ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও চট্টগ্রামে পশুর হাট না বসানোর পরামর্শ

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনার হটস্পট বলে বিবেচিত ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও চট্টগ্রামে পশুর হাট স্থাপন না করার পরামর্শ দিয়েছে জাতীয় কারিগরি জাতীয় পরামর্শ কমিটি। কভিড-১৯ জাতীয় কারিগরি জাতীয় পরামর্শ কমিটির আজ শুক্রবারের ১৪তম অনলাইন সভায় এটিসহ আরো আটটি প্রস্তাবনা  গ্রহণ করা হয়েছে।

কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লা ও সদস্য সচিব অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে জাতীয় পরামর্শক কমিটি কভিড-১৯ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে। কভিড-১৯ এর সংক্রমণ এখনও নিয়ন্ত্রণে আসেনি এ অবস্থায় ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় অবাধ জীবনযাত্রায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। জাতীয় পরামর্শক কমিটি ঢাকা ও তার আশেপাশের এলাকায় কঠোর নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের পরামর্শ দেয়। 

পশুর হাট বসার ক্ষেত্রে জাতীয় কারিগরি পরামর্শ কমিটির সুপারিশ করেছে, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও চট্টগ্রামে যেন পশুর হাট স্থাপন না করা হয়। এ ক্ষেত্রে ডিজিটাল পদ্ধতিতে পশু কেনাবেচার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এছাড়া অন্যান্য জায়গায় সংক্রমণ প্রতিরোধ নীতিমালা পালন সাপেক্ষে কোরবানি পশুর হাট বসানো যেতে পারে। 

কোরবানি পশুর হাট স্থাপন ও পশু জবাই এর ক্ষেত্রে বেশ কিছু নিয়মও অনুসরনের কথা জানানো হয়েছে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে। 

সেগুলো হলো-কোরবানির পশুর হাট শহরের অভ্যন্তরে স্থাপন না করা । কোরবানি পশুর হাট খোলা ময়দানে হতে হবে, যেখানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং সংক্রমণ প্রতিরোধে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব। বয়স্ক ব্যক্তি (৫০ বয়সোর্ধ্ব) এবং অসুস্থ ব্যক্তি পশুর হাটে যাওয়া থেকে বিরত থাকবেন।পশুর হাটে প্রবেশ ও বাহির এর পৃথক রাস্তা থাকতে হবে। পশুর হাটে আগমনকারি সকল ব্যক্তির মাস্ক পরিধান করা বাধ্যতামূলক।কোরবানি পশু জবাই বাড়ীতে না করে শহরের বাহিরে সিটি কর্পোরেশনের দ্বারা নির্ধারিত স্থানে করতে হবে।অনলাইনে অর্ডারের মাধ্যমে বাড়ীর বাহিরে কোরবানি দেয়া সম্ভব হলে, তা করার জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে। 

 পরামর্শক কমিটি আরো যেসব প্রস্তাবনা দিয়েছে সেগুলো হলো- কভিড-১৯ পরীক্ষার সংখ্যা ও মানোন্নয়নের জন্য কভিড-১৯ পরীক্ষাগারের সংখ্যা বাড়ানোর চেয়ে পরীক্ষাগারের সক্ষমতা বাড়ানো প্রয়োজন।  বিভিন্ন পর্যায় থেকে দক্ষ জনশক্তিকে কভিড-১৯ পরীক্ষাগারে নিয়োগ দেয়ার জন্য সুপারিশ করা হয়। পরবর্তিতে  কোন স্থানে কভিড-১৯ পরীক্ষার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হলে সেসব স্থানকে ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে শনাক্ত করে সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা করার পরামর্শ দেয়া হয়। 

কভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য নমুনা দেয়া থেকে পরীক্ষার ফলাফল পাওয়া পর্যন্ত সময় কমানো প্রয়োজন। কভিড-১৯ পরীক্ষার তথ্য দেরিতে পৌঁছালে আইসোলেশন ও নিয়ন্ত্রণ সম্ভবপর হয় না। এ ক্ষেত্রে পরীক্ষার ফলাফল দ্রুত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে পাঠানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। 

এন্টিজেন বেজড কভিড-১৯ পরীক্ষার অনুমতির জন্য ঔষধ প্রশাসনকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে, যাতে করে অতিসত্ত্বর কভিড-১৯ পরীক্ষার সুযোগ প্রান্তিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যায়। অ্যান্টিবডি শনাক্তকরল পরীক্ষার ক্ষেত্রে জাতীয় কারিগরি পরামর্শ কমিটির সিদ্ধান্তে বহাল থাকার পরামর্শ দেয়া হয় । তবে পরামর্শক কমিটি বেসরকারিভাবে এই কার্যক্রম না করার পক্ষে মতামত দিয়েছে। 

এছাড়া আরটি-পিসিআর টেস্টিং কিট এক প্রতিষ্ঠান থেকে সরবরাহের পরিবর্তে কতিপয় প্রতিষ্ঠান থেকে সরবরাহের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন যাতে করে টেস্টিং কিটের সংকট সৃষ্টি না হয়। এছাড়াও একই ধরনের টেস্টিং কিটের পরিবর্তে অধিকতর উন্নত এবং সুলভ মূল্যের টেস্টিং কিট জোগাড় এর ব্যবস্থা নেয়ার কথাও বলা হয়েছে।

কমিটির অন্য আরেকটি প্রস্তাবনা হলো- বিভিন্ন হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত ও করোনা আক্রান্ত নন এমন প্রসূতি মায়েদের চিকিৎসার জন্য আলাদা ইউনিট গঠন বিষয়ে আলোচনা হয় ও অতিসত্ত্বর উক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পরামর্শ দেয়া হয়। এছাড়াও করোনা আক্রান্ত প্রসূতি মায়েদের সেবার জন্য পিপিই সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়।

প্রবীণরা করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন বেশি এবং বিভিন্ন কারণে তারা কভিড পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহের স্থানে যেতে সক্ষম হচ্ছেন না, যার ফলে প্রবীণদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় তাদের সহজভাবে অথবা বিশেষভাবে করোনা  পরীক্ষার, সম্ভব হলে বাড়ী থেকে নমুনা সংগ্রহের ব্যবস্থা করার জন্য আহ্বান জানানো হয়।

জাতীয় পরামর্শ কমিটির সদস্যসহ অনেকেই হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা বিভিন্ন হাসপাতালে প্রদান করেছেন। ব্যক্তি উদ্যোগে ৫০ টি হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা বিভিন্ন হাসপাতালে ইতিমধ্যে দেয়া হয়েছে এবং আরও ১০০টি স্থাপন করা হবে। জাতীয় পরামর্শক কমিটি তাদের সকলকে সাধুবাদ জানান। সরকারিভাবে হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা ক্রয় প্রক্রিয়াধীন, এমতাবস্থায় জাতীয় কারিগরি জাতীয় পরামর্শ কমিটির পক্ষ থেকে পরামর্শ থাকবে যেন উক্ত ক্রয় প্রক্রিয়ায় সঠিক মাননিয়ন্ত্রন ও সঠিক মূল্যে ক্রয় নিশ্চিত করা হয়।

করোনা আক্রান্তদের হয়রানি কমিয়ে হাসপাতালে ভর্তি ও চিকিৎসা সেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে খালি শয্যার তথ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রতিদিন দেয়া এবং নির্দিষ্ট হাসপাতালের সামনে ডিসপ্লে করার পরামর্শ দেয়া হয়। এছাড়াও আন্ত:হাসপাতাল নেটওয়ার্কিং এ একটি হাসপাতাল অপর হাসপাতালের খালি শয্যার তথ্য পাওয়ার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন যাতে করে রোগীদের সঠিক হাসপাতালে পাঠাতে পারে। 

বাংলাদেশে করোনার ভ্যাকসিন প্রস্তুতের বিষয়টিকে জাতীয় কারিগরি পরামর্শ কমিটি স্বাগত জানায়, তবে করোনার ভ্যাকসিন প্রস্তুতের ক্ষেত্রে কমিটির পরামর্শ থাকবে যে, ভ্যাকসিন প্রস্তুত অথবা আবিষ্কার অবশ্যই সরকার, বিএমআরসি ও ঔষধ প্রশাসনের অনুমোদনক্রমে এবং ভ্যাকসিন প্রস্তুতিতে আন্তর্জাতিক নীতিমালা অনুসরণ করে করতে হবে।

কমিটির আরেকটি প্রস্তাবনা হলো-করোনা সংক্রমণ বিস্তার প্রতিরোধে ঈদের ছুটির সময় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও চট্টগ্রাম থেকে অন্যান্য স্থানে যাতায়াত বন্ধ রাখা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন