরুতে কথা ছিল ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে ঘাটটির কাজ সমাপ্ত হবে। ধীরগতির কারণে এক বছর পেছানো হয় প্রকল্পের মেয়াদ। তাতেও কাজে গতি আসেনি। প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত। আনুষঙ্গিক অবকাঠামোসহ বালাসী-বাহাদুরাবাদ ফেরিঘাট নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ১৪৫ কোটি ৬২ লাখ টাকা।

প্রকল্পের অধীনে ড্রেজিংসহ বিভিন্ন কাজ বাস্তবায়ন করছে ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড (ডব্লিউইএল) নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তাদের সঙ্গে যৌথভাবে এসএস রহমান ইন্টারন্যাশনাল (এসএসআরআই) নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠানও কাজ করছে প্রকল্পে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফেরিঘাট বেসিন ফেরির রুট চ্যানেল তৈরি জন্য ড্রেজিংয়ের কাজ শেষ হয়েছে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে। যদিও কাজটি শেষ হওয়ার কথা ছিল তারও তিন মাস আগে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০১৯ সালের জুলাইয়ে যমুনার পানি অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেলে ড্রেজিং কাজ বিঘ্নিত হয়। প্রায় ১৫০ কোটি টাকা প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে ৬০ কোটি টাকাই ব্যয় হয়েছে ড্রেজিংয়ের কাজে।

নৌ চ্যানেলের জন্য ৩০ লাখ ঘনমিটার ড্রেজিং করা হয়েছে। নদীর কাবিলপুর, মানিককর, খাদিয়ামারী, চর বুলবুলি, উরিয়া, রসুলপুর, কুচখালী (ফুলছড়ি উপজেলা) এবং ফুটানীবাজার (দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা) পয়েন্টে ড্রেজিং করা হয়েছে। এর মধ্যে কাবিলপুর, মানিককর, খাদিয়ামারী, চর বুলবুলি, উড়িয়া রসুলপুর পয়েন্টে ড্রেজিংয়ের সিংহভাগ বালি ফেলা হয়েছে নদীতে। ফুটানীবাজার পয়েন্টে বালি ফেলা হয়েছে নদীর পাড়ে।

নদীর একটি অংশে ড্রেজিংয়ের কাজ করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এসএস রহমান ইন্টারন্যাশনাল। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাদের দাবি, ড্রেজিংয়ের পর বালি নদীতে ফেলা হয়নি। প্রতিষ্ঠানটির বালাসী-বাহাদুরাবাদ ঘাট প্রকল্পের ম্যানেজার বায়োজিদ হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, আমার জানা মতে ড্রেজিং করা বালি নদীতে ফেলা হয়নি। বরং এসব বালি নদীর পাশে থাকা কৃষকদের নিচু জমি, পুকুর ভরাটসহ আনুষঙ্গিক কাজে ব্যবহার করা হয়েছে।

ড্রেজিং করা বালি নদীতেই ফেলা প্রসঙ্গে একাধিকবার চেষ্টা করেও বালাসী বাহাদুরাবাদ ফেরিঘাটসহ আনুষঙ্গিক স্থাপনা নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক নিজামউদ্দিন পাঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন