নভেল করোনাভাইরাসের ঝুঁকির সঙ্গে যুক্ত বিষয়গুলোর তালিকা দীর্ঘ
হচ্ছে। এবার এর সঙ্গে যুক্ত হলো আরো কিছু ওষুধ। নতুন একটি গবেষণায় দেখা গেছে, হার্টবার্ন বা বুক জ্বালার ওষুধগুলোর একটি জনপ্রিয় ফর্ম কভিড-১৯-এর ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে। গত মঙ্গলবার প্রি-প্রিন্ট গবেষণাটি আমেরিকান জার্নাল অব গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিতে প্রকাশিত হয়।
সিডারস-সিনাই মেডিকেল সেন্টারের ডা. ব্রেনান স্পিগেলের নেতৃত্বে বিজ্ঞানীরা ৮৬ হাজারেরও বেশি মানুষের ওপর অনলাইনে একটি জরিপ চালিয়েছেন। এর মধ্যে ৫৩ হাজারেরও বেশি মানুষ পেটে ব্যথা বা অস্বস্তি, অ্যাসিড রিফাক্স, বুক জ্বালা বা বমি হওয়ার কথা বলেছেন এবং এ লক্ষণগুলো থেকে মুক্তি পেতে তারা যে ওষুধগুলো নিয়েছিলেন, সে সম্পর্কে প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। তাদের মধ্যে ৩ হাজার ৩০০-এরও বেশি মানুষ কভিড-১৯ পজিটিভ।
গবেষকরা যখন সংগৃহীত তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করেন, তারা দেখতে পান, যে উত্তারদাতারা তাদের বুক জ্বালা নিরাময়ের জন্য প্রোটন পাম্প ইনহিবিটার (পিপিআই) ওষুধ ব্যবহার করেছেন, তাদের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ওই ওষুধ ব্যবহার না করাদের তুলনায় দুই থেকে চার গুণ বেশি ছিল। পিপিআই ওষুধগুলো পেটে অ্যাসিড নিঃসরণকারী কোষের পাম্পগুলো বন্ধ করে দিয়ে কাজ করে। ওষুধগুলো দিনে একবার বা দুবার নেয়া যেতে পারে। দিনে একবার ওষুধগুলো গ্রহণকারীদের তুলনায় দিনে দুবার গ্রহণকারী মানুষের সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি থাকে।
আমেরিকান জার্নাল অব গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজির প্রধান সম্পাদক স্পিগেল বলেছেন, গবেষণার ফলগুলো দেখে অবাক হওয়ার কিছু নেই। এর আগের গবেষণায়ও দেখা গেছে পিপিআইর ওষুধ সেবনকারীদের সিডিফিসিলসহ কিছু নির্দিষ্ট সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি থাকে। এর কারণ হলো ওষুধগুলো পেটে অ্যাসিড হ্রাস করে আর অ্যাসিড হলো শরীরের সম্ভাব্য ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসকে হত্যা করার একটি উপায়।
তবে স্পিগেল আশ্চর্য হয়েছিলেন যে প্রভাবটি আগের চেয়ে বড় আকারের বলে মনে হয়েছিল। তিনি বলেন, আমরা একটি জৈবিক গ্রেডিয়েন্ট পেয়েছি, যেখানে ওষুধের ডোজ যত বেশি কভিড-১৯-এর ক্ষেত্রে প্রভাবও তত বেশি হবে।
পেট ও নাড়িসহ অন্ত্রকে শরীরের বৃহত্তম প্রতিরোধক্ষম অঙ্গ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। যদি অন্ত্রের স্বাভাবিক পরিবেশ পরিবর্তিত হয়—বুক জ্বালার ওষুধ সেবনে যেমনটা হতে পারে, তাহলে শরীর কভিড-১৯ ভাইরাসগুলোর জন্য উর্বর জমিতে পরিণত হতে পারে।
স্পিগেল বলেন, কভিড-১৯-এর মতো ভাইরাসগুলো গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাককে দ্রুত আক্রমণ করতে সক্ষম। এটা আক্রমণ, প্রতিলিপি ও দক্ষতার সঙ্গে সংক্রমণ ঘটাতে পারে। পিপিআই ওষুধ গ্রহণ করা মানুষরা এটা গ্রহণ না করাদের তুলনায় কভিড-১৯ সংক্রমণের বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে, তবে পরম ঝুঁকিটি এখনো কম। এর অর্থ হলো পিপিআই নেয়া মানুষদের চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ না করে ভাইরাসের ভয়ে তাত্ক্ষণিকভাবে এটা বন্ধ করা উচিত নয়। পিপিআই গ্রহণ করেও সংক্রমণের ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে—এমন উপায় রয়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, দিনে একবার ওষুধটি সেবন করা দিনে দুবার সেবন করার মতোই কার্যকর। গবেষণাটিতে যেহেতু দেখা গেছে ডোজ কমানোর সঙ্গে ঝুঁকি হ্রাসের বিষয়টি যুক্ত, তাই তাদের প্রতিদিনের ডোজ কমানোর বিষয়ে চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত।
টাইম ম্যাগাজিন