দেশে চাকরিজীবী নারীদের আয়ে তাদের নিয়ন্ত্রণ নেই: সায়েমা ওয়াজেদ পুতুল

বণিক বার্তা অনলাইন

বাংলাদেশের নারীরা চাকরির চেয়ে শিক্ষাকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। কিন্তু যে সব নারী চাকরি করছেন তাদের আয়ে নিজেদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই বলে মন্তব্য করেছেন অটিজম এবং মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালকের উপদেষ্টা সায়েমা ওয়াজেদ পুতুল। তিনি ইন্টার প্রেস সার্ভিস (ইপিএস) নিউজ এজেন্সিতে লেখা এক কলামে এমন মন্তব্য করেছেন।

ইতালিভিত্তিক নিউজ এজেন্সি ইপিএস নারীদের ওপর করোনার প্রভাব নিয়ে লেখার প্রস্তাবে কলামটি লিখেছেন বলে লেখায় উল্লেখ করেন সায়েমা ওয়াজেদ। তিনি লিখেন, ‘নারীদের অধিকার, নারীবাদ এবং লিঙ্গ সংক্রান্ত ইস্যু বাংলাদেশসহ বিশ্বের অধিকাংশ দেশে জটিল এবং চলমান একটি বিষয়। আমাকে নারীদের ওপর করোনার প্রভাব নিয়ে লিখতে বলা হলো। কিন্তু আমি নারীদের সাধারণ পরিস্থিতি নিয়ে লেখার বিষয়ে আকৃষ্ট হই, যা এমনিতেই নারীদের ওপর করোনার প্রভাবকে বুঝিয়ে দেবে।’

তিনি বলেন, ‘আমি একজন নারী হিসেবে বহু সংস্কৃতির অংশ হওয়ার সুযোগ পেয়েছি, কিন্তু মনে প্রাণে আমি বাঙালি। এই বৈশ্বিক করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে শুধু পদমর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকাই নয়, বরং আমি এই সমস্যার সমাধান খোঁজার চেষ্টা করে যাচ্ছি।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেভাবে চাইতেন, নারীরা বাংলাদেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং আইনের সর্বক্ষেত্রে সমান অধিকার পাচ্ছে কি না- এমন প্রশ্ন রেখে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শক প্যানেলের সদস্য পুতুল বলেন, ‘দেড় দশক আগের কথা। স্নাতক থিসিসের জন্য বাংলাদেশের নারীদের মনস্তাত্ত্বিক সুস্থতা নিয়ে আমার গবেষণায় দেখতে পাই যে, নারীরা চাকরির চেয়ে শিক্ষাকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। কিন্তু যে সব নারীরা চাকরি করছেন তাদের নিজেদের আয়ে কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। এ ছাড়াও নারীদের পর্দার নামে বৃহত্তর সামাজিক স্বাধীনতা থেকে দূরে রাখা হতো। কোনো কাজ করার জন্য নারীদের অনেকের অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন হতো।’

দেশের তৈরি পোশাক খাতকে বাংলাদেশের ‘নারীদের জীবন ধারার পরিবর্তনের স্তম্ভ’ উল্লেখ করে সায়েমা ওয়াজেদ বলেন, ‘১৯৮০ সালে তৈরি পোশাক খাতে ব্যাপক চাহিদা থাকায় বাংলাদেশে শুরু হয় তৈরি পোশাক শিল্পের কারখানা। কম পারিশ্রমিক এবং যে কোনো পরিস্থিতিতে কাজ করাতে পারায় এখানে অনেক পোশাক তৈরির কারখানা গড়ে ওঠে। যদিও এ সব নিয়ে মানবাধিকার কর্মীরা অনেক প্রশ্নই তুলেছেন। তবে এ সব কারখানায় কাজ করে যে সব দরিদ্র পরিবারের নারীদেরকে বোঝা হিসেবে দেখা হতো তারা অর্থনৈতিক মুক্তির একটি সুযোগ পায়। এতে পরিবারেও তাদের মর্যাদা বাড়ে। বাংলাদেশে কম শিক্ষিত নারীদের আরেকটি কাজের ক্ষেত্র হলো গৃহকর্মীর কাজ। গার্মেন্টসে কাজ করার পাশাপাশি নারীরা যুগপৎভাবে ক্ষুদ্র-কুটির শিল্পের মাধ্যমে নিজেদের আয় বাড়াতে থাকে।’

অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশের ‘নাটকীয় উন্নতিতে’ নারীদের ভূমিকা অনস্বীকার্য বলে উল্লেখ করেন সায়েমা ওয়াজেদ। তিনি বলেন, ‘তবুও প্রশ্ন ওঠে যে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ, শিক্ষার সুযোগ এবং চাকরিতে নারীদের কী তাদের ভূমিকা অনুযায়ী সুযোগ দেয়া হয়?’

সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশেও নারী, পুরুষ এবং তৃতীয় লিঙ্গের মধ্যে সামাজিক বৈষম্য রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেনম ‘এটি একেক দেশে একেক রকম। আর এ জন্যই একটি উপায় বের করে এর সকল সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়। করোনা মহামারী পরিস্থিতিতে আমরা সকলেই বেঁচে থাকার জন্য চেষ্টা করছি। এখন এটি স্পষ্ট যে কোনো কিছুই যেমন সহজ মনে হয় তেমনটি নয়।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন