ঘরেই অফিস

ফরমাল পোশাকের চাহিদা পতনে বড় সংকটে বিক্রেতারা

বণিক বার্তা ডেস্ক

পুরুষদের পোশাক বিক্রির ক্ষেত্রে ২০০ বছরের বেশি পুরনো প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের ব্রুকস ব্রাদার্স। ফরমাল বা অফিশিয়াল ড্রেস কোডের পোশাক বিক্রিতে প্রতিষ্ঠানটির সুনাম কিংবদন্তিতুল্য। সত্যি বলতে, ৪০ জন মার্কিন প্রেসিডেন্টের পোশাক তৈরিকারী ব্রুকস ব্রাদার্স আর ধ্রুপদী ওয়াল স্ট্রিট ব্যাংকার লুক পরস্পরের সমার্থক। অথচ এমন একটি প্রতিষ্ঠানকেই ব্যবসায় মন্দার কারণে স্থানীয় সময় গত বুধবার দেউলিয়াত্বের আবেদন করতে হয়েছে। শুধু ব্রুকস ব্রাদার্সই নয়, নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রেক্ষাপটে বর্তমানে অভাবনীয় ব্যবসায়িক সংকটে পড়েছে অফিসগামীদের জন্য ফরমাল পোশাক তৈরি বিক্রয়কারী অনেক প্রতিষ্ঠান। খবর সিএনএন বিজনেস।

করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া রোধে এবং কর্মীদের সুরক্ষার কথা চিন্তা করে বহু করপোরেট প্রতিষ্ঠান বর্তমানে হোম অফিস চালু রেখেছে। আর বাস্তবতায় খুব দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে অফিশিয়াল পোশাকের চাহিদার গতিপ্রকৃতি। গত কয়েক মাসে ব্যাপক মাত্রায় কমে গেছে স্যুটের মতো অতি প্রাসঙ্গিক ফরমাল পোশাকের বিক্রি, যা সংশ্লিষ্টদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখাকেই এখন দারুণ চ্যালেঞ্জের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। অ্যান টেইলর লেন ব্রায়ান্টের মতো পোশাক বিক্রি চেইনের মালিক যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাসেনা রিটেইল গ্রুপ জানিয়েছে, পোশাক বিক্রি কমে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে বর্তমানে কোম্পানিটিকে টিকে থাকার জন্য রীতিমতো লড়াই করতে হচ্ছে। অন্য পোশাকের পাশাপাশি তাদের ফরমাল ড্রেস বিক্রি কমে গেছে অভাবনীয় মাত্রায়। অবস্থায় অ্যাসেনা তাদের হাজার ২০০ বিক্রয়কেন্দ্র বন্ধ করে দেয়ার কথা ভাবছে। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা পুয়ের্তো রিকোয় অ্যাসেনার মোট বিক্রয়কেন্দ্র আছে হাজার ৮০০।

পোশাক বিক্রির দুরবস্থা বিপাকে ফেলেছে মার্কিন খুচরা বিক্রেতা কোম্পানি মেনস ওয়্যারহাউজকেও। মূলত যুক্তরাষ্ট্রে নভেল করোনাভাইরাসের কারণে বিপর্যস্ত অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে এক কোটির বেশি পুরুষ চাকরি হারিয়েছেন। একই সঙ্গে বাড়িতে বসে কাজ করছেন আরো কয়েক লাখ। ফলে এখন নতুন স্যুট বা ফরমাল পোশাক ক্রয় তাদের বিবেচনায় নেই বললেই চলে। অবস্থায় মেনস ওয়্যারহাউজের মালিক প্রতিষ্ঠান খুচরা বিক্রেতা টেইলরড ব্র্যান্ডসও দেউলিয়াত্ব আবেদনকারীর সম্ভাব্য তালিকায় রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাসায় বসে কাজ করা এবং ইন্টারনেটে মিটিংয়ের কারণে এখন আর কর্মীদের পোশাক নিয়ে খুব একটা ভাবতে হচ্ছে না। তাছাড়া কয়েক বছর ধরেই ফরমাল পোশাকের ক্ষেত্রে এক ধরনের শিথিলতা দেখা যাচ্ছিল। আর এর মধ্যেই ফরমাল পোশাকের ব্যবহারের ওপর চরম আঘাত হানল নভেল করোনাভাইরাস। অনেকের ধারণা, মহামারী চিরকালের জন্য ফরমাল পোশাক পরিধানের বাধ্যবাধকতার অবসান ঘটাতে পারে।

নিউইয়র্কভিত্তিক পোশাকসজ্জা বিশেষজ্ঞ জেসিকা ক্যাডমাস বলেন, ব্রুকস ব্রাদার্সের মতো প্রতিষ্ঠানের দেউলিয়াত্বের আবেদন সত্যিই অবিশ্বাস্য। ক্যাডমাস একসময় ব্রুকস ব্রাদার্সে কাজ করতেন। আর বর্তমানে তার কাছে যারা পরামর্শ নিতে আসেন, তাদের অধিকাংশই আর্থিক খাতে কর্মরত। ক্যাডমাসের মতে, তার অভিজ্ঞতা অনুযায়ী বেশ কয়েক বছর ধরেই কর্মস্থলের পোশাকের প্রচলিত প্রবণতায় আমূল পরিবর্তন আসছিল। কর্মক্ষেত্রে আঁটোসাঁটো পোশাকের থেকে অধিকতর ক্যাজুয়াল ট্রেন্ডের দিকে ঝুঁকছিলেন তার গ্রাহকরা। তবে দুঃখের বিষয় হলো, চলমান মহামারী ফরমাল পোশাকের কফিনে সম্ভবত শেষ পেরেকটি ঠুকে দিল। কারণ এখন তার পুরুষ গ্রাহকরা নতুন শার্ট ক্রয়ের জন্য এলেও নতুন প্যান্ট চাইছেন না। এমনকি তারা স্পোর্টস কোট, স্যুট কিংবা জুতো কিনতেও আগ্রহ প্রকাশ করছেন না। অন্যদিকে নারীরাও স্যুট পোশাকের চেয়ে নেকলেস, কানের দুল ব্রোচের মতো অলংকার খুঁজছেন। আর এমন চাহিদার মূলে রয়েছে হোম অফিস ভিডিও কল।

এদিকে বাজার গবেষণা সংস্থা এনপিডি বলছে, মহামারীকালে লোকজন এমনকি তাদের পায়জামাও পরিবর্তন করছে না। জুনে ৪৭ শতাংশ ক্রেতা জানিয়েছে, তারা বাড়িতে অবস্থানকালে প্রায় সারা দিন একই কাপড় পরে কাটিয়ে দিচ্ছেন। এক্ষেত্রে তাদের অনেকেরই পছন্দের তালিকায় রয়েছে ঢিলেঢালা স্লিপওয়্যার কিংবা লাউঞ্জওয়্যার।

তবে স্টাইলিস্ট নিকোলা হ্যারিসন বলছেন, কর্মক্ষেত্রে একটা পর্যায় পর্যন্ত ক্যাজুয়াল পোশাক গ্রহণযোগ্য হতে পারে। তাই বলে হোম অফিসের অজুহাতে কোনো প্রতিষ্ঠানের কর্মীর অতিমাত্রায় ক্যাজুয়াল হওয়া উচিত নয়। অন্তত ভিডিও মিটিং বা কনফারেন্সের সময় বিষয়ে সচেতন থাকা প্রয়োজন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন